টাইকো কম্পোস্ট সার উৎপাদনে স্বাবলম্বী উদ্যোক্তা

মাসিক আয় লক্ষাধিক টাকা * বাড়ছে জমির উর্বরতা

প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নুর উল্লাহ আরিফ, চরফ্যাশন (ভোলা)

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার উত্তর মাদ্রাজ গ্রামের যুবক সোলাইমান ২০০৫ সালে স্নাতক পাশ করে চাকরির পেছনে না ঘুরে মনোনিবেশ করেন কৃষি কাজে। ফসল উৎপাদনে ব্যবহার করেন রাসায়নিক সার; কিন্তু দেখেন রাসায়নিক সার মাটির উর্বরতা শক্তি কমিয়ে দেয়। অতিরিক্ত ব্যবহারে পরিবেশের ক্ষতি করে। চিন্তা করেন বিকল্প, পরিবেশবান্ধব কিছু করার।

এরইমধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের জন্য যান দেশের বাইরে। দেখেন একজন নারী উদ্যোক্তা ভার্মি কম্পোস্ট এবং টাইকো কম্পোস্ট সার নিয়ে কাজ করে। তখন টাইকো কম্পোস্ট আইডিয়াটা নতুন মনে হওয়ায় নারী উদ্যোক্তার কাছ থেকে পরামর্শ নেন সোলাইমান এবং ভার্জিনিয়ার একটি কৃষি বিষয়ক প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে এ সম্পর্কে প্রযুক্তিগত আরও জ্ঞান অর্জন করেন। পরবর্তীতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও এনজিও সংস্থা পরিবার উন্নয়ন সংস্থা (এফডিএর) আওতায় একটি উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ নিয়ে ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে নিজেই কম্পোস্ট জৈব সার তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেন। ফসল উৎপাদনে এ সারের গুণগতমান ও জমির উর্বরতাশক্তি বৃদ্ধি ও সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করেন গত বছর থেকে।

বর্তমানে তার উৎপাদিত জৈব সার দ্বীপজেলার চাহিদা মিটিয়ে ও গণ্ডি পেরিয়ে পার্শ্ববর্তী জেলাতেও যাচ্ছে। কৃষি খামার ও তরমুজ চাষিদের পক্ষ থেকে সারের জন্য আগাম অর্ডার করা হচ্ছে। তার উৎপাদিত ১৫ মেট্রিক টন জৈব সারের অগ্রিম অর্ডার রয়েছে চাষিদের পক্ষ থেকে এবং আরও কয়েকজন চাষি এ সার ব্যবহারের ব্যাপারে সোলাইমানের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করছেন।

তরমুজ চাষি জুলহাস বলেন, আমরা এ বছর থেকে তরমুজ উৎপাদনে টাইকো কম্পোস্ট সার ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ সার ব্যবহারে মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং পরিবেশবান্ধব। সোলাইমান ভাইয়ের কাছ থেকে আমাদের তরমুজ খেতে ব্যবহারের জন্য ২ মেট্টিক টন সার অগ্রিম অর্ডার করে রেখেছি। মুহাম্মদ সোলাইমান জানান, তিনি প্রতি মাসে উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে সার বিক্রি করে তিনি দেড় থাকে দুই লাখ টাকা আয় করেছেন। তিনি আশা করছেন এখান থেকে তার মাসিক আয় আরও বৃদ্ধি পাবে।

এ জৈব সার উৎপাদনের সঙ্গে চারজন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করছেন। তাদের একজন জানান, আমরা ৪ জন এখানে কাজ করে আমাদের পরিবারের ভরণ-পোষণ ভালোভাবে করতে পারছি এবং ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ স্বাভাবিকভাবে চালিয়ে যেতে পারছি।

চরফ্যাশন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নাজমুল হুদা বলেন, সোলায়মান ভাই চরফ্যাশন উপজেলার শুধু একজন আদর্শ কৃষকই নন, তিনি একজন পরিবেশ বন্ধুও বটে। তিনি বাণিজ্যিকভাবে পরিবেশ বান্ধব ট্রাইকো কম্পোস্ট সার উৎপাদন করে একদিকে যেমন নিজে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশ সুরক্ষায় অসাধারণ ভূমিকা রাখছেন। যদি চরফ্যাশন উপজেলায় তার মতো অন্য কৃষকরাও এগিয়ে আসে তাহলে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।