বিদেশি যন্ত্রের দেশীয় উদ্ভাবনে সাড়া ফেললেন পাকশীর প্রকৌশলী
প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলমাস আলী, ঈশ্বরদী (পাবনা)

বিদেশ থেকে আমদানি না করে দেশীয় প্রযুক্তিতে কম খরচে রেললাইন কাটার অত্যাধুনিক একটি যন্ত্র তৈরি করে আলোচনায় এসেছেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ নাজিব কায়সার বিন্দু। এর আগে জার্মানি থেকে যে মেশিন পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকায় আমদানি করতে হতো, সেটি এখন মাত্র ২৭ হাজার ৫০০ টাকায় দেশেই তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। এই রেল কাটিং মেশিন দিয়ে মাত্র ১ মিনিট ২০ সেকেন্ডে একটি রেল প্রস্থ বরাবর কাঁটা যায়। যা আমদানি করা জার্মান মেশিনের চেয়েও দ্রুত কাজ করতে সক্ষম। এই উদ্ভাবন রেললাইন মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে গতি আনার পাশাপাশি দেশের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের সম্ভাবনা তৈরি করেছে। রেল চলাচল করতে গিয়ে কোনো কারণবশতো রেললাইনে ট্রেন লাইনচ্যূত হওয়ার পর রেললাইন ফাঁটল দেখা দেয়। আবার কখনও প্রচণ্ড গরমে রেললাইন ভেঙেও যায়।
এ সময় রেললাইন মেরামত করে ট্রেন যাত্রীদের ভ্রমণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে রেল প্রস্থ বরাবর কাঁটতে ‘রেল কাটিং মেশিন’ খুব প্রয়োজন হয়ে ওঠে। রেল কাটিং মেশিনগুলো জার্মানি থেকে আমদানি করলে দাম পড়ত প্রায় ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা। সেই মেশিন দিয়ে রেললাইন কাঁটতে কয়েক মিনিট সময় লাগত। তবে তার নিজস্ব প্রচেষ্টায় উদ্ভাবিত মেশিন দিয়ে দেখিয়েছেন মাত্র এক মিনিট ২০ সেকেন্ডে একটি রেল প্রস্থ বরাবর কাটা সম্ভব। প্রকৌশলী নাজিব কায়সার বিন্দু, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগে বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ হিসেবে পাবনার ঈশ্বরদীর উপজেলার রেলওয়ের বিভাগীয় সদর দপ্তর পাকশীতে কর্মরত রয়েছেন। পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ নাজিব কায়সার বিন্দু জানান, তার উদ্ভাবিত এই রেল কাটিং মেশিনের বিশেষত্ব হলো, এই মেশিনে যেকোনো সাইজের কাটিং ডিস্ক ব্যবহার করা যায়।
মেশিনটি রেললাইনে ট্রেন লাইনচ্যূত কিংবা কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে রেল কর্মচারীদের তাৎক্ষণিক দ্রুতসময়ে রেললাইন কাঁটতে সাহায্য করে। মাত্র ১ মিনিট ২০ সেকেন্ড সময়ে রেলকে দ্বিখণ্ডিত করা যায়। ৭ দশমিক ৫ হর্স পাওয়ার বিশিষ্ট প্রেট্রোল ইঞ্জিন দ্বারা মেশিনটি পরিচালিত হয়। এটা একটি পোর্টেবল মেশিন, যার ওজন প্রায় ৩৫ কেজি। পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ নাজিব কায়সার বিন্দু আরও জানান, আগে যতগুলো রেল কাটিং মেশিন কেনা হয়েছে সেগুলো জার্মানি থেকে আমদানি করা। যার দাম ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা। আবার বিদেশ থেকে নিয়ে আসতেও সময় লাগতো। সেই মেশিন দিয়ে রেললাইন কাটতে বেশ সময় লাগত। কিন্তু আমার উদ্ভাবন করা মেশিন দ্বারা মাত্র ১ মিনিট ২০ সেকেন্ড সময়ে একটি রেল প্রস্থ বরাবর কাঁটা যায়। প্রকৌশলী নাজিব কায়সার বিন্দু আরও জানান, মেশিনটি তৈরি করা হয়েছে ঈশ্বরদীস্থ প্রকৌশল বিভাগের কর্মচারীদের দিয়ে। প্রথম বানানো বলে বেশি সময় লেগেছে। এই রেল কাটিং মেশিন বানাতে সর্বোচ্চ পাঁচদিন সময় লাগবে, যদি যন্ত্রাংগুলো বাজারে সহজে পাওয়া যায়।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আবু জাফর জানান, ব্রিটিশ আমলে হেচকো ব্লেড দিয়ে রেললাইন কাঁটতে ১ থেকে দেড় ঘণ্টা সময় ব্যায় হতো। জার্মানি থেকে আমদানি করা মেশিনে কয়েক মিনিট সময় লাগতো, দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই কাটিং মেশিনটি দিয়ে আমরা ১ মিনিট ২০ সেকেন্ড সময় একটি রেলকে প্রস্থ বরাবর কাঁটতে পারছি, এতে আমাদের সময় সাশ্রয় হচ্ছে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) লিয়াকত শরীফ খান জানান- কম খরচে, দেশীয় প্রযুক্তি ও কারিগরি সহায়তায় রেল কাটিং মেশিন উদ্ভাবন করা হয়েছে। রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের কর্মচারীরা পরিক্ষামূলকভাবে ওই কাটিং মেশিন দিয়ে কাজ করছে। যদি টেকসই হয়, তাহলে ঈশ্বরদী ওয়ার্কশপ থেকে সরকারি খরচে রেল কাটিং মেশিন তৈরি করা হবে। রেলওয়ের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারাও প্রকৌশলী নাজিব কায়সার বিন্দুর এই উদ্ভাবনের প্রশংসা করেছেন। তাদের মতে, মাঠপর্যায়ে সফল প্রমাণিত হলে এটি পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চল উভয় অঞ্চলের রেলওয়ে কারখানায় সরবরাহ করা হবে।
