সংস্কারের অভাবে প্রাণ হারাচ্ছে চান্দিনার মিনি স্টেডিয়াম

* স্টেডিয়াম ভবনের দরজায় তালা ঝুলছে * স্টেডিয়াম এখন গরু-ছাগলের চারণভূমি * সামান্য বৃষ্টিতেই মাঠে জমে হাঁটুসমান পানি * ক্রীড়াপ্রেমীদের প্রাণকেন্দ্র এখন মাদকসেবীদের আস্তানা

প্রকাশ : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  চান্দিনা (কুমিল্লা) প্রতিনিধি

কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার ক্রীড়া প্রেমীদের অন্যতম প্রাণ কেন্দ্র ছিল চান্দিনা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ। ১১০ বছরের পুরাতন বিশাল ওই খেলার মাঠটিতে বিকাল হলেই স্থানীয় ফুটবলার ও ক্রিকেটারদের ভীড় জমতো। বছরের কয়েকটি টুর্ণামেন্টও অনুষ্ঠিত হতো এই মাঠে। বর্তমানে ওই মাঠটি সংস্কারের অভাবে প্রায় পাঁচ বছরেও বেশি দিন ধরে খেলাধুলা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। মাঠটি সংস্কার করে ক্রীড়া প্রেমীদের জন্য উন্মুক্ত করতে কার্যত কোনো ভূমিকা নেই কারও! ১৯১৬ সালে চান্দিনা উপজেলা সদরে প্রতিষ্ঠিত হয় চান্দিনা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টির প্রধান ফটকের একশ গজের মধ্যে প্রায় আড়াই একর জমিতে নির্মিত হয় বিদ্যালয়টির খেলার মাঠ। ওই মাঠে খেলাধুলা করে জাতীয় ফুটবল টিমেও জায়গা করে নিয়েছিলেন বেশ কয়েকজন ফুটবলার।

২০১২ সালে বিদ্যালয়টি মডেল প্রকল্পে যুক্ত হওয়ায় এবং ২০১৮ সালে জাতীয়করণ হওয়ায় বর্তমানে বিদ্যালয়টির পূর্ণাঙ্গ নাম ‘চান্দিনা সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়’।

এছাড়া ২০১৭ সালে সারাদেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি মিনি স্টেডিয়াম করার প্রকল্পে চান্দিনা সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় খেলার মাঠটি বর্তমানে চান্দিনা উপজেলা মিনি স্টেডিয়াম নামকরণ করা হয়। এতে একটি দুই কক্ষ বিশিষ্ট একতলা ভবন, একটি শৌচাগার ও স্টেডিয়ামের পূর্বপাশে বসার জন্য পাকা কয়েকটি বেঞ্চ স্থাপন করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। এদিকে, বর্ষা কালে মাঠের পানি নিস্কাশনে পৌর কর্তৃপক্ষের কার্যত কোনো ভূমিকা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই মাঠটিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। পুরো বর্ষার মৌসুমে মাঠে গড়ায় না ফুটবল বা ক্রিকেট বল। বর্ষার জলাবদ্ধাতা থেকে সৃষ্ট আগাছা দিনে দেনে বেড়ে ঝোপ-ঝাড়ে রূপ নেয়।

এদিকে, সকাল-বিকাল মাঠের এক কোণে চান্দিনা ফুটবল একাডেমি চর্চা করলেও তা মাঠের অর্ধেকও ব্যবহার করতে পারছে না। ক্রীড়া পরিষদের দুই কক্ষের ভবনের তালা ভেঙে খুলে নিয়ে গেছে বৈদ্যুতিক পাখা, চেয়ার, টেবিলসহ মূলবান সামগ্রী। ব্যবহার না করায় ভিতরে চরম নোংরা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। মাঠের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে ওয়াস ব্লকটিতে ব্যবহার না থাকায় স্থানীয় এক নারী ছাগল পালন করছেন। এছাড়া মাঠের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে উপজেলা স্কাউটস ভবনটিরও যথাযথ ব্যবহার নেই। সরকারি এই মিনি স্টেডিয়ামে খেলাধুলার অনুকূল পরিবেশ না থাকার সুবাদে মাঠের আশপাশে নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের নির্মাণ সামগ্রীর স্তূপ পড়ে আছে। ২০১৭ সালের পর স্থানীয়ভাবে মাত্র ২-৩টি টুর্নামেন্ট ওই অনুষ্ঠিত হলেও পরবর্তীতে গত পাঁচ বছরে মাঠের অর্ধেক অংশে স্কুল পর্যায়ের ফুটবল টুর্নামেন্ট ব্যতিত তেমন কোনো বড় টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়নি।

স্থানীয় একটি ফুটবল একাডেমির সদস্যরা সকাল-বিকাল মাঠের একটি কোনে চর্চা করলেও মাঠজুড়ে খেলার সুযোগ নেই তাদের। মাঠটি সংস্কার না করায় উপজেলার ক্রীড়া অঙ্গন চলছে ধুকে ধুকে। ক্ষোভ বাড়ছে ক্রীড়া প্রেমীদের। তাদের দাবি ভবন ও মাঠ দ্রুত সংস্কার করে উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা সচল করে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করা হোক। স্টেডিয়ামের খেলোয়াড় ও চান্দিনা ফুটবল একাডেমির চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল বলেন- এই মাঠে খেলে বাদল রায়সহ অনেকে জাতীয় দল ও দেশসেরা টিমে চান্স পেয়েছে। অথচ স্টেডিয়াম দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে মাঠের ঘাস অনেক বড় হয়ে গেছে। মাঠের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে পরগাছা আবর্জনা উঠে ছোট্ট বন সৃষ্টি হয়েছে। এর পাশেই বাসা বাড়ির ময়লা ফেলে ভাগাড় তৈরি করেছে। যার জন্য খেলাধুলা করতে আমাদের অনেক সমস্যা হয়। ভালো ড্রেনেজ ব্যবস্থা নাই যার জন্য পানি জমে থাকে এবং সামান্য বৃষ্টিতেই মাঠে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। মাঠে খেলতে আসা খেলোয়াড়দের জন্য বিশুদ্ধ পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। আমাদের কোনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই। খেলোয়াড় আবির ও ইমরান অভিযোগ করে বলেন- বিকালে অনুশীলন করার মতো একটু নিরাপদ জায়গা নেই। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় স্টেডিয়ামের অবকাঠামো ও মাঠের অবস্থা নাজুক। মিনি স্টেডিয়ামটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।

স্থানীয়দের অভিযোগ- স্টেডিয়ামের চারপাশ দিন দিন এটা মাদকসেবীদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। সন্ধ্যার পরে স্টেডিয়ামের আশপাশে আনাগোনা বাড়ে তাদের। উপজেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠর নজরদারি দাবি জানান তারা। সচেতন মহল বলছেন, চান্দিনার একটি মাত্র স্টেডিয়াম রয়েছে। স্টেডিয়ামের বর্তমান যে পরিস্থিতি খেলাধুলার মতো পরিবেশ নেই। বড় বড় ঘাস, কাঁদা ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বাচ্চারা এসে যে খেলবে কিংবা কোনো খেলার আয়োজন হবে সেই পরিস্থিতি নেই। এখানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো সুদৃষ্টি নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নজর দিলে স্টেডিয়ামটা আবার প্রাণ ফিরে পাবে।

এ ব্যাপারে চান্দিনা সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিখিল চন্দ্র ভৌমিক জানান- বিষয়টি নিয়ে আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে একাধিকবার অবহিত করেছি। পৌরসভা থেকে মাঠটি সংস্কার করার কথা থাকলেও আজও হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আবারও কথা বলব। চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ আশরাফুল হক জানান- চান্দিনা ক্রীড়া সংস্থার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। জেলা ক্রীড়া সংস্থা বা অধিদপ্তর থেকে কোনো চিঠিও পাইনি। যার কারণে বরাদ্দ হচ্ছে না। স্থানীয় খেলোয়াড়রা আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। মাঠ উপযোগী করতে তাদের সবার্ত্মক সহযোগিতা করব।