যন্ত্রণায় দিন কাটাচ্ছেন জুলাইযোদ্ধা সোলাইমান

প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নাঙ্গলকোট (কুমিল্লা) প্রতিনিধি

২০২৪ সালের জুলাই মাসের মাঝামাঝি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ঢাকার রাজপথে গুলিবিদ্ধ মো. সোলাইমান (৩৮) শরীরের বিভিন্নস্থানে এখনও কয়েকটি গুলি রয়েছে। গত প্রায় দেড় বছরেও শরীরের বিভিন্নস্থানের একাধিক গুলি থাকায় গুলি যন্ত্রণায় তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।

সোলাইমান কুমিল্লার নাঙ্গলকোট পৌরসভার গোত্রশাল গ্রামের মৃত আবদুল লতিফের ছেলে। সোলাইমান জানান, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই রাত আনুমানিক ৮টার দিকে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলন যখন তুঙ্গে ওই সময় সোলাইমানসহ প্রায় অর্ধশতাধিক ছাত্র-জনতা সরকার বিরোধী আন্দোলনে ঢাকার নয়া পল্টন ভিআইপি সড়কের মসজিদ গলি এলাকায় জড়ো হন। এ সময় আওয়ামী লীগের ক্যাডারবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পুলিশ সদস্যরা তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে অস্ত্র দিয়ে তাদের উপর অতর্কিতভাবে গুলি চালায়। তাদের গুলিতে অন্তঃত ১০/১২জন গুলিবিদ্ধ হয়। তাদের গুলি থেকে মসজিদের সাধারণ মুসল্লিরাও রক্ষা পায়নি। মসজিদের মুসল্লিরা পর্যন্ত গুলিবিদ্ধ হন।

গুলিতে সোলাইমানের সঙ্গে রাব্বানি নামে একজনও গুলিবিদ্ধ হয়। অন্য একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে নিহত হয়। অন্যদের সাথে সোলাইমানও হাত এবং পিঠে গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় গুলিতে সোলাইমানের হাত ও পিঠ রক্তে ভেসে যায়। স্থানীয়রা গুলিবিদ্ধদের উদ্ধার করে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ সময় স্থানীয় জনতা সোলাইমানকেও উদ্ধার করে ঢাকার দুটি বেসরকারি হাসপাতাল নিয়ে গেলেও কোনো হাসপাতাল তাকে চিকিৎসা দেয়নি।

পরে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে রাত প্রায় ১১টার দিকে সোলাইমানকে ঢাকার নয়া পল্টনের ইসলামী ব্যাংক স্পেশালাইজড অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তার শরীর থেকে ৭/৮টি গুলি বের করেন। পরে ঢাকার নিজ বাসায় দু’দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর একদিন রাতের অন্ধকারে সোলাইমান দেশের বাড়ি নাঙ্গলকোটের গোত্রশাল চলে আসেন। বাড়ি এসে নাঙ্গলকোটের বেসরকারি পদ্মা হসপিটাল অ্যান্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডা. মো. রকিবুল হাসানের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নেন। ডা. রকিবুল হাসানও সোলাইমানের শরীর থেকে একাধিক গুলি বের করেন।

সোলাইমান আরও জানান, তার ডান হাতে এখনও একটি গুলি রয়েছে। গুলির যন্ত্রণায় তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। ডান হাতে গুলি থাকায় তিনি স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারছেন না। ডান হাতে গুলি থাকায় তার কাছে মনে হচ্ছে হাতের মধ্যে রড ঢুকে রয়েছে।

ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগষ্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে দেশ এগিয়ে গেলেও গত প্রায় দেড় বছরেও সোলাইমান জুলাই যোদ্ধাহতের তালিকায় নাম উঠাতে পারেননি বলে জানান। তিনি জুলাই যুদ্ধাহতদের তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান।