২০ বছর ধরে দুই টাকায় চা বিক্রি করছেন লতিফ শাহ
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
শরীফ উদ্দীন, চুয়াডাঙ্গা

বর্তমান বাজারে এক কাপ লাল চায়ের দাম যেখানে ৫-১০ টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকেন দোকানিরা। সেখানে এখনও মাত্র দুই টাকায় এক কাপ চা বিক্রি করছেন চুয়াডাঙ্গার আব্দুল লতিফ শাহ। তার বয়স পেরিয়েছে ষাটের ঘর। গত তিন দশক ধরে টং দোকানে চা বিক্রি করছেন তিনি। সময় পাল্টেছে, দ্রব্যমূল্য বেড়েছে, কিন্তু আব্দুল লতিফ শাহর চায়ের দাম আজও অপরিবর্তিত।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের যাদবপুর গ্রামের নতুনপাড়ার মৃত জবেদ আলীর ছেলে লতিফ শাহ প্রায় ৩০ বছর ধরে তিনি সদরের সরোজগঞ্জ বাজারে ছোট একটি টং দোকানে চা বিক্রি করছেন। প্রথম দশ বছর তিনি এক টাকায় চা বিক্রি করতেন, আর গত ২০ বছর ধরে দুই টাকায় চা বিক্রি করে আসছেন। আশপাশের এলাকাজুড়ে এখন এই দোকান এক ‘চমক’। কেউ বাড়তি দাম দিতে গেলেও তিনি নেন না। চা বিক্রেতা আব্দুল লতিফ শাহ বলেন, গত ৩০ বছর ধরে চা বিক্রি করে সংসার চলছে। পাশাপাশি কৃষি পেশায় নিয়োজিত। প্রথম দশ বছর এক টাকা করে চা বিক্রি করেছি। এরপর টানা ২০ বছর দুই টাকা করেই বিক্রি করে আসছি। মূল্য আর বাড়াতে চাই না। আমি এই ঐতিহ্যটা ধরে রাখতে চাই। যতদিন বাঁচব, দুই টাকায় চা বিক্রি করব। স্থানীয় ব্যবসায়ী সবুজ বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকেই এই চাচার দোকানে চা পান করি। আগে এক টাকা, এখন দুই টাকা। কিন্তু স্বাদ একই রকম। উনার চায়ে একটা আলাদা মিষ্টি ঘ্রাণ থাকে। আদা আর লবঙ্গ দিয়ে বানানোয় চায়ের স্বাদটা যেন আরও জমে ওঠে। অনেক দূর-দূরান্ত থেকেও লোকজন আসে এই দুই টাকার চা খেতে।
চা পান করতে আসা ট্রাকচালক মধু শেখ বলেন, আমি চুয়াডাঙ্গায় আসা যাওয়া করি ২০ বছর ধরে। সরোজগঞ্জে এলেই এই চাচার দোকানে বসে দুই টাকার চা খাই। এই বিশ বছরেও উনি দাম বাড়াননি। দুই টাকার চা, কিন্তু স্বাদ ভালো। দূর-দূরান্তের অনেক চালক এই চায়ের জন্য একটু থেমে যায়। গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, দোকানটি ছোট হলেও চারপাশে ভিড় লেগেই থাকে। কেউ ট্রাকচালক, কেউ পথচারী, কেউবা বাজারের ব্যবসায়ী। তাদের মুখে একটাই কথা, লতিফ চাচার চা শুধু চা নয়, এক টুকরো অনুভূতি।
স্থানীয় বাসিন্দা হাবিবুর রহমান, আমি ছোটবেলা থেকে দেখি উনি দুই টাকার চা বিক্রি করছেন। কেউ বেশি দিতে গেলেও নেন না। এখন বাজারে সব কিছুর দাম আকাশছোঁয়া, কিন্তু তিনি আজও আগের মতোই চা দেন দুই টাকায়। এতে লাভ না হলেও তিনি ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।
তার দোকান এখন চুয়াডাঙ্গার একটা পরিচয়।
চা দোকানি আব্দুল লতিফ, আমার ছেলে দোকানটা প্রথম শুরু করেছিল, পরে সে বিদেশ চলে যায়। আমি তখন থেকে দোকান চালাই। আল্লাহর রহমতে এখনও সংসার চলে যাচ্ছে। আমার স্ত্রী, মেয়ে আর নাতি ছেলে নিয়ে ছোট সংসার। অন্যরা চা বিক্রি করে লাভবান হয়, আমি শুধু সন্তুষ্টি পাই। মানুষ খুশি হলেই আমার শান্তি। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন জেলার লোকজন আসে আমার দোকানের চা পান করার জন্য। অনেক জেলার লোকজন জানে চুয়াডাঙ্গা জেলার সরোজগঞ্জ বাজারের তেল পাম্পের পাশে আমি দুই টাকায় এক কাপ চা বিক্রি করি। অনেক বড় বড় কোম্পানির লোক গাড়িতে এসে আমার দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আমার হাতের চা পান করে যায়। অন্য ব্যবসাদাররা চা বিক্রি করে অনেকখানি লাভবান হয়, তবে আমি হই না। এই দুই টাকা কাপ চা বিক্রি করে আল্লাহ কোনোরকমে আমার সংসার চালিয়ে নেয়। কেউ যদি চায়ের দাম বেশিও দেন সেটাও আমি নেই না।
