মেডিকেলে চান্স পাওয়া জান্নাতের পাশে দাঁড়ালেন তারেক রহমান

প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নোয়াখালী প্রতিনিধি

অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবাকে হারিয়ে চরম দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করেও অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার জান্নাতুল আরফিন। তার সংগ্রামী জীবনের গল্প গণমাধ্যমে প্রকাশের পর তার পাশে দাঁড়িয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল সোমবার বিকালে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে জান্নাতুল আরফিনের পরিবারের কাছে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক। এরআগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘মেডিকেলে চান্স পেয়ে দুশ্চিন্তায় জান্নাত’ শিরোনামে জান্নাতুল আরফিনের জীবন সংগ্রামের সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি তারেক রহমানের নজরে এলে তিনি জান্নাতের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নেন।

জান্নাতুল আরফিন নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার ডুমুরিয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কইয়াজলা গ্রামের আনসার আলী ভুঁইয়া বাড়ির মৃত আব্দুল ওয়াদুদ ও শাহিদা আক্তার দম্পতির বড় সন্তান। তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় জান্নাত। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবার মৃত্যু হলে পরিবারের ওপর নেমে আসে চরম অনিশ্চয়তা। মায়ের পরিশ্রম আর শিক্ষকদের সহযোগিতা আজ সে এখানে।

চার সন্তানকে মানুষ করতে একাই সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন জান্নাতের মা শাহিদা আক্তার। সংসার ও সন্তানদের পড়াশোনা চালাতে তিনি বাড়িতে সেলাইয়ের কাজ, টিউশনি এবং আত্মীয়দের সহযোগিতার ওপর নির্ভর করেন। বড় মেয়ের পড়াশোনার খরচ জোগাতে ২০২৩ সালে স্বামীর রেখে যাওয়া মাত্র পাঁচ শতাংশ ধানের জমি তিন লাখ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হন তিনি। জানা গেছে, জান্নাতুল আরফিন নোয়াখালীর গাজীরহাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি উত্তীর্ণ হন। আর্থিক সংকটে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশোনা অনিশ্চিত হয়ে পড়লেও আত্মীয়দের সহায়তায় তিনি ফেনীর জিয়া মহিলা কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকেও জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন তিনি।

এইচএসসি শেষে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে প্রথম দফায় কোচিং বাবদ প্রায় ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। প্রথমবার প্রত্যাশিত ফল না পেয়ে হতাশ হলেও তিনি হাল ছাড়েননি। পরে আবার চট্টগ্রামে কোচিংয়ে ভর্তি হয়ে আরও প্রায় ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করেন। অবশেষে কঠোর পরিশ্রম ও অদম্য মানসিকতার ফল হিসেবে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষায় ৪ হাজার মধ্যে ৪১তম স্থান অর্জন করে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পান জান্নাতুল আরফিন। তবে ভর্তি, বইপত্র ও অন্যান্য খরচ নিয়ে নতুন করে দুশ্চিন্তায় পড়ে পরিবারটি। জান্নাতের মা শাহিদা আক্তার বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর খুব কষ্টের মধ্যে দিন কেটেছে। তবুও মেয়েকে কখনও হাল ছাড়তে দিইনি। আল্লাহর রহমতে সে আজ মেডিকেলে সুযোগ পেয়েছে। আজ তারেক রহমানের প্রতিনিধি হয়ে জয়নুল আবদিন ফারুক আমাদের বাড়িতে এসেছেন, এর জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।

নিজের অনুভূতি জানিয়ে জান্নাতুল আরফিন বলেন, স্বপ্নের মেডিকেলে চান্স পাওয়ায় আল্লাহর দরবারে লাখো কোটি শুকরিয়া। মা বলেন একেই তার ত্যাগ আমাকে বারবার লড়াই করতে শিখিয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমার খোঁজ নিয়েছেন এ জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। তিনি পাশে থেকে সহযোগিতা করার কথা জানিয়েছেন। ভবিষ্যতে একজন মানবিক চিকিৎসক হয়ে দরিদ্র ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই। সবার কাছে দোয়া চাই।

এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, প্রত্যন্ত গ্রামের খবরও লন্ডনে অবস্থানরত আমাদের নেতা তারেক রহমানের কাছে পৌঁছে গেছে। তিনি আমাদের এলাকার সন্তান জান্নাতুল আরফিনের পাশে দাঁড়িয়েছেন এটি আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। বর্তমানে আচরণবিধি অনুযায়ী কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নির্বাচন শেষে আমরা তার সব দায়িত্ব গ্রহণ করব। আমার দুইটি মেয়ে আছে। আজ থেকে জান্নাত আমার আরেকটি মেয়ে। পিতৃহারা জান্নাত একদিন অনেক বড় হবে, ইনশাআল্লাহ। আমরা সবাই তার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য দোয়া করি।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- সেনবাগ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মুক্তার হোসেন পাটোয়ারী, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবদুল্লাহ আল মামুন, যুগ্ম আহ্বায়ক মিয়া মো. ইলিয়াস, সেনবাগ উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব সাহাব উদ্দিন রাসেল, পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সহিদ উল্যাহ, উপজেলা মহিলা দলের সভানেত্রী সুফিয়া আক্তার মনি, ডুমুরিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জসিম উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুকসহ স্থানীয় নেতারা।