ভাঙা সেতু দিয়ে চলাচল ধসে পড়ার আশঙ্কা
প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ইমরান হোসেন, নড়াইল

নড়াইলে লাহুড়িয়া ইউনিয়নের ঝামারঘোপ খালের ওপর নির্মিত এ সেতুটি এখন এলাকার মানুষের জন্য আতঙ্কের নাম।
পাঁচ থেকে সাত বছর আগে আংশিক ভেঙে পড়লেও মেরামতের উদ্যোগ না থাকায় সেতুটি দিন দিন আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দুই জেলার সীমানায় অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ এ সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন নড়াইল ও মাগুরার কয়েক হাজার মানুষ চলাচল করে। কয়েক বছর ধরে সেতুর একপ্রান্তে অর্ধেক জায়গাজুড়ে ধসে যেতে থাকে। ধীরে ধীরে পুরো জায়গায় গর্ত হয়ে ভেতরের রড বের হয়ে পড়ে। চার বছর আগে একটি ট্রাক চলতে গিয়ে হেলে পড়ে সেতুটি। এরপর স্থানীয় লোকেরা গর্ত হওয়া স্থানে কয়েকটি কাঠের বড় তক্তা দিয়ে ইজিবাইক, ভ্যান আর কৃষিপণ্য ঘোড়ার গাড়িতে পারাপার করছেন। নসিমন আর ভটভটি চললে কাঁপতে থাকে সেতুটি, তবুও বাধ্য হয়েই ভয়ে ভয়ে চলছে সেতুর পারাপার।
গ্রামের হাজারো মানুষ আতঙ্ক আর ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। স্কুলগামী শিক্ষার্থী, কৃষক, দিনমজুর, এমনকি অসুস্থ রোগীকেও এ ভাঙা সেতু পার হয়ে যেতে হয়। যে কোনো সময় ভেঙে ধসে পড়ে প্রাণহানি ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। তলদেশের অবস্থা আরো করুন। ইটের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা সেতুর নিচের দুটো গার্ডার এর একটি ধসে একদিকে হেলে পড়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে স্থানীয় সরকার বিভাগের উদ্যোগে ঝামারঘোপ খালের ওপর নির্মিত হয় ১৩ মিটার দৈর্ঘ্যরে ছোট এ সেতুটি। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের এলজিইডি জানিয়েছেন অনুমোদন পেয়েছি, আগামী এক মাসের মধ্যেই সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হবে। খলিশাখালি গ্রামে এক ব্যবসায়ী বলেন, সেতু ভাঙার কারণে মাগুরা জেলা থেকে মিঠাপুর হাটে যেতে গেলে ৮ কিলোমিটার নোহাটা ঘুরে মিঠাপুর হাটে যেতে হয়। এ দুর্দশা কেউ দেখে না। কষ্টের শেষ নেই আমাদের।
স্থানীয় অনেকে কৃষক বলেন, নিজেরাই চলাচলের জন্য কাঠ দিয়েছি। মাঠ থেকে ধান কেটে ঘোড়ার গাড়িতে নিতে হয় বাড়িতে। অনেক সময় গর্তে চাকা আটকে পড়ে। ভয় হয়, কখন যে ভেঙে নিচে পড়ে যাই, তবুও যেতে হয়। কতো নেতা আসে যায় এই ভাঙা সেতুর কাজ করে না। অনেক নেতা এসে দেখে চলে যাই, তারপর আর খবর থাকে না। ঝামারঘোপ কালিনগর গ্রামে থেকে খলিশাখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা বলে, শিক্ষার্থীরা ভয়ে ভয়ে সেতু পার হয়ে স্কুলে যায়। স্কুলে যাওয়ার সময় খুব ভয় লাগে। নিচে তাকালে মনে হয় পড়ে যাব। প্রতিদিন ভয় লাগে, কিন্তু যাওয়ার আর কোনো পথ নেই। অনেক সময় ভ্যান যেতে চায় না তখন হেঁটে স্কুলে যেতে হয় স্কুলে।
ইউপি সদস্য শাহিন মিয়া বলেন, ঝামারঘোপ কালিনগর এলাকার ১০০-১৫০ ছাত্রছাত্রী ঝুঁকি নিয়ে খলিশাখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের যায়। এ এলাকা থেকে রোগী মাগুরা নিয়ে যেতে হলে ২০ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। বছরের পর বছর ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করা এ মানুষগুলো এখন একটাই প্রত্যাশা করছে, দ্রুত সম্ভব নতুন সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হোক, যাতে তাদের এ ভোগান্তি ও ভয়াবহ ঝুঁকির অবসান ঘটে। এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার ইকরামুল কবির বলেন, সম্প্রতি নড়াইল প্রকল্প থেকে অনুমোদন পেয়েছি, আশা করছি যে আগামী এক মাসের ভিতরেই ব্রিজের নির্মাণ কাজটি শুরু করতে পারব। আগামী এক বছরের মধ্যে আশা করছি কাজটি শেষ হবে।
