
যখন চারদিকে পরিবেশের প্রতি মানবজাতি প্রতিকূল আচরণ করছে, সেখানে ভিন্ন একটি গল্প শুনতে কার না ভালো লাগবে। ব্যক্তি উদ্যোগে ভিন্ন এক দৃষ্টান্ত দাঁড় করিয়েছেন মাহফুজ রাসেল নামে এক যুবক। খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার অর্জুন টিলা এলাকায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে ২৩ একর পাহাড়ি টিলা ও বনভূমিতে গড়ে তুলেছেন পিটাছড়া বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কর্মসূচি। ২০১৭ সালের শেষ দিকে শুরু হওয়া উদ্যোগ এরই মধ্যে আলোর মুখ দেখছে।
বেসরকারি চাকরি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাজের সুবাধে মাহফুজ ঘোরে বেড়িয়েছেন পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল। অ্যামাজন বনেও থাকার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। সবমিলিয়ে ভালো চললেও ব্যক্তিগত কারণে ২০১৬ সালে ভিনদেশের যাত্রা শেষে ফিরে আসেন মাতৃভূমিতে। তবে ইট পাথর ও যান্ত্রিক জীবনে খাপ খেতে না পেরে প্রকৃতির সান্নিধ্য খুঁজতে থাকেন। যা থেকে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে এসে শুরু করেন এ উদ্যোগ। ন্যাড়া পাহাড়ে প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম ভাবে বনায়ন করা শুরু করেন। ধীরে ধীরে প্রাণ ও প্রকৃতি স্বাভাবিক হতে দেখে ভূমির পরিমাণ বাড়ান। মৃতপ্রায় ছড়া ও ঝিরিতে ফিরেছে জীববৈচিক। সাপ, মুখপোঁড়া হনুমান, লজ্জাবতী বানরসহ অসংখ্য পাখি ও প্রাণী নীড় খুঁজে পেয়েছে এ পিটাছড়া বনে।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য বন গবেষণার মাঠ বিদ্যালয় বললে ভুল হবেনা পিটাছড়া বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রকে। বিভিন্ন গাছপালা, প্রাণী ও পাখির অস্তিত্ব দেখতে আসছেন তারা। গবেষণার কাজে বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়ে যাচ্ছেন। সুদীর্ঘ সময় ধরে পাহাড়ের মানুষ শিকারে অভ্যস্ত। সময়ের সঙ্গে অনেকের কাছে বন মুরগী, বানর, পাখি ও প্রাণীর কদর বাড়ায় শিকারের প্রবণতা বেড়েছে। বন্যপ্রাণী শিকার আইনত দণ্ডনীয় হওয়ার পাশাপাশি প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় কেন জরুরি তা বুঝিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করেছেন। যা এরই মধ্যে সুফল বয়ে আনছে। স্থানীয়দের মধ্যে একটি স্বেচ্ছাসেবী দল তৈরি হয়েছে যারা বাজার ও বিভিন্ন মাধ্যমে বন্যপ্রাণী বিক্রি প্রতিরোধে কাজ করছে। এছাড়া সাপসহ অন্যান্য প্রাণী বিপদে পড়লে কিংবা লোকালয়ে চলে আসলে কি ভাবে উদ্ধার করা যায় তার প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি উদ্ধারে অভিজ্ঞ স্বেচ্ছাসেবী তৈরি হয়েছে। পিটাছড়া বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র শুধু বন্যপ্রাণী ও বন নিয়ে কাজ করছে না। স্থানীয়দের আর্তসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে কাজ করছে। পাঠাগার, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, সাংস্কৃতিক দল তৈরি ও নানা প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
মাহফুজ রাসেল বলছেন, শুরুতে ব্যক্তিগত ভাবে এ কার্যক্রম শুরু করলেও এখন অনেকে পাশে দাঁড়িয়েছেন। আগে যারা বাঁকা চোখে দেখতেন তারা এখন বুঝছেন। প্রাণ ও প্রকৃতি বাঁচাতে সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চায়। খাগড়াছড়ি বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা ফরিদ মিঞা বলেন, পিটাছড়া বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে ভালো কাজ। বন বিভাগ এ উদ্যোগের অংশীদার হিসেবে সবসময় সঙ্গে আছে।