চুয়াডাঙ্গায় ১০ বছরে কৃষিজমি কমেছে পাঁচ হাজার হেক্টর

প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  শরীফ উদ্দীন, চুয়াডাঙ্গা

চুয়াডাঙ্গা শহরের দৌলতদিয়া-আলুকদিয়া সড়কের দুই পাশে এক সময় দিগন্তজোড়া ধানখেত দেখা যেত। এখন সেই দৃশ্য অনেকটাই অপরিচিত। অর্ধেকের বেশি ফসলি জমি হাতবদল হয়ে গেছে। নতুন ক্রেতারা কৃষিজমি কিনে সেখানে বাণিজ্যিক স্থাপনা, কলকারখানা, ইটভাটা ও বসতবাড়ি নির্মাণ করছেন। এ অবস্থা শুধু সদর উপজেলায় নয়, পুরো জেলার একই চিত্র। এসব কারণে জেলার কৃষিজমির পরিমাণ ক্রমেই কমছে। চুয়াডাঙ্গা জেলায় গত এক দশকে অন্তত ৫ হাজার হেক্টর ফসলি জমি কমেছে। চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আবাদি জমি ছিল ৯৯ হাজার ৪৮১ হেক্টর, যা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নেমে দাঁড়িয়েছে ৯৪ হাজার ২২০ হেক্টরে। অর্থাৎ এক দশকে আবাদি জমি কমেছে ৫ হাজার ২৬১ হেক্টর। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে কৃষিজমির পরিমাণ ছিল ৯৯ হাজার ৪৮১ হেক্টর। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কমে দাঁড়ায় ৯৮ হাজার ৭৪০ হেক্টর। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিল ৯৮ হাজার ৪০০ হেক্টর। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আরও কমে দাঁড়ায় ৯৮ হাজার ২৭৪ হেক্টরে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দাঁড়ায় ৯৭ হাজার ৫৭৩ হেক্টর। ২০২০-২১ অর্থবছরে নেমে আসে ৯৭ হাজার ৭৯ হেক্টরে। ২০২১-২২ অর্থবছরে জমির পরিমাণ হয় ৯৬ হাজার ৩৫৩ হেক্টর। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কমে দাঁড়ায় ৯৫ হাজার ৬৩৯ হেক্টর। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে হয় ৯৪ হাজার ৯২৭ হেক্টর। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নেমে আসে ৯৪ হাজার ২২০ হেক্টরে।

সদর উপজেলার আলুকদিয়া গ্রামের কৃষক শাহাবুল ইসলাম বলেন, জমির দাম ও রেজিস্ট্রার খরচ কম হওয়ায় জমি সহজে হাতবদল হচ্ছে। এ সুযোগে একটা মহল কৃষি জমি কিনে কলকারখানা করছে। কৃষিজমি বিক্রি বন্ধে কঠোর আইন হওয়া উচিত। আলুকদিয়া গ্রামের অন্য কৃষক মজিদ মিয়া বলেন, ‘আগে এই মাঠগুলোতে শুধু ধান, সবজি ও তুলা হতো। কিন্তু এখন ঘরবাড়ি আর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। কৃষি জমি না থাকায় চাষাবাদও কমছে। ঝোড়াঘাটা গ্রামের কৃষক কাশেম আলী জানান, মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে আমাদের চোখের সামনে উর্বর জমি নষ্ট হয়ে গেল। এসব জমিতে আগে ধান, মাষকলাই, পেঁয়াজসহ সব ফসল হতো। এখন এসব জমিতে শুধু বিল্ডিং উঠেছে।

হুচুকপাড়া গ্রামের কৃষক মুজিবুল হক বলেন, ১০ বছর আগেও ভালাইপুর মোড়ে প্রচুর ধানখেত ছিল। এখন শুধু দালানকোঠা। চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, ‘আবাদি জমি কমে গেলে খাদ্যঘাটতি দেখা দেবে। উৎপাদনও কমছে। আমরা লক্ষ্য করেছি, জেলার বিভিন্ন মাঠে ধান খেতের জায়গায় কলকারখানা ও কংক্রিটের দালান নির্মাণ করা হচ্ছে। জমি বিক্রি না করার জন্য আমরা কৃষকদের সচেতন করার চেষ্টা করছি। এ ছাড়া জমি কমে যাওয়ার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে একই জমিতে বছরে ৩-৪ বার চাষের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।