কালো পোকা মাছের বিকল্প খাবার দানাদার খাদ্যের ওপর চাপ কমছে
প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আব্বাস আলী, নওগাঁ

প্রোটিনের বিকল্প উৎস হতে পারে কালো সৈনিক পোকা। এ পোকা বিকল্প খাদ্য হিসেবে মাছ ও হাঁস-মুরগির জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। খরচ কম ও লাভজনক হওয়ায় নওগাঁয় কালো সৈনিক পোকা চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে চাষি ও উদ্যোক্তারা। জেলায় ১০ জন উদ্যোক্তা এ পোকা উৎপাদন করছে। এতে দানাদার জাতীয় পশুখাদ্যের ওপর চাপ কমায় লাভবান হচ্ছে তারা। তবে প্রশিক্ষণ দিয়ে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হলে বাড়বে কর্মসংস্থান।
খরচ কম ও লাভজনক হওয়ায় কালো সৈনিক পোকা চাষ করা হচ্ছে। এতে দানাদার জাতীয় খাদ্যের ওপর চাপ কমায় লাভবান হচ্ছে তারা। নিজেদের চাহিদা পূরণে বিক্রি করে বাড়তি আয়ও হচ্ছে। কালো সৈনিক পোকা বাসাবাড়ি, পচনশীল ফলমূল, শাকসবজি ও বাজারের ময়লা আবর্জনা পুনঃব্যবহার করে উৎপাদন করা যায়। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও কম্পোস্টিং করতেও এই পোকার লার্ভা যেকোনো জৈব বর্জ্য ভক্ষক হিসেবে কাজ করতে পারে। এতে মাছ চাষে খাবারের বিকল্প হিসেবে এই পোকা ব্যবহারে খরচ কমছে অনেকাংশ। ফলে বিষমুক্ত মাছ চাষে লাভবান হচ্ছেন মৎস্য চাষিরা।
কালো সৈনিক পোকাগুলো একটি জালের মধ্যে দিনের আলো-বাতাস আসে এমন জায়গায় রাখতে হয়। পোকাগুলো প্রজনন সম্পন্ন করার পর সেখানে কাঠের স্তরের মধ্যে ডিম পাড়ে। সেই ডিমগুলো হ্যাচিং করে ফোটানোর কিছুদিন পর আলাদা করে অন্য জায়গায় রাখা হয়। এরপর সেখান থেকে তৈরি হয় লার্ভা। ময়লা ও আবর্জনা থেকে ৫টি ধাপে ১৫-১৬ দিনে উৎপাদন হয় এ পোকা। এরপর খাওয়ার উপযোগী হলে পুকুরে ও মুরগি খামারে ব্যবহার করা হয়। কালো সৈনিক পোকা উৎপাদনে আলাদা কোনো খাবারের প্রয়োজন হয় না। কালো সৈনিক পোকা উৎপাদন হওয়ায় পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখতে যেমন ভূমিকা রাখছে, তেমনি প্রোটিনের বিকল্প উৎস হতে পারে।
জেলার রানীনগর উপজেলা লোহাচুড়া গ্রামের প্রতিবন্ধী উদ্যোক্তা নাহিদ আক্তার নয়ন। দেড় বছর আগে স্থানীয় একটি বেসরকারি সংস্থা মৌসুমীতে প্রশিক্ষণ করার সময় কালো সৈনিক পোকার বিষয়ে ধারণা পান। এরপর প্রশিক্ষণ ও ভালো ধারণা পেয়ে এক বছর আগে উপকরণ নিয়ে শুরু করেন কালো সৈনিক পোকা উৎপাদন।
প্রতিবন্ধী উদ্যোক্তা নাহিদ আক্তার নয়ন বলেন- কালো সৈনিক পোকা উৎপাদনে পচনশীল ফলমূল, শাকসবজি ও বাজারের ময়লা আবর্জনা পুনর্ব্যবহার করে উৎপাদন করা যায়। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও কম্পোস্টিং করতেও এই পোকার লার্ভা যেকোনো জৈব বর্জ্য ভক্ষক হিসেবে কাজ করতে পারে। এতে মাছ চাষে খাবারের বিকল্প হিসেবে এই পোকা ব্যবহারে খরচ কমছে অনেকাংশ। প্রতি কেজি কালো সৈনিক পোকা উৎপাদনে খরচ পড়ে প্রায় ১৫ টাকা। আর বিক্রি করছেন ৬০ টাকা কেজি। নিজের পুকুরে মাছ চাষে চাহিদা মিটিয়ে মাসে বিক্রি করছেন প্রায় ১০ হাজার টাকা। এতে কালো সৈনিক পোকা উৎপাদনে কমেছে মাছ চাষ খরচ। সুবিধা পাওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে শুরু করা হচ্ছে। খামারে একজনের কর্মসংস্থানও হয়েছে।
মাছ চাষি দেলোয়ার হোসেন বলেন- নাহিদ আক্তার নয়ন ভাইয়ের কাছে কালো সৈনিক পোকা উৎপাদনের বিষয়ে জানার ও পরামর্শ নিতে আসছি। যদি ফিডের বিকল্প হিসেবে এই পোকা তুলনায় খরচ কম হয় তাহলে সুবিধা আছে। শুনেছি মাছ ও মুরগির স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং খরচ কম হওয়ায় লাভজন। নওগাঁ সদর উপজেলার উপজেলার তিলোকপুর ইউনিয়নের উলিপুর গ্রামের কৃষক আহসান হাবিব বলেন- কৃষি কাজের পাশাপাশি পুকুরে মাছ চাষ করা হয়। মাছের খাদ্য হিসেবে ফিড খাওয়াতে হতো। কিন্তুবাজারে ফিডের দাম ৬০-৬৫ টাকা কেজি। এতো দাম দিয়ে ফিড কিনে মাছ চাষ অসম্ভব হয়ে উঠেছিল। ইউটিউবে ভিডিও দেখে ২০১৯ সালে মাছের খাবারের বিকল্প হিসেবে পরিবেশবান্ধব কালো সৈনিক পোকা উৎপাদনে আগ্রহী হয়। এরপর স্বল্প পরিসরে খামার তৈরি করা হয়। প্রথম দিকে খামার হতে মাসে এক থেকে দেড় মণ লার্ভা উৎপাদন হতো। পরবর্তিতে ২০২৪ সালে বেসরকারি সংস্থা মৌসুমী হতে খামার সম্প্রসারণে আর্থিক সহায়তা নিয়ে বড় আকারে খামার করা হয়। নিজের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করে বাড়তি আয় করা যায়।
মৌসুমি সংস্থার ফিল্ড অফিসার সাইদুর রহমান বলেন- জেলায় আগ্রহী মাছ চাষিদের মাধ্যমে কালো সৈনিক পোকা চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। মাছ চাষে খরচ কমানোসহ চাষিদের লাভবান করা এবং ভোক্তাদের মধ্যে স্বাস্থ্যসম্মত মাছ পৌঁছে দিতে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। আগামীতে এই প্রকল্পটি বিভিন্ন উপজেলায় ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
নওগাঁ সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ড. মো. বায়েজিদ আলম বলেন- ময়লা ও আবর্জনা থেকে কালো সৈনিক পোকা উৎপাদন হওয়ায় পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়া ক্ষতিকর গ্যাস নিঃসরণ ঘটে যা শোষণ করে। বেসরকারি সংস্থার পাশাপাশি সরকারিভাবেও আগ্রহীদের পোকা চাষে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। যারা বেকার রয়েছেন তারা প্রশিক্ষণ নিয়ে উদ্যেক্তা হয়ে কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারে।
