ঢাকা সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরি করছে গোপালগঞ্জের আরডিএ

* ১৪ বছরে প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বাবলম্বী পাঁচ লাখ * বাৎসরিক আয় সাড়ে তিন কোটি টাকা
দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরি করছে গোপালগঞ্জের আরডিএ

জীবিকার তাগিদে মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন শরীয়তপুরের গোসারহাট উপজেলার মোতাহের প্যাদার ছেলে সিরাজুল ইসলাম। সেখানে গিয়ে অন্যদের তুলনায় অর্ধেক বেতন পেয়ে কষ্ট পেতে হতো। সামান্য এই আয়ে নিজের খরচ চালাবেন নাকি দেশে পাঠাবেন-দ্বিধায় ভুগতেন তিনি। আক্ষেপ করে বলেন, কাজের অভিজ্ঞতা না থাকায় এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছিল।

এক বছর পর দেশে ফিরে আসেন সিরাজুল।

দেশে ফিরে পাশের বাড়ির প্রতিবেশীর মাধ্যমে জানতে পারেন গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় অবস্থিত পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (আরডিএ) দক্ষতা উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। দেরি না করে তিনি ইলেকট্রিক্যাল হাউস ওয়ারিং ট্রেডে ভর্তি হন। এক মাসের প্রশিক্ষণে অনেক কিছু শিখেছেন এবং আবার বিদেশ গিয়ে ভালো আয় করার স্বপ্ন দেখছেন। কোটালীপাড়ার সাততলা ভবনে গিয়ে দেখা যায়, শুধু সিরাজুলই নন, ওই উপজেলার চাপকাটি গ্রামের আসিফ, ফরিদপুরের সুদর্শন সরকার, মাদারীপুরের সবুজ বেপারী, ঝিনাইদহের আশিকসহ বিভিন্ন জেলার ৮০ জন প্রশিক্ষণার্থী ইলেকট্রিক্যাল হাউস ওয়ারিং ট্রেডে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। একই ভবনের নিচতলায় নারীদের জন্য এমব্রয়ডারি ও সেলাই প্রশিক্ষণ চলছে। ঝিনাইদহের মুসলিমা খাতুন, বাগেরহাটের সরাসরি হাজরা, দাকোপের টুম্পা বালাসহ অন্তত ১০ জন প্রশিক্ষণার্থী জানান, দুই মাসের কোর্সের এক মাস শেষ করেছেন। তারা এরইমধ্যে পোশাক তৈরি করতে পারছেন এবং ভবিষ্যতে নিজ এলাকায় টেইলার্সের দোকান খোলার পরিকল্পনা করছেন। পল্লী উন্নয়ন একাডেমির সূত্র জানায়, ৪০ একর জমির ওপর ২০১১ সালের শেষ দিকে প্রকল্পের কাজ শুরু হয় এবং ২০২০ সালের জুনে তা শেষ হয়। যদিও এর আগে ১৯৯৭ সালে বিআরডিবির একটি প্রশিক্ষণ কমপ্লেক্স হিসেবে এ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দেওয়াই এর মূল উদ্দেশ্য।

প্রকল্পের আওতায় একাডেমি প্রাঙ্গণে দুটি ১০ তলা ও দুটি ৬ তলা ভবন, ২০০ আসনের আধুনিক অডিটোরিয়াম, পুরুষ ও নারী হোস্টেল, ভিআইপি গেস্টহাউস, পরিচালক বাংলো, অফিস ভবন, প্রদর্শনী কেন্দ্র, ডাইনিং হল, মসজিদ, স্টাফ কোয়ার্টার ও ওয়ার্কশপ নির্মিত হয়েছে।

১০ তলা ভবনের ১৯টি ভেন্যুর মাধ্যমে একইসঙ্গে ২ হাজার ৫০০ জন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারেন। ৫৪০ জনের আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে।

বর্তমানে এখানে গ্রাফিক্স ডিজাইন, ফ্রিল্যান্সিং, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, আধুনিক কৃষি, মৎস্য চাষ, ইলেকট্রিক্যাল হাউস ওয়ারিং, প্লাম্বিং, মোবাইল সার্ভিসিং, সেলাই-এমব্রয়ডারি, ব্লক-বাটিকসহ ২০টি ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ২০১১-২৫ সালের জুন পর্যন্ত প্রায় ৫ লাখ মানুষকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।

পল্লী উন্নয়ন একাডেমির যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ তোজাম্মেল হক জানান, প্রতিষ্ঠানটি থেকে বছরে ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা আয় হয়। এরমধ্যে কৃষি পণ্য বিক্রি থেকে ২০ লাখ, অডিটোরিয়াম ভাড়া থেকে ৪০ লাখ এবং আবাসন হোস্টেল থেকে ৩ কোটি টাকা আসে।

তিনি আরও বলেন, এখানে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির পাশাপাশি পল্লীর দারিদ্র্য জনগোষ্ঠীর আয় বৃদ্ধির জন্য এ পর্যন্ত ৩৬টি সামাজিক ও প্রায়োগিক গবেষণা সম্পন্ন হয়েছে। মাছ চাষ, ভাসমান ধাপে সবজি চাষ, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ ও বার্লি চাষ, সমুদ্র উপকূলীয় মহিষ পালনসহ বিভিন্ন উদ্ভাবনী গবেষণা এরইমধ্যে সাফল্য পেয়েছে। বর্তমানে অনুমোদিত ১০০টি পদের মধ্যে ৬৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত আছেন। শূন্য পদে নিয়োগ পেলে একাডেমির কার্যক্রম ও আয় আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত