কিস্তি ও দাদনের চাপে দিশাহারা পাথরঘাটার জেলেরা
প্রকাশ : ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি

ইলিশ প্রজনন রক্ষায় চলমান ২২ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞায় বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার হাজার হাজার জেলে এখন দিশাহারা। ভরা মৌসুমেও ইলিশ না পেয়ে হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন এসব জেলে। নদীতে জাল ফেলার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় ট্রলার বেঁধে তীরে বসে থাকতে হচ্ছে তাদের। কিন্তু এরইমধ্যে কিস্তির টাকা আর দাদনের চাপে নাভিশ্বাস ভয়ে উঠেছে এই মৎস্যনির্ভর মানুষগুলোর। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত নদ-নদীতে সব ধরনের ইলিশ ধরা, পরিবহন, মজুদ ও বিক্রি বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু এই সময়টাতেই জীবিকার সংকটে পড়েছে পাথরঘাটার জেলেরা।
স্থানীয় জেলে মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ট্রলার আর জাল সব বন্ধ। ঘরে বসে আছি। বাজারে চাল-ডাল নিতে গেলেও দোকানদার বাকি দিচ্ছে না। দাদনের টাকা দিতে না পারলে নিষেধাজ্ঞা শেষে ট্রলার নিয়ে সাগরে নামতে পাড়াই অসম্ভব হয়ে পড়বে। সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার বাদুরতলা, পদ্মা, চরলাঠি মারা, চরদুয়ানী, কাকচিড়া ও পাথরঘাটা নতুন বাজার খালে শত শত ট্রলার অলস বাঁধা আছে। কেউ কেউ জাল দড়ি মেশিনপত্র মেরামত করছেন। অন্যদিকে, মৎস্য ব্যবসায়ীদের দেওয়া দাদন এখন জেলেদের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই মৌসুমের শুরুতে দাদন নিয়ে নৌকা, ট্রলার-জাল প্রস্তুত করেছিল, এখন আয় বন্ধ থাকায় সেই টাকা শোধ করতে পড়েছেন চরম সমস্যায়।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, নিষেধাজ্ঞা মেনে চলা জরুরি, কিন্তু জেলেদের জন্য পর্যাপ্ত সহায়তা না থাকায় তারা বিপাকে পড়েছে। অনেকে এরইমধ্যে এনজিও বা দাদনদাতাদের কিস্তি দিতে না পারায় হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
জেলে আব্দুল জলিল বলেন, ইলিশের ভরা মৌসুমে সাগরে ইলিশ খুব কম পড়ায় যেটুকু পেয়েছিলাম সেটা বিক্রি করে সংসার চলছে এখন ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় ঘরে বসে আছি কিন্তু বাজারের দাম যেভাবে বেড়েছে তাতে ২৫ কেজি চাল দিয়ে কোনোভাবেই চলা সম্ভব না। বরগুনা জেলা ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আব্দুল মান্নান মাঝি বলেন, প্রতিবার নিষেধাজ্ঞার সময় চাল দেওয়া হয় কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। আমরা চাই নগদ সহায়তাও দেওয়া হোক। যাতে বাজারের খরচ কিছুটা হলেও সমাধান করা যায়। পাথরঘাটা উপজেলায় নিবন্ধিত জেলেদের সংখ্যা ১৬ হাজার ৮২০ জন। নিবন্ধিত প্রতিজন জেলে পাবেন ২৫ কেজি করে চাল । তবে অনেকেই অভিযোগ করছেন, তালিকাভুক্ত না থাকায় তারা সেই সহায়তা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। অন্যদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করে বলেন, বেশি সংখ্যক জেলে নিষেধাজ্ঞা মানলেও কিছু অসাধু জেলে রাতের অন্ধকারে গোপনে নদীতে জাল ফেলে মাছ শিকার করছেন। এতে নিয়ম মেনে চলা প্রকৃত জেলেরা বঞ্চিত হচ্ছেন।
এ ব্যাপারে পাথরঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো, হাসিবুল হক বলেন, কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনী এবং পুলিশ প্রশাসন সাগরে নিষেধাজ্ঞার ২২ দিনে জেলেরা কোনো প্রকার জাল ফেলতে না পারে সে ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্ক আছেন, তারপরও যদি কেউ সরকারের এই আদেশ অমান্য করে, তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। কোনো অবস্থাতেই কাউকে এ ব্যাপারে ছাড় দেওয়া হবে না।
