চুয়াডাঙ্গায় এক দশকে কৃষিজমি কমেছে ৫ হাজার হেক্টর
প্রকাশ : ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
শরীফ উদ্দীন, চুয়াডাঙ্গা

চুয়াডাঙ্গায় জেলায় কমতে শুরু করেছে মাঠ ফসলের জমির পরিমাণ। গত এক দশকে ৫ হাজার হেক্টর কৃষিজমির পরিমাণ কমেছে। এসব কৃষিজমি পরিমাণের প্রধান কারণ দখল হয়ে স্থাপনা গড়া। জেলার অধিকাংশে মাঠ ফসল জমির ওপর গড়ে উঠেছে কংক্রিটের বিভিন্ন দালান ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কলকারখানা।
তবে কৃষকদের অভিযোগ কৃষিজমির রেজিস্ট্রার খরচ ও দাম কম হওয়ায় একদল কুমহল কৃষিজমি গ্রাস করছে। ফলে কৃষকদের উৎপাদিত ফসল যেমন কমছে, ঠিক তেমনি কৃষি প্রকৃতি ও জলবায়ুর ওপর বিরুপ প্রভাব পড়ছে। সরেজমিন জেলার বিভিন্ন কৃষি মাঠ ফসল ঘুরে দেখা গেছে, চুয়াডাঙ্গা শহরের দৌলতদিয়ার-আলুকদিয়া সড়কের পাশে চোখজুড়ানো মতো দৃশ্য মাঠ ফসলের। কিন্ত এই দৃশ্য এখন বড়ই অচেনা। এখন আর দেখা যায় না অবিরাম মাঠ ফসলের ধানক্ষেত। এই এলাকার অর্ধেক অংশে মাঠ ফসল দখল হয়েছে। এই ফসলি জমির ওপর এখন গড়ে উঠেছে বিভিন্ন কংক্রেটের বড় বড় দালান। এছাড়া গড়ে উঠতে দেখা গেছে বড় বড় ব্যবসা প্রকিষ্ঠান ও কলকারখানাসহ বিভিন্ন স্থাপনা। সেই সাথে বাড়ছে দিনকে দিন মাঠ ফসলির ওপর ইটভাটা নির্মাণ। এতে যেমন ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। ঠিক তেমনি ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। ফলে কৃষকরা হারাচ্ছে তাদের কৃষি ফসলের যৌবন।
এই জেলার বিভিন্ন মাঠ ফসলের জমি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। বিক্রিত জমিগুলার খরচ ও রেজিস্ট্রার খরচও কম। তাই এক প্রকারের কুমহলের লোকজন এই কৃষিজমিগুলো গ্রাস করে নিচ্ছে। একদিকে যেমন কৃষি ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। অপরদিকে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে কৃষি প্রকৃতি ও জলবায়ুতে। এই জেলার সব এলাকায় এখন কৃষিজমি কমে যাচ্ছে। এতে করে কৃষি ফসল হুমকির মুখে পড়তে শুরু হয়েছে। জেলার কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এই জেলায় বছরে তিন থেকে চার ফসলি আবাদি ফসল ফলায় কৃষক। যার অর্থনৈতিক চাহিদার অর্ধেক আসে মাঠ ফসল থেকে।
২০১৫-১৬ অর্থবছরে কৃষি জমির পরিমাণ ছিল ৯৯ হাজার ৪৮১ হেক্টর জমি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কৃষি জমির পরিমাণ ছিল ৯৮ হাজার ৭৪০ হেক্টর জমি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কৃষি জমির পরিমাণ ছিল ৯৮ হাজার ৪০০ হেক্টর জমি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কৃষি জমির পরিমাণ ছিল ৯৮ হাজার ২৭৪ হেক্টর জমি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে কৃষি জমির পরিমাণ ছিল ৯৭ হাজার ৫৭৩ হেক্টর জমি। ২০২০-২১ অর্থবছরে কৃষি জমির পরিমাণ ছিল ৯৭ হাজার ৭৯ হেক্টর জমি। ২০২১-২২ অর্থবছরে কৃষি জমির পরিমাণ ছিল ৯৬ হাজার ৩৫৩ হেক্টর জমি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষি জমির পরিমাণ ছিল ৯৫ হাজার ৬৩৯ হেক্টর জমি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কৃষি জমির পরিমাণ ছিল ৯৪ হাজার ৯২৭ হেক্টর জমি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কৃষি জমির পরিমাণ ছিল ৯৮ হাজার ২২০ হেক্টর জমি। যা এই জেলার মাঠ ফসলের জমির পরিমাণ কমেছে ০ দশমিক সাত দুই শতাংশ। গেল এক দশকে ৫ হাজার হেক্টর কৃষি জমির পরিমাণ কমেছে। এখন চলছে খরিপ-২ মৌসুম। এই চলতি মৌসুমে মাঠে চাষাবাদ হচ্ছে আমন ধান, বিভিন্ন সবজি, মাসকলাই, তুলা ও গ্রীস্মকালীন পেঁয়াজ।
চুয়াডাঙ্গা সদর আলুকদিয়া গ্রামের কৃষক কুদ্দুস মিয়া বলেন, এই আলুকদিয়া ও দৌলতদিয়ারের বিভিন্ন মাঠজুড়ে ফসল থাকতো। কিন্তু এখন বিভিন্ন মাঠজুড়ে উঠে পড়েছে ঘড়বাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এতে কৃষি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। মাঠে কৃষি ফসল ফলানো যাচ্ছে না। ফলে চাষাবাদ কমে যাচ্ছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে কৃষিজমি হুমকির মুখে পড়বে। আরেক কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, এখন কৃষি জমির পরিমাণের দাম কম। আবার রেজিস্ট্রার খরচও কম। আর তাই কৃষি জমির ওপর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কলকারখানাসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে দিনকে দিন মাঠ ফসলির ওপর ইটভাটা নির্মাণ। এতে যেমন ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। ঠিক তেমনি ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। মাঠ ফসলের জমির বিক্রি করাছে একশ্রেণির কুমহলের লোকজন। তাই দাবি করে জানাচ্ছি, কৃষি জমির পরিমাণ বাড়াতে হবে। সেইসঙ্গে বিক্রি বন্ধ করতে হবে কৃষি জমির।
এবিষয়ে কথা হলে চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, কৃষি জমির পরিমাণ কমে গেলে তো খাদ্য ঘাটতি পড়ে যাবে। সেই সাথে কৃষি ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। আমরা দেখছি যে জেলার অধিকাংশে মাঠ ফসল জমির ওপর গড়ে উঠতে শুরু করেছে কংক্রিটের বিভিন্ন দালান ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কলকারখানা। এর তবে এব্যপারে কৃষি বিভাগ কাজ করছে। যাতে করে আর যেন কৃষি জমির পরিমাণ না কমে। কৃষকদের সচেতন করা হচ্ছে কৃষি জমি রক্ষা করার জন্য।
