শরীয়তপুরে আমনের ভালো ফলনে কৃষকের মুখে হাসি
প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
এসএম মজিবুর রহমান, শরীয়তপুর

গত কয়েক বছরে ভালো ফলাফল পাওয়া শরীয়তপুরে বাড়ছে রোপা আমন ধানের আবাদ। কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতায় জমির ধরন ও উপযোগিতা অনুযায়ী উফশীসহ উন্নত আগাম জাতের রোপা আমন চাষ করে ভালো ফলন পেয়ে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। এ মৌসুমে আবহাওয়া আমনের অনুকূলে থাকায় ফলও ভালো হয়েছে। এছাড়াও মসলা ফসলের সম্ভাবনাময় জেলা হওয়ায় কৃষক দ্রুত আমন ধান কেটে জমিতে পেঁয়াজ, রসুন, ধনিয়া, কালোজিরা আবাদ সহজতর হওয়ায় কৃষকরাও এদিকে ঝুঁকছেন। কৃষি বিভাগের তথ্যানুযায়ী এরইমধ্যে জেলার ৪৩ শতাংশ আমন কর্তন করে ফলন গোলায় তুলেছেন। জেলা কৃষি বিভাগের সূত্র জানিয়েছে, গত মৌসুমে জেলায় আমন আবাদ হয়েছিল পনের হাজার পাঁচশত পঞ্চাশ হেক্টর জমিতে। এবার জেলায় ১৬ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে রোপা ও ৭ হাজার ৮৯০ হেক্টরে বোনা আমনের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ব্রি ধান-৩৩, ৩৯, ৫২, ৭২, ৭৫, ৮৭, ১০৩, বিনা ধান-৭, ২২ সহ উফশী ৩০ জাত।
বোনা আমনের মধ্যে লক্ষীদিঘা, ঝিঙ্গাশাইল, লেহা গরচা ও সামনাসহ ২০টি স্থানীয় জাতের ধান। এরইমধ্যে জেলার ৪৩ শতাংশ আমন কর্তন হলেও আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে কর্তন সম্পন্ন হবে। রোপা আমনের ফলন পাওয়া যাচ্ছে হেক্টর প্রতি ৪.৩২-৪.৫৫ মেট্টিক টন ও বোনা আমানের ফলন ২.৪৫-২.৯ মেট্টিক টন পর্যন্ত। জেলার এবারের রোপা আমনের উৎপাদন লক্ষমাত্রা ৭১ হাজার ৬৮২ মেট্টিক টন ও বোনা আমনের ১৯ হাজার ১২৭ মেট্টিক টন। ভেদরগঞ্জ উপজেলার চরভাগা ইউনিয়নের ভুইয়াকান্দি গ্রামের কৃষক হুমায়ুন বেপারী, বলেন আমাদের এই অঞ্চলের অন্যতম অর্থকরি ফসল হচ্ছে আমন ধান। কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতায় গত ৫ বছর থেকে উচ্চ ফলনশীল জাতের রোপা আমন আবাদ করে আসছি। এবার এক একর জমিতে ব্রি-ধান-৮৭ ও ১০৩ জাতের ধান আবাদ করেছি। আবাদের পরে বৃষ্টি হওয়ায় ভালো ফলন হয়েছে। বিঘাপ্রতি ফলন পেয়েছি ১৮-১৯ মণ। আগাম জাতের রোপা আমন আবাদের ফলে আমরা খুব সহজেই ধনিয়া, কালোজিরা ও পেঁয়াজ, রসুন সহজে প্রথম মৌসুমেই আবাদ করতে পারছি। এতে আমরা মসলা ফসলের ফলনও ভালো পাচ্ছি। গোসাইরহাট উপজেলার কোদালপুর ইউনিয়নের দেওয়ানকান্দি গ্রামের কৃষক ফরিদ খান বলেন, কৃষি অফিস থেকে ব্রি-ধান ৭৫ এর বীজ ও সার পেয়ে ১ বিঘা জমিতে আবাদ করেছি। ফলন বেশ ভালো হয়েছে। ফলন পেয়েছি বিঘায় ১৭ মণ। এছাড়াও ব্রি-ধান-৪৯ জাতের আবাদ করেছি ৩ বিঘায়। এই ধানের ফলন হয়েছে বিঘায় ১৬ মণ।
শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোস্তফা কামাল হোসেন বলেন, জেলায় আমন উৎপাদন বৃদ্ধিকল্পে আমরা জমির শ্রেণিবিন্যাস করে সবচেয়ে লাগসই জাত আবাদে কৃষকদের প্রণোদনা, কারিগরি সহায়তা ও মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করে আসছি। এছাড়াও মসলা ফসলের সম্ভাবনাময় জেলা হিসেবে আমরা জমির ধরন অনুযায়ী আগাম জাতের রোপা আমন আবাদে সার্বিক সহায়তা ও মাঠ পর্যায়ে সহায়তা প্রদান করে আসছি। যাতে করে কৃষক দ্রুত আমন কর্তন করে মসলা ফসল আবাদ করতে পারেন। উৎপাদন ব্যয় কমাতে যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণেও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এবার আবহাওয়া আমনের অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো পেয়েছেন কৃষক।
