ঝিনাইদহে শিশুদের নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ার প্রকোপ

* এক মাসে মৃত্যু আট * জেলা হাসপাতালে ডাক্তার নার্স সংকট * প্রতিদিন বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছে দুই শতাধিক

প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

ঝিনাইদহ জেলায় ঋতু পরিবর্তনে শিশু নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন বহিঃবিভাগ ও ভর্তি শিশুর চিকিৎসা দিতে চিকিৎসকেরা হিমশিম খাচ্ছে। হাসপাতালটিতে শিশু ওয়ার্ডে ৪০টি বেডের বিপরীতে শতাধিকের বেশি রোগী ভর্তি করা হয়েছে। অনেকে বেড না পেয়ে মেঝেতে ঠান্ডার মধ্যে সেবা নিতে দেখা গেছে। চিকিৎসক ও সেবিকা সংকটের কারণে ও পর্যাপ্ত সেবা না পাওয়ার কারণে ভর্তিরত শিশুদের স্বজনেরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

ঠান্ডা আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত কারণে এ রোগ দেখা দিয়েছে বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানিয়েছেন। তবে চিকিৎসক ও সেবিকা সংকটে সেবা দিতে হিমশিম খাওয়ার কথা স্বীকার করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় গত মাসে ৮ শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঝিনাইদহে ঠান্ডাজনিত কারণে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া শিশু রোগীর সংখ্যা আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে ঋতু পরিবর্তনের কারণে শিশুরা ডায়রিয়া ও ঠান্ডাজনিত নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে ঝিনাইদহ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি।

গতকাল বুধবার ভর্তি শিশুর সংখ্যা শতাধিক ছাড়িয়ে ১২০ জনে দাঁড়িয়েছে। আর প্রতিদিন গড়ে ২ শতাধিক শিশু রোগীর বহিঃবিভাগে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। গতমাসে ৮ জন শিশুর নানা রোগে ও উপস্বর্গে মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়াও শৈলকুপাসহ প্রতিটা উপজেলাতে একই চিত্র দেখা গেছে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকাসহ লোক জনবলের কারণে এ সব উপজেলাতে শিশুরা সেবা ঠিকমতো পাচ্ছে না। এ জেলার একমাত্র ২৫০ শয্যা হাসপাতালে শিশুদের চিকিৎসার জন্য মাত্র ২ জন শিশু বিশেষজ্ঞ রয়েছে। যার কারণে ভর্তিরত ও বহিঃবিভাগে তাদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সরকারিভাবে ৪০টি বেডের বিপরীতে এতো রোগীর ভর্তি হওয়ার কারণে ঠান্ডার ভিতরে মেঝেতে শুয়ে শিশুরা চিকিৎসা নিচ্ছে। একদিকে মানসম্মত সেবা পাচ্ছে না রোগীরা আবার অন্যদিকে সরকারি ওষুধ দিতে না পারার কারণে তাদেরকে বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে এমন অভিযোগ স্বজনদের।

বর্তমানে হাসপাতালটিতে দুজন শিশু বিশেষজ্ঞ কর্মরত থাকলেও পর্যাপ্ত সেবিকা ও মেডিকেল অফিসার না থাকার কারণে শিশুদের চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না বলে রোগীর স্বজনেরা আরও অভিযোগ করেছেন। সেবিকারা জানান, সেবিকা সংকটসহ প্রতিদিন শত শত ভর্তি রোগীর সেবা দেওয়ার জন্য মাত্র ২জন সেবিকা ডিউটি করে। সে কারণে তারাও ঠিকমতো সেবা দিতে পারে না বলে জানান।

শিশু বিশেজ্ঞরা জানান, ঋতু পরিবর্তনের কারণে শিশু রোগীর চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের বহিঃবিভাগ ও ভর্তিরত রোগীর সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। মাত্র ২ জন চিকিৎসক দিয়ে কখনই পর্যাপ্ত সেবা দেওয়া সম্ভব না। তবে ঠান্ডা ও নিউমোনিয়া রোগ থেকে রক্ষা পেতে নানা পরামর্শ দেন শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আনোয়ারুল ইসলাম।

এ বিষয়ে হাসপাতালের তত্বাবধায়ক মোস্তাফিজুর রহমান নানা সমস্যার কথা স্বীকার করে জানান, চিকিৎসক ও সেবিকাসহ সকল পদেই সংকট রয়েছে। লোক জনবল নিয়োগ না দিলে এতো রোগীর চাপ সামলিয়ে সেবা দেওয়া সম্ভব নয়।