পরিত্যক্ত ছাত্রাবাস একযুগেও সংস্কার হয়নি
প্রকাশ : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
সাজ্জাদ হোসেন, মুরাদনগর (কুমিল্লা)

কুমিল্লার মুরাদনগর ডি.আর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ছাত্রাবাস ভবনটি গত এক যুগ ধরে স্থানীয়দের জন্য চরম উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে অযত্ন ও অবহেলায় পড়ে থাকায় এই ভবনটি এখন কেবল একটি জরাজীর্ণ কাঠামো নয়, এটি এখন পরিণত হয়েছে একটি বিপজ্জনক মরণফাঁদে। ভবনটি যে কোন মুহূর্তে ধসে পড়ে বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সাধারণ মানুষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, মুরাদনগর উপজেলা সদরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই ভবনটির করুণ দশা পরিলক্ষিত হয়।
ছাত্রাবাসটি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহারের অনুপযোগী অবস্থায় পড়ে আছে। এর দেয়ালের পলেস্তারা বড় অংশজুড়ে খসে পড়েছে, কংক্রিটের ছাদ ও প্রধান বিমগুলোতে বড় বড় ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির জল জমে ও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভবনের ভেতরের পরিবেশ অত্যন্ত স্যাঁতসেঁতে এবং ভুতুড়ে রূপ নিয়েছে।
এরই মধ্যে রাতের অন্ধকারে দুর্বৃত্তরা ভবনের অধিকাংশ দরজা ও জানালার লোহার গ্রিল চুরি করে নিয়ে গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিত্যক্ত এই ভবনটি এখন শুধু কাঠামোগত ঝুঁকিতেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি সামাজিক নিরাপত্তার জন্যও হুমকি সৃষ্টি করছে।
সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই ভবনটি মাদক সেবীদের অবাধ বিচরণক্ষেত্র ও আড্ডা স্থলে পরিণত হয়। এর ফলে এলাকায় মাদকাসক্তি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে। দিনের বেলায়ও এই জরাজীর্ণ ভবনটি পার্শ্ববর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী এবং সাধারণ পথচারীদের মনে আতঙ্ক তৈরি করছে।
ছাত্রাবাস ভবনটির অবস্থান অত্যন্ত জনবহুল ও সংবেদনশীল এলাকায়। এটির পাশেই রয়েছে মুরাদনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং নুরুন্নাহার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। এছাড়াও, মুরাদনগর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারটিও এই ভবনের খুব কাছেই অবস্থিত।
এর ফলে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী প্রতিদিন এই ঝুঁকিপূর্ণ কাঠামোর পাশ দিয়ে যাতায়াত করে।
বিদ্যালয়গুলোর খেলার মাঠে খেলাধুলা দেখতে আসা অে ক্ষক ময়নাল হোসেন সরকার অবিলম্বে এই সমস্যার সমাধানে জোর দিয়েছেন। তিনি মত প্রকাশ করেন যে, ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যদি ভবনটি সামান্য নক দর্শকই অসচেতনভাবে এই পরিত্যক্ত ভবনের বিপজ্জনক ছাদে উঠে ভিড় করেন।
শিশুরা খেলতে খেলতে প্রায়শই ভবনের ভেতরে ঢুকে পড়ে, যেখানে ভাঙা ইট, গভীর গর্ত এবং ধসের ঝুঁকি রয়েছে।
অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, উপজেলা সদরের এত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের এমন চরম ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা দীর্ঘ এক যুগ ধরে এভাবে ফেলে রাখা প্রশাসনের চরম উদাসীনতাকেই নির্দেশ করে।
মুরাদনগর ডি.আর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিসংস্কারে ব্যবহার যোগ্য না হয়, তবে বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় ঘটার আগেই দ্রুত এটি ভেঙে ফেলা উচিত। অন্যদিকে, মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবদুর রহমান এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়ে বলেন, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন জানালে দ্রুত একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
