সৌন্দর্য আর অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ উৎস নাফ নদী
* নাফ নদীর মোহনা বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদের অন্যতম উৎস। বিশেষ করে কোরাল মাছের জন্য নাফ নদী বিখ্যাত। টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্টমার্টিন মাঝখানে বঙ্গোপসাগরের মিলনস্থলের স্রোতধারায় মাছের বিচরণ বেশি
প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি টেকনাফ-কক্সবাজার সড়কের পূর্ব পাশে নাফ নদীর মোহনা। নাফ নদীর বেষ্টিত টেকনাফ শহর অর্থনৈতিক ও ঐতিহাসিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।
নাফ নদীর মোহনায় ঢেউ, বাতাস আর নৌযান চলাচলের সমন্বয়ে সৃষ্টি হয় এক অপার সৌন্দর্যের দৃশ্য। ভোরবেলা কিংবা সূর্যাস্তের সময় সেই দৃশ্য হয় আরও মনোমুগ্ধকর। সূর্যের আলো নদীর পানিতে পড়ে ঝিলমিল করে। এরমধ্যে জেলেদের জাল ফেলার দৃশ্য যেন এক জীবন্ত চিত্রকর্মের সৃষ্টি করে।
এই নাফ নদীর মোহনা বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদের অন্যতম উৎস। বিশেষ করে কোরাল মাছের জন্য নাফনদী বিখ্যাত। টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্টমার্টিন মাঝখানে বঙ্গোপসাগরের মিলনস্থলের স্রোতধারায় মাছের বিচরণ বেশি। চলতি মাস ৪ অক্টোবর থেকে সারাদেশের ন্যায় টেকনাফের নাফ নদীতেও মাছ শিকার নিষিদ্ধ রয়েছে ২২ দিন।
মিয়ানমার সীমান্ত ঘেঁষা নাফনদীর মোহনা শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কেন্দ্র নয়, বরং ইতিহাস ও সংস্কৃতিরও ধারক। একসময় এই নাফ নদীর পাশে বদরমোকাম মসজিদ ছিল বাণিজ্য ও যাতায়াতের প্রধান রুট। বঙ্গোপসাগর-নাফনদীর মিলনের পাশে শাহপরীর দ্বীপের বদরমোকাম গড়ে ওঠা অঞ্চল থেকেই দেশের অনেক অঞ্চলে পণ্য পরিবহন করা হতো। নাফ নদীর পথে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলের দৃশ্য এখনও এই এলাকার ঐতিহ্য বহন করে চলছে।
পর্যটনের দিক থেকেও এই মোহনার গুরুত্ব অপরিসীম। প্রতিদিনই শত শত মানুষ আসে টেকনাফ পৌর এলাকার উঠনি পাহাড় দিয়ে পূর্ব পাশে, মিয়ানমার বাংলাদেশ ট্রানজিট জেটি, শাহপরীর দ্বীপ করিডোর জেটি বা সীমান্ত পয়েন্টে এই নদীর মিলনদৃশ্য উপভোগ করতে। এখানকার বাতাসে থাকে নদীর স্নিগ্ধতা, আর তীরের চা দোকানগুলো ভ্রমণপিপাসু মানুষদের গল্প আর হাসিতে মুখর করে তোলে।
বিকালে সূর্য যখন পশ্চিমে ঢলে পড়ে, তখন
মোহনার জলে লাল আভা পড়ে সে দৃশ্য একবার দেখলে ভুলে থাকা যায় না। নাফনদীর মোহনার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেমন মুগ্ধ করে, তেমনি এর রক্ষণাবেক্ষণও এখন সময়ের দাবি। নদীভাঙন, দূষণ ও নাফ নদীর কেওড়া বাগান কেটে শূন্যের কারণে এই অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে। তাই প্রয়োজন যথাযথ উদ্যোগ, যাতে প্রকৃতির এই অনন্য উপহারকে সংরক্ষণ করা যায়।
সব মিলিয়ে, টেকনাফের নাফ নদীর মোহনা শুধু একটি ভৌগোলিক স্থান নয়, এটি বাংলাদেশের প্রাণ, ইতিহাস ও সৌন্দর্যের প্রতীক। নাফনদীর বুকে দাঁড়িয়ে যখন মোহনায় থেকে নদীর স্রোত এসে মিশে যায়, তখন বোঝা যায়। বাংলাদেশের প্রকৃতি কতটা উদার, প্রাণবন্ত ও কবিতার মতো সুন্দর। টেকনাফ চৌধুরী পাড়া এলাকার অবস্থিত ট্রানজিট জেটির ইজারাদার আবদুল রশিদ বলেন, মিয়ানমার-বাংলাদেশ ট্রানজিট জেটি ও নাফ নদীর মোহনায় দেখতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ঘুরতে আসে, জায়গাটি পর্যটকদের কাছে খুব আকর্ষণীয়।
পর্যটকরা মিয়ানমার সীমান্ত ঘেঁষা নাফনদীর সৌন্দর্য দৃশ্য দেখতে পেয়ে খুশিতে মেতে উঠে। টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর দ্বীপ করিডোর জেটিতে ভ্রাম্যমাণ চা, পান বিক্রেতা মো. সেলিম বলেন, এখানে প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজন ঘুরতে আসে, তাদের কাছে আমি চা, পান, ও কপি, বিস্কুটসহ অনেক রকম খাদ্য সামগ্রিক বিক্রি করি। কোম্পানির দামে বিক্রি করে আসছি।
তিনি আরও বলেন- এই জেটিতে পর্যটকরা বিনা টাকায় ঘুরতে পারেন। ঢাকা মিরপুর থেকে আসা সুজন মাহমুদ বলেন, তিনি মূলত ঢাকায় চাকরি করেন, ফ্রি হলে বন্ধু ও পরিবার নিয়ে কক্সবাজার ঘুরতে আসলে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ করিডোর জেটিতে নিয়মিত দেখতে আসেন। এখানে অনেক দৃশ্য দেখার মত নাফনদীর সৌন্দর্য উপভোগ, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের এলাকাগুলো খুব কাছ থেকে দেখা যায়।
আর টেকনাফ শহর থেকে শাহপরীর দ্বীপ সড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভালো রয়েছে। রাস্তার দুই পাশে লবণের মাঠের চাষ। টেকনাফ পৌরসভার কেকে পাড়া খালের মৎস্য সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম বলেন, এই নাফনদীর মোহনা টেকনাফের একটি ঐতিহ্য।
এখানে মিয়ানমার সীমান্ত ঘেঁষা নাফনদী ও বঙ্গোপসাগর একত্রে মিলিত হয়েছে, এর সৌন্দর্য দেখে সবাই মুগ্ধ হয়। এর স্রোতধরা বয়ে চলছে হাজার বছর ধরে। টেকনাফ মডেল থানার ওসি আবু জায়েদ নাজমুন নূর জানান, আমাদের পুলিশের টিম সেখানে টহলে থাকে। তবে বিকাল থেকে রাতে তারা বেশি সময় ধরে পেট্রোলিং করে। পর্যটকদের কোনো অভিযোগ পেলে তারা তা তাৎক্ষণিক সমাধান করে।
