মেসির মতো ফুটবলার হতে চায় ক্ষুদে রাহুল
প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
তাড়াইল (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি

বাবা নার্সারির ব্যবসা, বাড়িতে দোচালা টিনের ঘর। ৭ জনের সংসারে দরিদ্র বাবাই একমাত্র উপার্জনক্ষম। নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। তাতে কি? পরিবারের সদস্য ৭ বছর বয়সের রাহুল হক সে তো মেসি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর। স্থানীয় বাজারে টিভিতে মেসির খেলা দেখে তার একটাই চাওয়া তাকে মেসি হতেই হবে। তার খেলা দেখার জন্য তার বাড়িতে ছোট-বড় বিভিন্ন বয়সের মানুষ প্রতিদিনই ভিড় জমাচ্ছে। অনেকের দাবি মেটাতে তার বাড়ির ছোট্ট উঠোনে বল নিয়ে বিভিন্ন কারু কাজের প্র্যাকটিস দেখাতে হচ্ছে।
বলা হচ্ছে, কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার জাওয়ার ইউনিয়নের বেলংকা গ্রামের আইনাল মিয়ার ৭ বছরের ছোট্ট বালক মেসিখ্যাত রাহুলের কথা। বেলংকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণিতে অধ্যায়নরত সে। স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠক রাহুলের কোচ মিজানুর রহমানের উৎসাহ-প্রেরণায় এরইমধ্যে রপ্ত করে ফেলেছে ফুটবলের নানা কৌশল। দু’হাত পেছনে দিয়ে ডান পা বাম পা, পিঠে, মাথায় হেড এভাবেই মাটিতে বল না ফেলে দীর্ঘক্ষণ বলের উপর কন্ট্রোল রাখতে পারছে সে। নিজের বয়সের চেয়ে কয়েক বছরের বড়দের সঙ্গে ছোট মাঠে অনুশীলনও করে দুর্দান্ত। সেই অনুশীলনে দেখা গেল তার বল নিয়ন্ত্রণের রাখার নানা কৌশল। বল পায়ে ড্রিবলিং, রিসিভ, বলের উপর কন্ট্রোল এবং বল পায়ে তার ক্ষীপ্রতা, সবাইকে ফাঁকি দিয়ে বল জালে পাঠানোর কৌশলসহ খেলার মাঠে বল নিয়ে তার নানা কারুকাজ সত্যিই চোখ ধা দিয়ে যাওয়ার মতো। এ প্রতিবেদক তা সরেজমিনে দেখে ও স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠক মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানলেন। স্থানীয় মেসিখ্যাত রাহুলের দরিদ্র বাবা আইনাল মিয়া জানায়, স্ত্রী, পাঁচ মেয়ে ও সাত বছরের ছেলে নিয়ে আমার ৭ সদস্যের পরিবার। তাড়াইল উপজেলা সদর বাজারে একটি নার্সারি ব্যবসা করি। খাইয়া পিন্দা বাঁচনডাই আমার লাইগা অনেক কষ্টের। পোলায় বাজারের টিভিতে মেসির খেলা দেইখা অহন তারও মেসি হওনের শখ। পোলার ফুটবল প্র্যাকটিস দেখতে প্রতিদিনই মানুষ বাড়িতে ভিড় জমায়। এইসব দেইখা অহন আমারও শখ, পোলায় যেনো বড় হইয়া একজন বড় ফুটবলার অইতে পারে। আমি গরিব মানুষ, কেমতে কি করমু জানি না। আমি গরিব মানুষ, পোলার স্বপ্ন এমতে পূরণ করমু? তয়, পোলার স্বপ্ন পূরণ করতে সরকারের সাহায্য ছাড়া সম্ভব না। সরকার যদি একটু দয়া করে, তয় আমার পোলা একদিন অবশ্যই জাতীয় দলে খেলব। একদিন উজ্জ্বল করব সবার মুখ। তাড়াইল ফুটবল একাডেমির পৃষ্ঠপোষক ও সভাপতি মিজানুর রহমান জানায়, আমাদের উপজেলার খুদে মেসি খ্যাত রাহুলের ক্রিয়াশৈলী সত্যিই চমৎকার। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে রাহুলকে দিয়ে জাতীয় পর্যায়ে ভালো কিছু করা সম্ভব। স্থানীয় ইউপি সদস্য ও প্রতিবেশী আবদুল করিম বলেন, আমাদের মেসির (রাহুল) প্র্যাকটিস বা খেলা দেখতে প্রতিদিনই তার বাড়িতে অনেক মানুষ আইসা ভিড় জমায়। আমরা প্রতিদিনই ওর প্র্যাকটিস দেখি।
এ বিষয়ে কথা হলে, উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) জিসান আলী বলেন, তৃণমূল পর্যায় থেকে খেলোয়াড়দের বাছাই করে ভালো পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এমনিতেই আমরা কাজ করি। বেলংকা গ্রামের স্থানীয় মেসি খ্যাত রাহুলের কথা আমরা শুনেছি, ওকে নিয়ে ভালো কিছু করার চিন্তা আমাদের রয়েছে।
