দাগনভূঞায় কমেছে পানের আবাদ
প্রকাশ : ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
শাহজালাল ভূঞা, ফেনী

পান চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও কৃষি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতার অভাবসহ নানা সংকটে দিন দিন ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলায় কমছে পান চাষের পরিমাণ। একদিকে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা সরকারি-বেসরকারি কোনো সহায়তা না পাওয়ায় হতাশ হয়ে এ সম্ভাবনাময় খাত থেকে আগ্রহ হারাচ্ছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় উৎসবসহ বিয়েশাদিতে পান-সুপারির কদর আদিকাল থেকে। পানের জাতের মধ্যে বাংলা পান অন্যতম।
উপজেলার জায়লস্কর ইউনিয়নের লালপুর ও পূর্ব হীরাপুরের বেশ কয়েকটি পরিবার বহুকাল ধরে পান চাষে সম্পৃক্ত রয়েছে। স্বাধীনতার আগ থেকে বেশ কিছু পান চাষি স্থানীয়ভাবে পান চাষ করে ব্যাপক সাফল্য লাভ করেন। পরে বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষের মাঝে পান চাষে আগ্রহ সৃষ্টি হয়। এ পান স্থানীয়দের কাছেও বেশ জনপ্রিয়। বর্তমানে কীটনাশকের দাম ও মজুরি বৃদ্ধি এবং চাষিরা কৃষি বিভাগের পরামর্শ বা কোনো সহায়তা না পেয়ে পান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। আগে স্থানীয় বাজারগুলোতে চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যেত এ পান। একসময় উপজেলার জায়লস্কর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে পানের বরজ থাকলেও এখন তা অনেকটা কমে এসেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার স্থানীয় বাজারগুলোতে খুচরা ও পাইকারিতে এসব পান বিক্রি করেন চাষিরা। বড় আকারের এক বিড়া (৬৪টি) পান ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা, ছোট পানের প্রতি বিড়া ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করছেন। অথচ পান চাষের প্রয়োজনীয় উপকরণ খৈল কেজিপ্রতি ৬৫ টাকা ও বরজ তৈরির ১০০টি বাঁশ ক্রয়ে ব্যয় হচ্ছে ৬-৭ হাজার টাকা। পূর্বপুরুষের পেশা হিসেবে এখনও যারা পানের বরজ নিয়ে আছেন তাদের মধ্যে কয়েকজন পান চাষি জানান, পান চাষের জন্য সরকারি কোনো সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে না। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে যে কোনো ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হলে সরকার তাদের সহায়তা করে কিন্তু পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হলে চাষিদের পাশে কেউ দাঁড়ায় না। জায়লস্কর ইউনিয়নের পূর্ব হীরাপুর গ্রামের প্রবীণ পান চাষি গিরিন্দ্র কুমার ভৌমিক জানান, প্রায় শত বছর আগে তার বাবা রাজ কুমার ভৌমিক এ পানের বরজ শুরু করেন। তার বাবার রেখে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী এ পানের বরজের স্মৃতি ধরে রেখে ৫০ শতক জমিতে পান চাষ করছেন।
বরজের নানা সমস্যা নিয়ে তিনি বলেন, পানের বরজ তৈরি করে এর লতা লাগিয়ে ভালো ফলন পেলেও সার-কীটনাশক ব্যবহারে রোগবালাই ঠেকানো যাচ্ছে না। এসব সমস্যা দেখা দিলে নিজেদের অভিজ্ঞতা কিংবা ওষুধ বিক্রেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। পান চাষের প্রয়োজনীয় উপকরণ নেই সরকারি সহায়তা। একদিকে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা সরকারি-বেসরকারি কোনো সহায়তা না পাওয়ায় হতাশ হয়ে এ সম্ভাবনাময় খাত থেকে আগ্রহ হারাচ্ছেন। সার, খৈল, বরজ তৈরির বাঁশ ও কীটনাশকের দাম বৃদ্ধি এবং শ্রমিকদের মজুরি বাড়লেও সেই তুলনায় পানের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে না। এতে চাষিরা এখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
স্থানীয় লালপুরের পান চাষি মিলন দত্ত, সত্যিবান দে ও ননী দত্ত বলেন, সরকার কৃষকদের জন্য সারা দেশে বিনামূল্যে সার, বীজ ও কীটনাশক দিলেও পান চাষিদের কপালে কখনও কিছুই জোটেনি। কৃষি উন্নয়নে নিয়োজিত কর্মকর্তারা যদি পান চাষে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দিয়ে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য উৎসাহিত করতেন তাহলে চাষিরা আগ্রহ হারাতেন না। তখন আমাদের জন্যও এ শিল্প টিকিয়ে রাখা সহজ হতো।
দাগনভূঞা উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আমির উদ্দিন জানান, পান চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। উপজেলা উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা লুৎফুল হায়দার ভূঁইয়া বলেন, পান চাষ সাধারণত তিনটি রোগ ও চারটি পোকা দ্বারা বেশি আক্রান্ত হয়। সঠিক রোগ বা পোকা নির্ধারণ, সঠিক বালাইনাশক, সময় ও পরিমাণ যদি ঠিক রাখা যায়, তবেই কৃষক তার ফসলকে রোগ ও পোকার হাত থেকে রক্ষা করতে পারবেন। আর এসব কিছু জানতে প্রতিনিয়ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া একজন কৃষকের দায়িত্ব। এ প্রসঙ্গে দাগনভূঞা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, পান একটি অর্থকারী ফসল। আগামীতে পান চাষিদেরও প্রণোদনার আওতায় আনা হবে এবং পান চাষে উদ্বুদ্ধ করণে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
