আমন ধানের ফলন ভালো হলেও দাম কম

প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  শরীফ উদ্দীন, চুয়াডাঙ্গা

চুয়াডাঙ্গায় এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। মাঠে-ঘাটে-উঠানে সোনা রঙের ধান হাসছে। তবে শ্রমে-ঘামে ফলান ধান নিয়ে বাজারে গিয়ে কৃষকের হাসি মলিন হচ্ছে। ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া কৃষকের জীবনে অতিপরিচিত ঘটনা। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। শীতের সকালের সূর্য ওঠার আগেই কাস্তে হাতে মাঠে ছুটছেন কৃষক। চুয়াডাঙ্গার জেলাজুড়ে চলছে আমন জাতের ধান কাটা ও মাড়াই, বিক্রি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।

এ বছর বড় দুর্যোগ না হওয়ায় আশানুরূপ ফলনও হয়েছে। জেলার বাজারগুলোতে উঠতে শুরু করেছে মৌসুমের নতুন ধান। প্রতি মণ ধানের দাম মিলছে ৯৫০-১০৫০ টাকা পর্যন্ত। তবে কৃষকরা বলছেন, এ মৌসুমে উৎপাদন ভালো হলেও বাজারে ধানের দাম খুবই কম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত চাল মজুদ থাকায় এ বছর ধানের দাম অন্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলায় মাঠে মাঠে চলছে এখন আমন ধান কাটার উৎসব। পুরোদমে চলছে মাড়াই এবং নতুন ধান ঘরে তোলার কর্মযজ্ঞ। বিনা ধান ১৭, ব্রি ধান ৭৫ ও ব্রি ধান ১০৩ এর ভালো ফলন হয়েছে জেলার চারটি উপজেলাতে। প্রতি বিঘা জমিতে অন্তত ২৪-২৬ মণ পর্যন্ত ধানের ফলন হয়েছে এ বছর। এলাকার প্রান্তিক ও বর্গাচাষিরা ঋণ পরিশোধ ও দৈনন্দিন খরচের মেটাতে মৌসুমের শুরুতেই বাজারে ৯৫০-১০৫০ টাকা মণে ধান বিক্রি করছেন। বীজ, সার, কীটনাশক, ডিজেলসহ কৃষি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধিতে যে পরিমাণ খরচ হয়েছে, তাতে নতুন ধান বিক্রি করে উৎপাদন খরচও উঠছে না, দাবি কৃষকদের। তারা বলেন- বিঘাপ্রতি ১২-১৩ হাজার টাকা মালিককে দিলাম, পানি ৪ হাজার টাকা, চাষ-রোপণ-কর্তনের খরচ দিয়ে আমাদের আয় আসছে না বলে কৃষকরা জানান।

এ বছর আমন ধানের ফলন ভালো হয়েছে। তবে গত মাসে যে বৃষ্টি হয়েছে তাতে তাদের ধানে অনেক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টির কারণে জমিতে পানি জমে যাওয়ায় ধান কাটতে কষ্ট হচ্ছে। তারা ধানের পেছনে যে খরচ করছেন সেই খরচ তুলতে পারছেন না ধান বিক্রি করে। চুয়াডাঙ্গা জেলার বাজারগুলোতে মোটা ধান বিক্রি হচ্ছে ৯৫০-৯৮০ টাকার মধ্যে। চিকন ধানের মধ্যে স্বর্ণা, রঞ্জিত বিক্রি হচ্ছে ১০৫০-১১০০ টাকা। আর চিকন জাতের পাইজাম ধান বিক্রি হচ্ছে ১১০০-১২৫০ টাকার মধ্যে, যা পরবর্তীতে চলে যাচ্ছে কুষ্টিয়াসহ আশপাশের বড় বড় মিল মালিকদের কাছে। কার্পাসডাঙ্গার কৃষক শাহিন মিয়া বলেন, প্রতি এক বিঘা জমিতে অন্তত ২৪-২৬ মণ ধান হয়েছে। এখন বর্তমান বাজারে ৯৫০ টাকা মণ। চলিত মৌসুমী এক বিঘা জমিতে বর্গা নিয়ে আবাদ করে খরচ প্রায় ১৮ থেকে ২২ হাজার টাকা। এতে বিঘাপ্রতি দুই থেকে তিন হাজার টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে। নিজের পরিশ্রম ও মজুরি ছাড়াই এই লোকসান হচ্ছে। চলতি আমন মৌসুমে ধান কাটতে শ্রমিক সংকটে পড়েন কার্পাসডাঙ্গা কৃষকরা। দ্বিগুণ পারিশ্রমিক দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

কুড়ুলগাছি গ্রামের কৃষক জাকার আলী বলেন, ‘এ মৌসুমে সার-বীজ ও কীটনাশকের দাম অনেক বেশি ছিল। যে দামে ধান বিক্রি করছি তাতে খরচের টাকা উঠছে না। এ বছর আমন চাষে আমাদের লোকসান হবে।’ ধান ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে ধানের যে বাজার দর এতে করে কৃষকের লাভ হচ্ছে না। মোকাম থেকে যে দাম নির্ধারণ করে দেয় আমরা সেই দামে ধান কিনতে বাধ্য। আগে যে ধান বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ পর্যন্ত এ বছর সেই ধানের দাম পাওয়া যাচ্ছে না। চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, ‘এ মৌসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোগবালাই কম থাকায় আমন ধানের ফলন ভালো হয়েছে। চলতি মৌসুমে চুয়াডাঙ্গা জেলার চারটি উপজেলায় ৩৬ হাজার ৭৮১ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ করা হয়েছে। এর থেকে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ২৯ হাজার ৫৪৬ টন। আমন আগাম কর্তন করার ফলে সেই জমিতে কৃষকরা শীতকালীন স্বল্প মেয়াদের ফসল ভুট্টা, গম, সরিষা আবাদ করে বাড়তি আয় করতে পারবে কৃষকরা আমরা এ বিষয়ে কৃষকদের নানা ধরনের সহায়তা দিয়ে সাহায্য করে যাচ্ছি বলে জানান কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা।