চট্টগ্রামকে ক্লিন ও সেইফ সিটিতে পরিণত করব
বললেন চসিক মেয়র শাহাদাত
প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টগ্রাম ব্যুরো

চট্টগ্রাম নগরীকে ক্লিন, গ্রিন, হেলদি ও সেইফ সিটিতে রূপান্তরে গৃহীত কার্যক্রমের অগ্রগতি তুলে ধরে পরবর্তী পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার কাজীর দেউড়ির ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে (আইসিসি) মেয়র শাহাদাত হোসেনের দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে এ পরিকল্পনা তুলে ধরেন মেয়র।
এ সময় নগরীর যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে মেয়র বলেন, আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর ১৭ বছর ধরে বেদখলে থাকা ভূমি উদ্ধার করে আগ্রাবাদের সড়ক করে দিয়েছি। আমি নগরীতে প্রায় ৫০টা বড় বড় রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি যে রাস্তাগুলো হলে এই শহরের চেহারা পরিবর্তন হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। এ বছর এই ৫০টি বড় বড় রাস্তা আমি আপনাদের উপহার দিব।
নাগরিক সেবাকে সহজ করতে প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে মেয়র বলেন, ১০টি সেবা নিয়ে ‘আমাদের চট্টগ্রাম’ নামের একটি অ্যাপস লঞ্চ করব আগামী ডিসেম্বরে। অ্যাপটিতে ময়লা পরিষ্কার, নালা পরিষ্কার, রাস্তা সংস্কার, আলোকায়ন, মশা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা সংক্রান্ত যেকোনো অভিযোগ ছবি তুলে এই অ্যাপে আপনারা জমা দিতে পারবেন। নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সাফল্য এসেছে জানিয়ে মেয়র বলেন, চট্টগ্রামে প্রতিদিন ৩০০০ থেকে ৩১০০ মেট্রিক টন ময়লা উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে ২২০০ টন আমরা কালেকশন করছি বাকি ৮০০ থেকে ৯০০ টন আমরা কালেকশন করতে পারছি না। কি কারণে পারছি না এটা হয়তোবা আপনাদের মনের মধ্যে প্রশ্ন আসে। এই ৯০০ মেট্রিক টন ময়লা দেখবেন কেউ বাসা থেকে জানালা দিয়ে ময়লাটা ফেলে দিচ্ছেন। কেউ ডাস্টবিনে ময়লাটা না দিয়ে চলন্ত গাড়ি থেকে ময়লাগুলো ফেলে দিছেন। এ ময়লাগুলো কোথায় যাচ্ছে? সরাসরি নালাতে যাচ্ছে। নালা থেকে খালে, খাল থেকে পরে কর্ণফুলি নদী, হালদা নদী দূষিত হয়ে যাচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে আমি ডোর টু ডোর প্রকল্পটি চালু করেছি। তবে এ ব্যাপারে আমি জানি, আপনাদের এখন আর্থিকভাবে কিছু সমস্যা হচ্ছে। কিছু জায়গায় আমি অভিযোগ পেয়েছি যে সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি টাকা নেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে আপনারা সরাসরি লিখিত অভিযোগ জানাবেন। আমরা সেই প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশ বাতিল করে অন্য প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিব।
হেলদি সিটি পরিকল্পনা নিয়ে মেয়র বলেন, ব্রেস্ট ক্যান্সার নিয়ে সচেতনতা তৈরিতে চট্টগ্রামে আমরা জোন করেছি। লিভার ক্যান্সারের জন্য সচেতনতা তৈরিতে আমরা কাজ করেছি। টাইফয়েডের ভ্যাকসিন দিচ্ছি শিশুদের। আমাদের যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আছে সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমাদের যে অবকাঠামোর অভাব ছিল সেগুলো আমরা করে দিচ্ছি। আমাদের প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সেন্টারগুলোতে আধুনিক মেডিকেল ইকুইপমেন্ট সরবরাহ করা হচ্ছে। মেমন-২ হসপিটালে কিডনি রোগীদের জন্য ডায়ালাইসিস মেশিন স্থাপন করে স্বল্প মূল্যে, একদম কম মূল্যে সেবা দেয়া হবে। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম স্কুল হেলথ কার্ড কার্যক্রম চালু করেছি আমরা।
রাজস্ব আহরণ সম্পর্কে মেয়র বলেন, অতীতে যেসব নাগরিকের রাজস্ব অধিক হারে নির্ধারণ করা হয়েছিল সেগুলো আমি রিভিউ বোর্ড করে যাচাই করে সঠিক পরিমাণে করে দিচ্ছি। তবে, কমার্শিয়াল হোল্ডিং ট্যাক্স যাতে কেউ ফাঁকি দিতে না পারে সে ব্যাপারে আমি কঠোর অবস্থান নিয়েছি। এজন্য একটি ডিজিটাল প্লাটফর্মও চালু করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার মাধ্যমে হতদরিদ্র পরিবারের সন্তানদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের অধিকার আমি নিশ্চিত করব।
অনুষ্ঠানে এআই হেলথ কেয়ার সিস্টেমের উদ্বোধন করেন মেয়র যেটি ব্যবহার করে নাগরিকদের স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন ডাটা সংরক্ষণ ও আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স ব্যবহার করে বিশ্লেষণ করে রোগ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। মেয়র অনুষ্ঠানে সরাসরি নাগরিকদের বিভিন্ন অভিযোগ ও পরামর্শ গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে মেয়রের এক বছরের কার্যক্রমের ওপর তথ্যচিত্র প্রদর্শন ও উন্নয়ন প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
বিশেষ অতিথি ডিআইজি আহসান হাবীব পলাশ বলেন, সারাদেশের মানুষ নিশ্বাস নিতে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বেড়াতে আসেন। তাই পুরো চট্টগ্রামকে নিশ্বাসের জায়গায় পরিণত করতে হবে। চট্টগ্রাম শহরে ভালো কোনো পার্ক নেই। ঢাকার রমনা পার্কের মতো পার্ক, বোটানিক্যাল গার্ডেন ও অ্যাকুয়ারিয়াম দেখতে চাই।
সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ বলেন, আমাদের জেলা পুলিশ লাইনে কোমর পানি হয়ে যেত, প্যারেড করা যেত না। জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান হয়েছে। জলাবদ্ধতার মূল কারণ ছিল পানি নিষ্কাশনের পথে লোকজন দোকান গড়ে তুলেছিল। এখন যেভাবে কাজ হচ্ছে সেভাবে সামনের দিনে সবাই মিলে বাসযোগ্য শহর হিসেবে চট্টগ্রামকে দেশবাসীর কাছে তুলে ধরতে পারব।
সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম বলেন, মেয়র ডা. শাহাদাত বিনয়ী ও সৎ মানুষ। আপসহীন রাজনীতিক। জলাবদ্ধতা নিরসনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে চসিক ও সিডিএ একত্রে কাজ করছে। মেয়রের নেতৃত্বে নতুন চট্টগ্রাম গড়ে তুলতে পারব আমরা। অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মোহাম্মদ নূরুল্লাহ নূরী প্লাস্টিক ও পচনশীল বর্জ্য ফেলার জন্য নগরে লাল ও সবুজ রঙের বিন দেওয়ার জন্য মেয়রের প্রতি অনুরোধ জানান। তিনি নগরবাসীকে প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যবহারে সচেতন হওয়ার আহবান জানান। চসিক সচিব মো. আশরাফুল আমিনের সভাপতিত্বে আয়োজনে অংশ নেন- চট্টগ্রাম পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ, ডিআইজি আহসান হাবীব পলাশ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা পরিষদের প্রশাসক মোহাম্মদ নুরুল্লাহ নূরী, চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডি মনোয়ারা বেগম, সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর চট্টগ্রাম মহানগরের সাবেক আমির আলহাজ শাহজাহান চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান, মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির নজরুল ইসলাম, মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি, চট্টগ্রাম জেলা এ্যাবের সভাপতি প্রকৌশলী সেলিম মো. জানে আলম, মহানগর জামায়াতে ইসলামীর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ উল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুজ্জামান হেলালী, মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি শামসুল হক হায়দারী, সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান প্রমুখ।
