টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে সাত মাস ধরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ
প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরে মিয়ানমারের সঙ্গে দীর্ঘ সাত মাস ধরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছে বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী, শ্রমিক, কর্মচারী। ফলে সরকার প্রতি মাসে প্রায় ৪০-৫০ কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। বেকার হয়ে পড়েছেন শত শত শ্রমিক ও ব্যবসায়ী। জানা যায়, পাশ্ববর্তীদেশ মিয়ানমার জান্তা বাহিনীর সঙ্গে দেশটির বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘাতের কারণে মিয়ানমারের সঙ্গে টেকনাফ স্থলবন্দরের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সে-দেশ থেকে পণ্য আমদানির সময় নাফনদীতে আরাকান আর্মির সদস্যরা পণ্যবাহী জাহাজগুলো আটকানোসহ বাধা সৃষ্টি করে। এ কারণে উভয় দেশের মধ্যে পণ্য আমদানি-রপ্তানি ধীরে ধীরে বন্ধ যায়। সব মিলিয়ে দীর্ঘ ৭ মাস ধরে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ। মিয়ানমারের রাখাইন সীমান্ত আরাকান আর্মির দখলে যাওয়ার পর থেকে এ সমস্যা সৃষ্টি হয়। ব্যবসায়ীরা জানান, টেকনাফ স্থলবন্দর বন্ধ থাকায় শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ব্যবসা-বাণিজ্য ও শ্রমিকদের জীবিকার স্বার্থে, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে অবিলম্বে টেকনাফ স্থলবন্দরের পণ্য আমদানি-রপ্তানি পুনরায় সচল করা জরুরি হয়ে পড়েছে। টেকনাফ স্থলবন্দরের শ্রমিক নেতা আজগর মাঝি জানান, টেকনাফ স্থল বন্দরে শ্রমিক হিসেবে দীর্ঘ এক যোগ ধরে কাজ করেছি। সেখান থেকে উপার্জিত টাকায় ছেলে-মেয়ের পড়াশোনাসহ পরিবারের খরচ জোগাড় হতো। এখন টেকনাফ বন্দরে ৭ মাস ধরে কোনো কাজ না থাকায় পরিবার নিয়ে কষ্টের মধ্যে দিন পার করছি। টেকনাফ বন্দরের ব্যবসায়ী সাদ্দাম হোসেন জানান, মিয়ানমারের সঙ্গে টেকনাফ স্থলবন্দরের পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় বর্তমানে আমরা বেকার। মিয়ানমারের ব্যবসায়ীদের কাছে লাখ লাখ টাকা রয়ে গেছে। বর্তমানে সরকারের কাছে আমাদের দাবি, টেকনাফ স্থলবন্দরে পুনরায় কার্যক্রম সচলের ব্যবস্থা করা হোক। আমরা বাঁচতে চাই। এব্যাপারে টেকনাফ স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের নেতা সিআইপি ফারুক বলেন, ৭ মাস ধরে টেকনাফ স্থল বন্দরের পণ্য আমাদানি-রপ্তানি বন্ধের কারণে এপারের ব্যবসায়ীরা খুব বিপাকে পড়েন। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। কিন্তু এখনও পণ্য আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চালু হয়নি। আরাকান আর্মির বাধার কারণে উভয় দেশের মধ্যে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে সম্যসা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, টেকনাফ স্থল বন্দর কেন্দ্রীক অনেক ব্যবসায়ী চট্টগ্রাম বন্দর মুখি হয়ে পড়েছে। কারণ যারা বৈধ ব্যবসায়ীরা কি কাজ করে সংসার চালাবে। টেকনাফ স্থলবন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা সোহেল আহমেদ জানান, মিয়ানমারের সঙ্গে টেকনাফ স্থল বন্দরের পণ্য আমদানি-রপ্তানি ৭ মাস ধরে বন্ধের কারণে সরকার প্রতি মাসে ৪০-৫০ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এখন টেকনাফ বন্দর থেকে রাজস্বখাতে সরকার এক টাকাও পাচ্ছে না। এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন জানান, টেকনাফ স্থলবন্দরের কার্যক্রম আমাদের পক্ষ থেকে বন্ধ নেই। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে টেকনাফ স্থলবন্দরের সঙ্গে মিয়ানমার থেকে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ। তবে এ বিষয়ে উচ্চপর্যায়ে জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, টেকনাফ স্থল বন্দর পুনরায় কার্যক্রম সচল করতে গত ৭ অক্টোবর মঙ্গলবার টেকনাফ স্থলবন্দর সংলগ্ন হাইওয়ে সড়কে স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও স্থানীয়রা মানববন্ধন এবং আন্দোলন করেছিল।
