১৮ বছরেও শেষ হয়নি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নির্মাণকাজ

* পরিত্যক্ত ভবনে ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা * ১০টি প্রথম শ্রেণির পদের মধ্যে ৮টি শূন্য

প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এনামুল হক, কাউখালী (পিরোজপুর)

পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যা উন্নীত করণের লক্ষ্যে পুরাতন হাসপাতাল ভবন অপসারণ করে ৫০ শয্যা উন্নীত করণের কাজ শুরু হওয়ার ১৮ বছরেও শেষ হয়নি ভবন নির্মাণ কাজ। কাউখালী উপজেলা, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও অবকাঠামো না থাকায় চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যহত। চিকিৎসা সেবার স্বার্থে দ্রুত প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি এলাকাবাসীর। প্রয়োজনীয় অবকাঠাম ও চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী না থাকায় সীমিত পরিসরে মেডিকেল অফিসার এবং কর্মচারী দিয়ে পরিতক্ত কোয়ার্টারে হাসপাতালের প্রশাসনিক কাজ এবং স্বাস্থ্য সেবার কাজ চলছে। পরিত্যাক্ত ভবনে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেবার কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এভাবে দীর্ঘমেয়াদি সেবার কার্যক্রম চালানোর ফলে রোগীরা উপর্যুক্ত চিকিৎসা সেবা সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

এছাড়া অস্থায়ী প্রশাসনিক ভবন ও আন্তঃবিভাগের ভবনে নানাবিধ সমস্যা থাকায় রোগীদের ভর্তি থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করা খুবই কষ্ট কর। চিকিৎসা সেবার স্বার্থে অবকাঠামো তৈরি করে চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নয়নে প্রয়োজণীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার দাবি করেছেন বলে জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার ইশতিয়াক আহমেদ। তিনি আরও জানান, ২০২৪ সালের ৩ এপ্রিল নির্বাহী প্রকৌশলীর পিরোজপুরের কার্যালয় থেকে এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে হাসপাতালে ডক্টরস্ কোয়ার্টার, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কোয়ার্টার এবং নার্স ডরমেটরি পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয়। নতুন কোনো ভবন না থাকায় পরিত্যাক্ত ভবনে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। পরিত্যাক্ত ডক্টরস্ কোয়ার্টারের ২য় তলায় চিকিৎসকরা বসবাস করে। বেশ কয়েকবার হঠাৎ করে চিকিৎসকরা উপস্থিত থাকা অবস্থায় ছাদ থেকে প্লাস্টার খসে পড়ার ঘটনাও ঘটেছে। বর্তমানে উক্ত কক্ষগুলো বসবাসের অনুপযোগী। বিকল্প অন্য কোনো ভবন না থাকায় বাধ্য হয়ে পরিত্যাক্ত ভবনে কর্মকর্তা কর্মচারীদের থাকতে হয়।

ডক্টরস্ কোয়াটারের তৃতীয় তলায় স্বাস্থ্য পরিদর্শকের কক্ষ, মাঠ পর্যায়ের শাখা, টিকা ভ্যাকসিন প্রদান কক্ষ, সভা কক্ষ হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তৃতীয় তলার জানালাসহ ফ্রেম সম্পূর্ণ খুলে পড়ে আছে। এছাড়া ২ ইউনিট বিশিষ্ট তৃতীয় শ্রেণির কোয়ার্টার ভবনে ল্যাবরেটরি শাখা এবং এক্স-রে কক্ষ হিসাবে ব্যবহৃত হইতেছে। কক্ষগুলোর অবস্থা এতই খারাপ যে, দীর্ঘমেয়াদি সেবার কার্যক্রম পরিচালনা করিলে যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটিতে পারে। এরআগে বিভিন্ন কক্ষের কয়েক স্থানে স্থানে ছাদ থেকে প্লাস্টার খসে পড়ার ঘটনা ঘটছে। অন্যদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন), জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি অ্যান্ড অবস্), জুনিয়র কনসালটেন্ট (এ্যানেস), মেডিকেল অফিসার, আবাসিক মেডিকেল অফিসার, ডেন্টাল সার্জন, ইউনানি মেডিকেল অফিসার হিসেবে প্রথম শ্রেণির ১০টি পদের মধ্যে ৮টি পদ শূন্য। এছাড়া তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের ৪৮টি পদের ১৭টি পদ শূন্য আছে। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ১৯টি পদের ১০টি শূন্য রয়েছে। এছাড়াও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিয়নের ৭৭টি পদের ৩৯টি পদ রয়েছে শূন্য। যার ফলে উপজেলার স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম ভেঙে পড়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে।

উল্লেখ্য, কাউখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভবন ১৮ বছর আগে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। ২০০৮ সালে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর টেন্ডারের মাধ্যম বরিশালের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মের্সাস নূর ই এন্টারপ্রাইজ প্রথম দফায় কাজ শুরু করেছিল।

অনিয়ম ফলে ২০২৫ সালের দুদক তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। দ্বিতীয়বার ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণের জন্য প্রায় ২৬ কোটির টাকার বরদ্দের কাজটি ২০২২ সালে মেসার্স কহিনুর এন্টারপ্রাইজ দাদপুর লজ কাউনিয়া সদর, বরিশালের অনুকুলে এইচইডি কর্তৃপক্ষ কার্যাদেশ প্রদান করে এবং ২৩ জুন ২০২৩ নির্ধারণ করে কাজ শেষ করার আদেশ দেওয়া হয়। অথচ ডাক্তার, নার্সদের আবাসিক ভবন, আংশিক কাজ করেন এবং হাসপাতাল মূল ভবনের কিছু পাইলিং পিলার তৈরি করে মোট কাজের মাত্র সামান্য কিছু কাজ করে ফেলে রাখলে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর তাদের কয়েক দফা সময় বৃদ্ধি করলেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ না করায় কর্তৃপক্ষ কার্যাদেশ বাতিল করে। পুনরায় টেন্ডার আহ্বান করতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে মর্মে বাতিল আদেশের বিরুদ্ধে রিট দায়ের করেন। যার ফলে সব কার্যক্রম স্থাগিত হয়ে যায়।

হাইকোর্টের মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় আজ পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পূর্ণ টেন্ডারের কোনো ব্যবস্থা করতে পারছে না। যার ফলে বর্তমানে বিভিন্ন ভবনের ছাদের ঢালাই আগের সেন্টারিং করা রডগুলো মরিচা পরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

একদিকে নির্মাণ কাজের বিভিন্ন মালামল নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে ডাক্তার, নার্স ও স্টাফদের বসার এবং থাকার ভবন সংকটের ফলে ডাক্তার এবং অন্যান্য কর্মচারীরা অনত্র বদলি হয়ে চলে যাওয়ার স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ফলে উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ বিষয় পিরোজপুর স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী তানজিলা ফেরদৌস সত্যতা স্বীকার করে জানান, হাইকোর্টের রিট পিটিশন নং ৩৯৩৪/২৪ নিষ্পত্তি হওয়ার পর অসম্পূর্ণ কাজ বাস্তবায়ন করা হবে।