ঝোপ-জঙ্গলে ভরে গেছে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ
সংরক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণের দাবি
প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
শাহজালাল ভূঞা, ফেনী

পরশুরামের পৌর এলাকার সলিয়া মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভটি দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে অযত্ন-অবহেলায়। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে বীরত্ব প্রদর্শন করেন এখানকার মুক্তিযোদ্ধারা। শহিদ হন ৩৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেন শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধাদের এই বীরত্বকে স্মরণ রাখতে ফেনীর পরশুরামণ্ডছাগলনাইয়া সড়কের পাশে পরশুরাম পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামে নির্মিত হয় এ স্মৃতিস্তম্ভ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অযত্ন-অবহেলায় স্মৃতিস্তম্ভটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি হিসেবে বিলোনিয়ায় স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য গণপূর্ত বিভাগ ২০০৯ সালে ৫০ লাখ ৩৯ হাজার টাকা বরাদ্ধ দেয়। ২০১০ সালে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয় অমি এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম মজুমদারের নেতৃত্বে কয়েকজন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা স্থান পরিবর্তনের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরশুরাম পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামে স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ করা হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, স্মৃতিস্তম্ভটি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে লতাণ্ডগুল্ম আর ঝোপ-জঙ্গলে ভরে গেছে। বখাটে, মাদক ও নেশাখোরদের আড্ডা খানায় পরিণত হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের এই স্মৃতিচিহ্ন। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভের বেহাল দশায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিন খোন্দকার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ঝোপ-জঙ্গলে ভরে গেছে স্মৃতিস্তম্ভটি। বখাটে, মাদক ও নেশাখোরদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভটি। প্রতিবছর মহান বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবস এলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। তবে এ বছর বনজঙ্গলে ভরে যাওয়াতে স্মৃতিস্তম্ভে সাপের ভয়ে ভিতরেও ঢুকার সাহস হয় না। ফেনীর উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের যদ্ধকালিন এরিয়া কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাক হানাদার বাহিনীর সংঘর্ষ হয়েছে।
পাকিস্তানি ১২০ জনকে মুক্তিযোদ্ধারা হত্যা করে। সারা দেশে ১৪টি স্থানের সম্মুখ সমরের যুদ্ধের মধ্যে সলিয়া অন্যতম। এছাড়াও শুভপুরে সম্মুখ যুদ্ধ হয়। পাক হানাদার বাহিনী ৩ নভেম্বর বিমানে বোমাবর্ষণ করে অসংখ্য বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমন একটি স্মৃতি বিজড়িত স্মৃতিস্তম্ভ অযত্নে অবহেলা পড়ে আছে এটি আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে খুবই লজ্জিত। মুক্তিযোদ্ধা আবদুল গোফরান বলেন, বর্তমান জেলা প্রশাসক মনিরা হকের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি স্মৃতিস্তম্ভটির বন জঙ্গল পরিষ্কার করে যেন দৃষ্টিনন্দন করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল ফেনী জেলা ইউনিটের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নাছের চৌধুরী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্মৃতিসৌধটি মুক্তিযুদ্ধের সময় সম্মুখ যুদ্ধে শহিদ হওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে নির্মিত হয়েছিল। এটি কেবল একটি স্তম্ভ নয়, এটি বীরদের আত্মত্যাগের প্রতীক। ০যারা মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে শহিদদের স্মৃতিবিজরিত সৃতিস্তম্ভটি এমন বেহল দশা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক। এটি রক্ষণাবেক্ষণ খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।
আবু নাছের চৌধুরী বলেন, বিলোনিয়ার সম্মুখ যুদ্ধের কলাকৌশল বিভিন্ন দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে শেখানো হয়। গৌরবময় এ স্মৃতি রক্ষার্থে নির্মিত স্তম্ভটি আমাদের জন্য খুবই জরুরি। তবে এটি অব্যবস্থাপনায় পরিত্যক্ত ও মাদকসেবীদের আড্ডায় পরিণত হওয়া খুবই কষ্টকর বিষয়।
