আমন ধানখেতে মাজরা ও লেদা পোকার আক্রমণ
প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) প্রতিনিধি

চলতি মৌসুমে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে আমন ধানখেতে মাজরা ও লেদা পোকার আক্রমণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। একইসঙ্গে প্রতি রাতে ইঁদুরও ধান গাছ কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে। পোকা দমনে কৃষকরা বিভিন্ন ধরনের কিটনাশন স্প্রে এবং ইঁদুর দমনে বিষ বা নানা পদ্ধতি ব্যবহার করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। ফলে আমন চাষে লোকসানের আশঙ্কায় এলাকার হাজারো কৃষক হতাশ হয়ে পড়েছেন। সরেজমিন উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নেও ১টি পৌরসভায় গত বছরের মত এবারও মোট ৯৯,২৬০ হেক্টর জমিতে আমনের চাষ হয়েছে। এরমধ্যে উপসি ৯৭,৮৮৫ হেক্টর, স্থানীয় জাত ৯৯০ হেক্টর ও হাইব্রিড ৩৮৫ হেক্টর।
বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় সব এলাকায় ব্যাপকভাবে মাজরা ও লেদা পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি ইঁদুরের উৎপাতও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দিনের বেলায় ইঁদুরগুলো গাছে বা মাটির গর্তে লুকিয়ে থাকে। আর রাতে ইঁদুরে ধান গাছ কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে। ফলে ধান গাছ শুকিয়ে লাল হয়ে মারা যাচ্ছে। অতি বৃষ্টির কারণে ধানখেতে পোকার উপদ্রব বেড়েছে বলে কৃষকরা মনে করেন। পোকার আক্রমণ থেকে ধানখেত রক্ষায় কৃষকরা বারবার বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক স্প্রে করছেন। আবার ইঁদুর দমনে বিষ বা নানা পদ্ধতি ব্যবহার করেও ইঁদুরের উৎপাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না। ফলে আমন চাষে লোকসানের আশঙ্কায় এলাকার হাজারো কৃষক হতাশ হয়ে পড়েছেন। আর আমন উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রাও অর্জিত না হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। উপজেলার আবু বকর বলেন, এবছর তিনি ৩০ বিঘা জমিতে আমনের চাষ করেছেন। কিন্তু প্রায় ২ বিঘার মতো জমির ধান গাছ ইঁদুরে কেটে সাবাড় করে দিয়েছে। ধান গাছে ফলন আসার মুহূর্তে মজরা ও লেদা পোকার আক্রমণ ও ইঁদুরের উৎপাত বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক স্প্রে করে পোকা থেকে ফসল রক্ষার চেষ্টা করছেন।
তিনি বলেন মাজরা পোকার থেকেও বেশি ক্ষতি করছে ইঁদুরে। ইঁদুর দমনে বিভিন্ন ধরনের বিষ ব্যবহার করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। ফলে লোকসানের আশঙ্কায় তিনি হতাশ হয়ে পড়েছেন। মোরেলগঞ্জে উমাজুরি গ্রামের সফল চাষি শাহজালাল বাবু জানান, অতিবৃষ্টির কারণে আমন ফসলে মাজরা, লেদা ও পাতা মোড়ানো পোকার আক্রমণ বেড়েছে। কোনো জায়গায় আবার কারেন্ট পোকাও। বিগত বছরগুলোতে এক বার কিটনাশক স্প্রে করলেই ফসল ঘরে তোলা সম্ভব হতো। আর এ বছর তিন থেকে চারবার কিটনাশক স্প্রে করেও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না যে ফসল ঘরে উঠবে। এ বছর এমনিতেই দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ব্যাপক খরচ হয়েছে তারপর আবার পোকার আক্রমণ ও ইঁদুরের উৎপাত থেকে ফসল রক্ষায় হিমসিম খেতে হচ্ছে। এতে তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
মোরেলগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটি সভাপতি এসএম সাইফুল ইসলাম কবির বলেন, আমন ধানের মাজরা পোকার আক্রমণে গাছের ডগা মারা যায় (মরা ডিগ বা ডেডহার্ট), আর লেদা পোকার আক্রমণে গাছের পাতা ছিদ্র বা কুঁড়ে ফেলে। এই দুই ধরনের পোকা দমনে রাসায়নিক ও জৈবিক পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে জমিতে অতিরিক্ত ইউরিয়া সার প্রয়োগ থেকে বিরত থাকুন। আক্রান্ত খেতে ডালপালা পুঁতে দিন এবং খেতের চারদিকে কেরোসিন মিশ্রিত পানি দিয়ে নালা তৈরি করে পোকা আটকানোর ব্যবস্থা করুন, কৃষককে সার, বীজ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে বিভিন্ন সময় সহযোগিতা করে কৃষি বিভাগ। বিভিন্ন সিড কোম্পানি পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে সার ও বীজ দিয়ে গরিব কৃষকদের সহযোগিতা করতে হবে।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম জানান- মাজরা, লেদা ও কারেন্ট পোকাসহ বিভিন্ন পোকার আক্রমণও বেড়েছে। এ ছাড়া ইঁদুরও কিছু ধান গাছ কেটে নষ্ট করে ফেলেছে। তবে সার, ঔষুধের ডিলারদের বলা হয়েছে তারা যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে কিটনাশক রাখে এবং কৃষকদের পোকা দমনের সঠিক কিটনাশকগুলো দেয়। তা ছাড়া কৃষকদের নিয়ে গঠিত গ্রুপেও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আর আগামী সপ্তাহ থেকে পোকা ও ইঁদুর দমনে প্রত্যেক বাজারে প্রচারণামূলক অনুষ্ঠিত সভা কৃষকদের পরামর্শ ও ভিডিও চিত্র দেখানো হবে। এ ছাড়াও কৃষকদের জন্য প্রত্যেক ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে উঠান বৈঠক ও ভ্রাম্যমাণ কৃষি পরামর্শ কেন্দ্র চালু করেছি। কৃষকদের সচেতন করার চেষ্টা অব্যহত রয়েছে।
