চুয়াডাঙ্গায় সবজিখেত পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক
প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
শরীফ উদ্দীন, চুয়াডাঙ্গা

শীতকালীন শাকসবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার চারটি উপজেলার কৃষকেরা। এরইমধ্যে বাজারে উঠতে শুরু করেছে দেশীয় শীতকালীন নানা সবজি। চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, নিরাপদ সবজি উৎপাদনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। চলতি রবি মৌসুমে জেলায় ৮ হাজার ৬৪০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সবজি চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সবজি চাষ করে কম সময়ে বেশি লাভ এবং প্রতিনিয়ত নগদ টাকা হাতে আসে বলে কৃষকেরা সবজি চাষে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন।
জেলায় এরইমধ্যে বিভিন্ন জমিতে শীতকালীন ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, টমেটো, আলু, গাজর, শসা, শিম, পালং শাক, ব্রকলি, মুলা, লাউ, মরিচসহ বিভিন্ন রকম সবজি উঠতে শুরু করেছে। বরাবরই চুয়াডাঙ্গায় শীতকালীন সবজির ফলন ভালো হলেও বর্তমানে সার সংকটে কৃষকের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। চাহিদা অনুযায়ী সার না পেলে শীতকালীন সবজির ফলন আশানুরূপ হবে না বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। জেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এখনও জেলায় যে পরিমাণ সার মজুত আছে তাতে সবজি চাষের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। বরং পরিমিত পরিমাণে সার প্রয়োগ করলে সবজির ফলন ভালো হবে। তারা কৃষকদের সবজিখেতে অতিরিক্ত সার প্রয়োগ না করে খেতের সঠিক পরিচর্যা করার পরামর্শ দেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে চুয়াডাঙ্গায় ইউরিয়া সারের মজুত আছে ৩ হাজার ৭৮৮ মেট্রিক টন। টিএসপি সারের মজুত ২১৯ মেট্রিক টন। ডিএপি সারের মজুত রয়েছে ৬০৫ মেট্রিক টন এবং এমওপি সারের মজুত রয়েছে ১ হাজার ২৫৮ মেট্রিক টন। চলতি রবি মৌসুমে চুয়াডাঙ্গায় শীতকালীন শাকসবজির পাশাপাশি অন্যান্য ফসল চাষ করা হয়েছে। সূত্র জানায়, চুয়াডাঙ্গার চারটি উপজেলায় এবার ৯৩২ হেক্টর জমিতে গম, ৪৭ হাজার ৭৫৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা এবং ২ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এরইমধ্যে ১২০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা, ৩০ হেক্টর জমিতে আলু এবং ৭১০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন শাকসবজি আবাদ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অবশিষ্ট জমিতে ভুট্টা, আলু ও সবজি আবাদ করা হবে। তবে গত বছর ভুট্টা ও আলু চাষে কৃষকেরা কিছুটা লোকসানের মুখে পড়েছিল। এর ফলে চলতি রবি মৌসুমে আলু ও ভুট্টা চাষ কম হওয়ার পাশাপাশি সবজি আবাদ বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সূত্র আরও জানায়, চলতি মৌসুমে জেলার ৬ হেক্টর জমিতে ছোলা, ২৪ হেক্টর জমিতে খেসারি, ১ হাজার ১৪৪ হেক্টর জমিতে আখ, ১ হাজার ৫৩৫ হেক্টর জমিতে শীতকালীন পেঁয়াজ, ২৯৩ হেক্টর জমিতে মসুর, ৪৭ হেক্টর জমিতে মটর, ৩ হাজার ৭১৫ হেক্টর জমিতে সরিষা, ৪ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী, ৩০৫ হেক্টর জমিতে রসুন, ৮৫৭ হেক্টর জমিতে মরিচ, ৪৭৩ হেক্টর জমিতে ধনিয়া, ৫৯ হেক্টর জমিতে ফুল, ১ হাজার ২৬৪ হেক্টর জমিতে পান এবং ৩১০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ধুতরহাট গ্রামের কৃষক শাহজাহান বলেন, আমি ৪ বিঘা জমিতে সবজির আবাদ করেছি। এরইমধ্যে লাউ, শসা, ঢেড়শ, বেগুনসহ বিভিন্ন সবজি লাগানো হয়েছে। আমার চাষযোগ্য জমিগুলোতে আমি প্রতিবছরই সবজি চাষ করি। তবে পর্যাপ্ত সার না দিতে পারলে সবজির ফলন খুব একটা ভালো হবে না। শীতকালীন সবজি চাষ করতে প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক সার প্রয়োজন হয়। সারের সরবরাহ ঠিক থাকলে সবজির ফলন আরও ভালো হবে। সবজি চাষি কদর আলী বলেন, আমি এবার প্রায় দুই বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছি। আবহাওয়া অনুযায়ী ফলন বেশ ভালোই হচ্ছে। তবে কিছু কিছু ফুলকপিতে ছত্রাকজনিত রোগবালাই দেখা দিয়েছে। এসব রোগবালাই নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। জমিতে যে পরিমাণ চাহিদা আছে সে পরিমাণ সার আমরা পাচ্ছি না। বাংলা টিএসপি ও বাংলা ডিএপি সার বাজারে নেই বললেই চলে। যদিও কোনো কোনো জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে তাও কিনতে হচ্ছে চড়া দামে। তিনি জানান, ২৭ টাকা কেজির বাংলা টিএসপি সার কিনতে হচ্ছে ৪৮ টাকায়। ২১ টাকা কেজির ডিএপি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩২ টাকা কেজি দরে। ডিলারদের কাছে সার কিনতে হলে সকাল থেকে লাইন দিতে হচ্ছে। তারপরেও মিলছে না সবটুকু সার। এ সার সংকট কেটে গেলে সবজি চাষের ফলন আরও ভালো হবে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান বাসসকে বলেন, চুয়াডাঙ্গার মাটি এমনিতেই খুব উর্বর। মাটিতে ফসফরাস ও টিএসপির পরিমাণ বরাবরই বেশি। তবুও কৃষকেরা মাত্রাতিরিক্ত সার প্রয়োগ করে জমির উর্বরতা নষ্ট করছেন। চুয়াডাঙ্গাতে সবজি চাষ বেশি হয়ে থাকে। মাটিতে সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগ করলে শাকসবজি চাষের ফলন ভালো হয়। সব কৃষক যদি সঠিক পরিমাণে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করেন এবং মাটিতে জৈব সার প্রয়োগ করেন তাহলে ফলাফল আরও ভালো হবে। তিনি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত সার প্রয়োগ না করার জন্য কৃষকদের প্রতি আহ্বান জানান।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মাসুদুর রহমান সরকার বাসসকে বলেন, চুয়াডাঙ্গায় বর্তমানে সারের যথেষ্ট মজুত রয়েছে। কৃষকদের শাকসবজির সঠিক ফলন পেতে সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগ করতে হবে। চুয়াডাঙ্গার জমিগুলোতে বর্তমানে ৬৫ শতাংশ ফসফরাস বিদ্যমান। অতিরিক্ত রাসায়নিক সার প্রয়োগ জমির জন্য হুমকিস্বরূপ। সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগ জমির ফলন কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। কৃষকরা এ বিষয়ে সচেতন হলে মাটির গুণাগুণ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আমি মনে করি। তিনি জানান, চুয়াডাঙ্গাতে প্রতিবছরই শীতকালীন শাকসবজির চাষ হয়ে থাকে। এ বছর চুয়াডাঙ্গায় ৮ হাজার ৬৪০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন শাকসবজির চাষ করা হচ্ছে। পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গাতে বিপুল পরিমাণ জমিতে ভুট্টার চাষ করা হচ্ছে।
