নদীতে মিলছে না বড় ইলিশ
* নদীতে ইলিশ কম পাওয়া যাচ্ছে তারপরও শতকরা ৯০ ভাগ ছোট * এক শ্রেণির অসাধু জেলেদের সংঘবদ্ধ চক্র শীতকালে জাটকা নিধনের জন্য চাঁদপুর অঞ্চলে আসে
প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
শওকত আলী, চাঁদপুর

চাঁদপুর নৌ-সীমানার পদ্মা-মেঘনায় মিলছে না বড় ইলিশ। যাও মিলছে ৯০ ভাগই পাওয়া যাচ্ছে ছোট ইলিশ। ইলিশের রাজধানী হিসেবে খ্যাত চাঁদপুরের পদ্মা মেঘনা নদীতে মিলছে না বড় সাইজের ইলিশ। যাও ধরা পড়ছে তাদের মধ্যে ছোট ইলিশ বেশি ধরা পড়ছে, যা চাঁদপুরের বাজারগুলোতে পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ তথ্য দিয়েছেন, নদী পাড়ের পাশাপাশি থাকা জেলে এবং ব্যবসায়ীরা। বড় ইলিশের দেখা কম মিলছে এবং ছোট ও মাঝারি আকারের ইলিশ মাছই বেশি পাওয়া যাচ্ছে। জেলেরা বড় ইলিশের পরিবর্তে জালে ছোট এবং মাঝারি আকারের মাছ বেশি পাচ্ছেন। ছোট মাছ বেশি ধরা পড়ার কারণে বড় ইলিশের সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম অনেক বেশি ।
এই পরিস্থিতিতে জেলেরা নদীতে নিষেধাজ্ঞা শেষেও কাঙ্ক্ষিত বড় মাছ না পাওয়ায় বাজারের ওপর প্রভাব ফেলছে। যদিও চাঁদপুরের এ দুই নদীতে ইলিশ কম পাওয়া যাচ্ছে তারপরও শতকরা ৯০ ভাগ ছোট ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। বড় ইলিশের দেখা মিলছে মাত্র শতকরা ১০ ভাগ। চাঁদপুরের বাজারগুলোতে ছোট ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে বেশি। বড় ইলিশ পাওয়া যেন দুষ্কর।
গতকাল সোমবার শহরের বড় স্টেশন ইলিশ মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশই ছোট আকারের ইলিশ। মৎস্য আড়তের বাজার থেকে বিভিন্ন ছোট বাজারগুলোতে ছোট ও মাঝারি ইলিশে আমদানি হচ্ছে। ২০০ গ্রাম থেকে শুরু করে ৪০০-৫০০ গ্রামের ইলিশের সংখ্যাই বেশি। এর কারণ হিসেবে জানা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পানির তাপমাত্রার বৃদ্ধি পাওয়াসহ বিভিন্ন কারনে। এতে করে প্রাণী জগতের জৈবিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাপমাত্রার কারণে মাছের পরিবর্তন আসে। পানির তাপমাত্রা বেড়ে গেলে মাছের এই পরিবর্তন দেখা দেয় বলে সংশ্লিষ্ট গবেষণা কর্মকর্তারা জানান। তারা বলছেন আকারে ছোট হলেও মাছ পরিপূর্ণতা রয়েছে ।
গবেষণায় দেখা গেছে ১০-২৫ সেন্টিমিটার ইলিশ ঝাটকা হিসেবে পরিণত হয়। এই ঝাটকা একসময় বড় হয়ে পরিপূর্ণ ইলিশে রূপান্তরিত হয়। ছোট মাছ ধরার কারণ হিসেবে নিষিদ্ধ সময়ে অবৈধ কারেন্ট জাল বা ছোট ফাঁসের জাল ব্যবহার করে মাছ ধরা। এ ছাড়া এক শ্রেণির অসাধু জেলেদের সংঘবদ্ধ চক্র শীতকালে জাটকা নিধনের জন্য চাঁদপুর অঞ্চলে আসে। যা ছোট ইলিশের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। পাশাপাশি প্রাকৃতিক কারণ, যেমন নদীতে জলের পরিমাণ কমে যাওয়া, জেলেদের ছোট মাছ ধরতে বাধ্য করা। নৌপুলিশ এবং কোস্টগার্ডের অভিযান থাকা সত্ত্বেও, কিছু অসাধু জেলেরা অবৈধভাবে ইলিশ ধরা থেকে বিরত থাকে না। নিষিদ্ধ নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর ডিমওয়ালা ইলিশ ধরা পড়ার ঘটনাও ঘটে। যা মাছের ভবিষ্যৎ বংশধরদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
জেলে মোবারক জানান, বড় মাছ দক্ষিণাঞ্চলের জেলেরা ধরে ফেলে। তাই আমাদের এখানে বড় মাছ পাওয়া যায় না। তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়েও এ সমস্যা রয়েছে। তারা জানান, অনেক জেলে টনিক জাল ব্যবহার করে ঝাটকা নিধন করছে। ইলিশ ব্যবসায়ী ও মৎস্য বনিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইউসুফ বন্দুকসী জানান, আগে অর্ধেক ছোট বড় ইলিশ পাওয়া যেত। শতকরা ৫০ ভাগ ছোট ও ৫০ ভাগ বড় ইলিশ এই ঘাটে উঠত। কিন্তু এখন ১০০ ভাগের মধ্যে ১০ ভাগও বড় ইলিশ পাওয়া যায় না। ৯০ ভাগেই ছোট ইলিশ পাওয়া যায়। ১০০ মণ ইলিশের মধ্যে ১০ মণ বড় ইলিশ পাওয়া যায়।
চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু কাওসার দিদার বলেন, ওয়াটার টেম্পারেচার হাই হয়ে গেলে মাছের চেইঞ্জ আসে। কিছু কিছু মাছ আরলি ম্যাচুইট হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমনটা হয়ে থাকে। তাছাড়া নদীর পানি দূষণ, বর্জ্য এবং সময়ে সময়ে নদীর স্রোতের গতি পরিবর্তন হওয়ায় এ অবস্থার অন্যতম কারণ।
ইলিশ গবেষক ডক্টর আনিসুর রহমান জানান, আজকের ঝটকা আগামী দিনের বড় ইলিশ। ছোট ছোট ইলিশ আমরা বড় হতে সুযোগ দিচ্ছি না। তিনি বলেন, সংরক্ষণ আইন প্রয়োগ জরুরি বলে আমি মনে করি। ইলিশ সুষম অবস্থা থেকে সরে আসছে। এর জন্য জলবায়ু পরিবর্তন, নদীর পানি দূষণ, অক্সিজেন সংকট, গতিপথ পরিবর্তন, জাটকা নিধন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য কারণ রয়েছে। অনেক সময় অপরিপূর্ণ ইলিশ ধরা, ঝটকা নিধনও কারণ রয়েছে।
