প্রতিদিন লোকসান সাড়ে তিন কোটি টাকা
গ্যাস সংকটে ২৩ মাস ধরে বন্ধ যমুনা সার কারখানা
* উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অনুপ সিংহ বলেন, যমুনা সার কারখানার সারের গুণগত মান ভালো। আমাদের কৃষকেরা যমুনার সার জমিতে ব্যবহার করে। এতে ফসলের ফলন ভালো হয় ও গুণগত মান বৃদ্ধি পায়। আমদানিকৃত সারগুলো দীর্ঘদিন ধরে কারখানায় মজুদ রাখার কারণে এটির গুণগত মান অনেকটাই কমে যায়। ফলে কৃষক আমদানি করা সার শস্যখেতে ব্যবহার করতে চায় না। কৃষি ও কৃষকের কথা চিন্তা করে হলেও সার কারখানাটি চালুর প্রয়োজন
প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিদিন

গ্যাস সংকটে ২৩ মাস ধরে উৎপাদন বন্ধ হয়ে পড়ে আছে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার তারাকান্দিতে অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ দানাদার ইউরিয়া উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যমুনা সার কারখানা (জেএফসিএল)। এতে প্রতিদিন লোকসান হচ্ছে সাড়ে তিন কোটি টাকা। দীর্ঘদিন ধরে এই শিল্প কারখানাটি বন্ধ থাকায় মরিচা ধরে নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান যন্ত্রাংশ। ফলে আসন্ন বোরো মওসুমে ইউরিয়া সারের সংকট হতে পারে বলে মনে করছে কৃষকেরা। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে এই যমুনা সার কারখানাটি বন্ধ থাকার কারণে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে এ কারখানার সঙ্গে জড়িত ও বিভিন্ন পরিবহনের হাজার হাজার শ্রমিক পরিবার। অতি দ্রুত পুনরায় গ্যাস সংযোগ দিয়ে কারখানাটি চালু করে এ উপজেলার হাজার হাজার শ্রমিক পরিবারের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার দাবি জানান স্থানীয়রা।
কারখানা সূত্রে জানা যায়, ১৯৯১ সালে তারাকান্দি এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ দানাদার ইউরিয়া উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যমুনা সার কারখানা। এ কারখানাটি বাংলাদেশ রাসায়নিক শিল্প সংস্থা নিয়ন্ত্রণাধীন এবং কেপিআই-১ মানসম্পন্ন সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। কারখানার সঠিক উৎপাদনের জন্য প্রতিদিন গড়ে ৪২-৪৩ পিএসআই গ্যাসের প্রয়োজন হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কারখানাটি প্রতিদিন ১ হাজার ৭০০ টন সার উৎপাদন করছিল। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে গ্যাসের প্রেসার স্বল্পতা ও নানা ত্রুটির কারণে উৎপাদন কমে গিয়ে ১ হাজার ২০০ টনে নেমে আসে। এ কারখানা থেকে জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও উত্তরাঞ্চলের রাজবাড়ী ও উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলায় প্রায় আড়াই হাজার ডিলারের মাধ্যমে সার সরবরাহ করা হয়ে থাকে। গত ২০২৪ সালের ১৫ জানুয়ারি থেকে তিতাস কোম্পানি গ্যাসের প্রেসার কমিয়ে দেওয়ার কারণে উৎপাদন ও কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বেকার হয়ে পড়ে কারখানাসংশ্লিষ্ট শ্রমিক, কর্মচারী, পরিবহনের চালক, হেলপার, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও হোটেল মালিকরা।
এদিকে বন্ধ থাকার দীর্ঘ ১৩ মাস পর ২০২৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি গ্যাস সংযোগ পেয়ে আবার উৎপাদনে ফিরে কারখানাটি। উৎপাদন শুরুর ৪ দিনের মাথায় কারখানার অ্যামোনিয়া প্ল্যান্টে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বুধবার রাত ৭টার পর ফের উৎপাদন বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। তারপর থেকে বন্ধ রয়েছে বৃহৎ এ কারখানাটি। দীর্ঘ ২৩ মাস ধরে কারখানাটি বন্ধ থাকায় প্রতিদিন সাড়ে ৩ কোটি টাকা করে লোকসান হচ্ছে বলে জানান সিবিএ নেতারা। অতি দ্রুত গ্যাস সংযোগ দিয়ে দেশের বৃহৎ এ শিল্প কারখানাটি সচল করতে না পারলে এক সময়কার চিনি ও পাট শিল্পের মতো এ কারখানাটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানান স্থানীয়রা। এদিকে গত ১৫ আগস্ট বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান যমুনা সার কারখানা পরিদর্শন করতে এসে দ্রুতই পুনরায় গ্যাস সংযোগ দিয়ে কারখানা চালু করার আশ্বাস দেন। তবে আশ্বাস দেওয়ার ৩ মাস হলেও চালু হয়নি এ কারখানাটি।
যমুনা সার কারখানা এলাকার একাধিক শ্রমিক জানান, এ কারখানার সঙ্গে জড়িত শত শত ট্রাক, ট্যাঙ্ক ও লড়ি পরিবহন আছে। দীর্ঘদিন ধরে কারখানা বন্ধ থাকার কারণে আমরা শ্রমিকরা পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছি। কারখানা বন্ধ থাকলেও প্রতিদিন সকালে কারখানার সামনে এসে বসে থাকি চালুর আশায় ও কাজের আশায়। অধিকাংশ দিনই খালি হাতে বাড়িতে ফিরে যেতে হয়। কারখানা এভাবে বন্ধ থাকলে আমরা না খেতে পেরে মারা যাব।
যমুনা সারকারখানা শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন (সিবিএ) সাধারণ সম্পাদক মোরর্শেদ আলম তালুকদার বলেন, প্রায় ২ বছর ধরে কারখানাটি বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। এতে করে কারখানার ডিলারদের আমদানিকৃত সার সরবরাহ করা হচ্ছে। কারখানাটি চালুর বিষয়ে আমরা একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অনুপ সিংহ বলেন, যমুনা সার কারখানার সারের গুণগত মান ভালো। আমাদের কৃষকেরা যমুনার সার জমিতে ব্যবহার করে। এতে ফসলের ফলন ভালো হয় ও গুণগত মান বৃদ্ধি পায়। আমদানিকৃত সারগুলো দীর্ঘদিন ধরে কারখানায় মজুদ রাখার কারণে এটির গুণগত মান অনেকটাই কমে যায়। ফলে কৃষক আমদানি করা সার শস্যখেতে ব্যবহার করতে চায় না। কৃষি ও কৃষকের কথা চিন্তা করে হলেও সার কারখানাটি চালুর প্রয়োজন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) ব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) এসএম আব্দুল্লাহ আল মাসুদ মুঠোফোনে বলেন, গ্যাস সংযোগ দেওয়ার বিষয়ে তিতাস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। খুব তারাতাড়ি যমুনা সার কারখানায় পুনরায় গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে। যাতে আবার আগের মতো যমুনা সার কারখানা পুরোদমে উৎপাদনে ফিরতে পারে। আশা করি অতি দ্রুত বাস্তবায়ন হবে।
