ডিভাইডার ভেঙে মহাসড়ক পারাপার, বাড়ছে ঝুঁকি
* পথচারীদের ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে বাধ্য করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ নিচু বিভাজনের ওপর কোথাও এক থেকে ২০০ মিটার জুড়ে লোহার গ্রিল দেয়। কিন্তু স্থানীয়রা রাতের অন্ধকারে ওই গ্রিল ভেঙে যাতায়াতের পথ নিশ্চিত করে। আর অসচেতন পথচারী দিন-রাত ওই ভাঙা গ্রিল দিয়েই মহাসড়ক পারাপার হয়
প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ওসমান গনি, চান্দিনা (কুমিল্লা)

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মতো দ্রুতগতির সড়কে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ডিভাইডার গ্রিল। কিন্তু কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বাগুর বাস স্টেশনের কাছে এক শ্রেণির পথচারী পাশের ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে সড়কের ডিভাইডারের গ্রিল ভেঙে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়ক পার হচ্ছে। সেখানকার বিভাজনের গ্রিল ভেঙে ফেলায় এখন চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা। যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। অধিকাংশ মানুষই মহাসড়কে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করছে না। মৃত্যুঝুঁকি জেনেও মহাসড়কের বিভাজন অতিক্রম করে পারাপার হচ্ছে। অনেক স্টেশন এলাকায় যাত্রী পারাপারের কারণে দ্রুতগামী দূরপাল্লার যানবাহনগুলো ব্রেক কষতে হচ্ছে। যার ফলে প্রায়ই দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
পথচারীদের ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে বাধ্য করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ নিচু বিভাজনের ওপর কোথাও এক থেকে দুইশ’ মিটার জুড়ে লোহার গ্রিল দেয়। কিন্তু স্থানীয়রা রাতের অন্ধকারে ওই গ্রিল ভেঙে যাতায়াতের পথ নিশ্চিত করে। আর অসচেতন পথচারী দিন-রাত ওই ভাঙা গ্রিল দিয়েই মহাসড়ক পারাপার হয়। কুমিল্লা সড়ক বিভাগ বলছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের ১০৫ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন ব্যস্ত এলাকায় ৫৪টি ফুটওভার ব্রিজ রয়েছে। প্রতিটি ব্রিজ নির্মাণে সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু মানুষ সেসব ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে প্রাণ হারানোর ভয়কে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে বিভাজনের ওপর দিয়ে মহাসড়ক পারাপার হচ্ছে। এতে প্রায়ই ঘটছে ভয়াবহ দুর্ঘটনা, প্রাণ হারাচ্ছেন মানুষ, কেউ বা চিরতরে হচ্ছেন পঙ্গু।
হাইওয়ে পুলিশের তথ্যমতে, গত ৯ মাসে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৪৬৫টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে নিহত হয়েছেন ২৮৪ জন। পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন ৫০৯ জন। রাস্তা পার হতে গিয়ে গাড়ির চাপায় প্রাণ গেছে অনেকের। সরেজমিনে দেখা গেছে, কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মাধাইয়া বাস স্টেশনে রয়েছে একটি ফুটওভার ব্রিজ। কোটি টাকা ব্যয়ে ফুটওভার ব্রিজটি নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। কিন্তু এই ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে একজনকেও পারাপার হতে দেখা যায়নি। ফুটওভার ব্রিজটি মাত্র ১০০ ফুটের মধ্যে নিচু বিভাজন ও বিভাজনের কাটা অংশ থাকায় সব বয়সের নারী-পুরুষ ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়ক পারাপার হচ্ছেন। চান্দিনা-বাগুর বাস স্টেশনটি জেলার অতিগুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান। চান্দিনা-দেবীদ্বার, বরুড়া উপজেলার এবং বুড়িচং উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের বাসিন্দারা ওই স্টেশনটি ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে। স্টেশনে থাকা ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার নিশ্চিত করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ উভয়পাশে অন্তত ২০০ মিটার লোহার উঁচু গ্রিল স্থাপন করেন। কিন্তু রাতের অন্ধকারে ওই গ্রিলের লোহা ভেঙে ফেলে স্থানীয়রা। আর ওই ভাঙা অংশেই প্রতিদিন যাতায়াত করছে হাজারো পথচারী। যার ফলে ওই স্টেশনটিতে যানজট নিত্য সঙ্গী। এছাড়া মহাসড়কের ইলিয়টগঞ্জ, কুটুম্বপুর, গোবিন্দপুর, নিমসার অংশের ফুটওভার ব্রিজগুলো ব্যবহারই হচ্ছে না। গত ১৯ নভেম্বর মহাসড়কের কুটুম্বপুর স্ট্যান্ডে ফুটওভার ব্রিজ থাকা সত্ত্বেও নিচ দিয়ে পারাপারের সময় দ্রুতগতির বাসের ধাক্কায় ড্রাম ট্রাক চালকের মৃত্যু ঘটে। মাধাইয়া বাসস্ট্যান্ড ও চান্দিনা বাসস্ট্যান্ডে কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। অথচ পাশেই ফুটওভার ব্রিজ।
জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়ে সড়ক পারাপার হওয়া এসব মানুষদের কেউ অসুস্থতার অজুহাতে, কেউ সময় বাঁচাতে, কেউ আবার অভ্যাস থেকেই দ্রুতগতির গাড়ির সামনেই সড়ক পার হতে দেখা গেছে। স্কুলছাত্র হৃদয় হোসেন জানায়, ফুটওভার ব্রিজে ওঠাণ্ডনামা করা অনেক কষ্টের। তাই লোহার গ্রিলের ভাঙা অংশ দিয়ে যাতায়াত করি। বিল্লাল হোসেন নামের এক পথচারী বলেন, আমরা সবসময় মহাসড়ক অতিক্রম করে যাতায়াত করতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। প্রতিদিন ৪-৫ বার মহাসড়ক অতিক্রম করে বাজারে ও বাড়িতে আসা-যাওয়া করতে হয়। প্রতিবার এতো উঁচু ব্রিজে উঠব কীভাবে? সচেতন মহল বলছেন, মানুষকে একটি নিয়মের মধ্যে আনার চেষ্টা করতে হবে সবক্ষেত্রে। এজন্য প্রয়োজন সবার সদিচ্ছা। মানুষকে সচেতন করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে মহাসড়কে। চান্দিনার মহিচাইল শহিদ জিয়াউর রহমান কলেজের অধ্যক্ষ আবু তাহের বলেন, সম্ভবত আমরাই একমাত্র জাতি যারা মৃত্যুর তোয়াক্কা না করেই মহাসড়কে নিজেকে বিলিয়ে দেই। সড়ক পারাপারের জন্য সরকার ফুটওভার ব্রিজ করে দিয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পারাপার না হয়ে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি রুহুল আমিন বলেন, মহাসড়কে রাস্তা পারাপারে মানুষকে সচেতন হতে হবে। এর বিকল্প কিছু নেই। পুলিশের হাতে যে ক্ষমতা রয়েছে আমরা সেটাকে ব্যবহার করে মানুষকে ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে পারাপারে উদ্বুদ্ধ করছি। কিন্তু পথ যারা ব্যবহার করেন প্রত্যেককে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কুমিল্লা নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা বলেন, আমরা ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে বাধ্য করতে অধিকাংশ জায়গার নিচু বিভাজনে লোহার গ্রিল দিয়েছি। তারপরও অসচেতন মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিভাজন অতিক্রম করে বা লোহার গ্রিল ভেঙে যাতায়াত করছে। জনগণ সচেতন না হলে ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়ক পারাপার বন্ধ হবে না।
