শোকে স্তব্ধ সারাদেশ
প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক

বিএনপি চেয়ারপারসন ও বাংলাদেশের তিনবারের সফল প্রধানমন্ত্রী আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে দেশজুড়ে শোক বিরাজ করছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে মৃত্যুর খবর প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীসহ দেশের আপামর জনতার মধ্যে নেমে আসে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের নেত্রীকে হারানোর নীরবতা। জেলা-উপজেলাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন, কোরআন খতম, দোয়া মাহফিল ও শোকসভার আয়োজন করা হয়।
ফেনী : বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকের ছায়া বিরাজ করছে তার নিজ জেলা ফেনীতে। গতকাল সকাল থেকে ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ শ্রীপুরস্থ বেগম জিয়ার পৈতৃক বাড়ির মসজিদের মাইকে শোক সংবাদ প্রচার করা হয়। তার আত্মার মাগফেরাত কামনায় কোরআন খতমের আয়োজন করা হয়। খালেদা জিয়ার চাচাতো ভাই শামীম মজুমদার বলেন, এ বাড়ির সঙ্গে তার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। তার মৃত্যুর খবরে সকলে ভেঙে পড়েছে। আমাদের আশা ছিল এবারও তিনি সুস্থ হয়ে আবার এই বাড়ির আঙিনায় পা রাখবেন। কিন্তু সকালের একটি সংবাদে সবকিছু চিরদিনের জন্য ম্লান হয়ে গেছে। বাড়িতে আসলে তিনি বড়দের যেমন শ্রদ্ধা করতেন। তেমনি ছোটদের অনেক বেশি আদর করতেন। দলীয় নেতাকর্মীরা বলেন, ফেনীর সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার আত্মার সম্পর্ক ছিল। দলীয় যে কোনো কর্মসূচিতে ফেনীতে এলেই তিনি ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ শ্রীপুরের মজুমদার বাড়ির পৈতৃক বাড়িতে যেতেন। তাই অভিভাবক হারানোর বেদনায় শোকে কাঁদছে সর্বস্তরের মানুষ।
তারা জানান, বেগম জিয়ার বাবার বাড়ির দিঘির পাশে বেগম খালেদা জিয়ার নিজ হাতে লাগানো নিম গাছটি, ঘরের ভেতর বসার চেয়ারটি, ছোট্ট সেই খাট কিংবা খাবারের টেবিল সবকিছুতেই যেন লেগে আছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেজা জিয়ার হাতের ছোঁয়া। জানা গেছে, সর্বশেষ ২০০৮ সালেও ফেনীর ফুলগাজীতে বাবার বাড়িতে এসে দাদা সালামত আলী মজুমদারের কবর জিয়ারত করে শুরু করেন নির্বাচনি প্রচারণা। খালেদা জিয়ার চাচাতো ভাই জাহিদ হোসেন মজুমদার বলেন, খালেদা জিয়াকে হারিয়ে আমরা শোকে মুহ্যমান। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের একটা চাবি। নির্মম জেল জুলুমেও তিনি দেশ ছেড়ে যাননি। খালেদা জিয়া ছিলেন এ মাটির সন্তান। তার চলে যাওয়ার অপূরণীয় ক্ষতি।
তিনি আরও জানান, বাড়ির পাশেই দিঘির মাছ খুব পছন্দ করতেন বেগম জিয়া। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর হেলিকপ্টার যোগে ফেনীতে আসেন তিনি। তাকে বহন করা হেলিকপ্টারটিকে আধা ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে দিঘির মাছ নিয়ে ঢাকায় ফেরেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। এছাড়াও বাড়ির প্রতিটি ধূলিকণার সঙ্গে মিশে আছে বেগম জিয়ার হাজারো স্মৃতি। বাড়ির পাশে সান বাঁধানো ঘাটে বসে গল্প করতেন ভাইদের সঙ্গে। একজন প্রধানমন্ত্রী হয়েও খুব সাদাসিধে জীবনযাপন করতেন তিনি। গ্রামের আব্দুল আলিম বলেন, তিনি শুধু আমাদের গর্ব নন তিনি বাংলাদেশের বাতিঘর ছিলেন। তাকে হারিয়ে পুরো এলাকাবাসী শোকে স্তব্ধ। নিজ পৈতৃক নিবাসে জনসাধারণের জন্য বেগম জিয়া নির্মাণ করেছেন মাদ্রাসা, মসজিদ, স্কুল-কলেজসহ বহু স্থাপনা। বেগম জিয়ার মৃত্যুতে ফুলগাজীসহ ফেনী জেলাজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
বগুড়া : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান ও অশ্রুসিক্ত পুরো বগুড়া। কান্নায় ভেঙে পড়ছেন জেলা বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বগুড়া জেলা যুবদলের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কথা বলার মতো শক্তি কারো আছে কি না আমার জানা নেই। আজকে সারা বাংলাদেশের মানুষ কাঁদছে। সারা বাংলাদেশ কাঁদছে। আমি এই মুহূর্তে বেশি কিছু বলতে পারছি না।
আলী আজগর তালুকদার হেনা বলেন, দেশের ইতিহাসের অর্ধেক অংশই বেগম খালেদা জিয়া। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন থেকে গণতন্ত্র উত্তোরণের জন্য, দেশ পরিচালনার জন্য এবং দেশের মানুষের জন্য বেগম খালেদা জিয়া যে কাজগুলো করে গেছেন সেগুলো স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। বাংলাদেশের দলমত নির্বিশেষে সব পর্যায়ের বেগম খালেদা জিয়াকে শ্রদ্ধা করতেন। তার কথায় অনেক জটিল সমস্যার সমাধান হয়ে যেতো। আমাদের আশা ছিল, দেশবাসীর আশা ছিল বেগম খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে ফিরে এসে দেশের এই ক্রান্তিকাল থেকে উত্তোরণের জন্য আমাদের পরামর্শ দেবেন। কিন্তু আমরা তাকে হারিয়ে ফেললাম। জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা বলেন, আমরা আজকে গণতন্ত্রের মাকে হারালাম। আমাদের অভিভাবক হারালাম। আমাদের দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের ঐক্যের প্রতীককে হারালাম। জেলা বিএনপির সভাপতি আরও বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে যে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে সেটি আমরা পালন করব। এরইমধ্যে বগুড়া জেলার বিভিন্ন এতিমখানা ও মাদ্রাসায় কোরআন খতম চলছে।
কক্সবাজার : বাংলাদেশের রাজনীতির অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজার (জেইউসি) নেতারা। সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নুরুল ইসলাম হেলালী সাধারণ সম্পাদক এসএম জাফর এক শোক বিবৃতিতে জানান বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন দীর্ঘ গণতান্ত্রিক সংগ্রামের একজন আপসহীন নেতা। তিনি বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রতীক এবং একজন সাহসী নারী নেতৃত্বের উদাহরণ।
শোকবার্তায় উল্লেখ করা হয়, বেগম খালেদা জিয়া দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তার রাজনৈতিক জীবন বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে। সাংবাদিক ইউনিয়ন বিবৃতিতে জানায়, বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থাকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে উদ্বেগ ও আবেগ বিরাজ করছে। এ প্রেক্ষাপটে সংগঠনটি মহান আল্লাহর কাছে তার জন্য রুহের মাগফিরাত কামনা এবং তার পরিবার ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানায়। শোকবার্তায় আরও বলা হয়, বেগম খালেদা জিয়ার মতো একজন অভিজ্ঞ ও ত্যাগী রাজনীতিকের অবদান দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
চাঁদপুর : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে চাঁদপুর জেলাজুড়ে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার মৃত্যু সম্পর্কে খবর পাওয়া মাত্রই জেলা বিএনপি কার্যালয় এবং সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে শোকাহত ভারি আবহ সৃষ্টি হয়। গতকাল সকালে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নেয় জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকসহ দলীয় নেতাকর্মীরা। বেগম জিয়ার মৃত্যুর খবরের পর জেলা বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতারা কালো ব্যাজ ধারণ ও দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। দলীয় কার্যালয়সহ নানা স্থানেই পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া মাহফিল ও শোক বইয়ে স্বাক্ষরসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। যেখানে দলীয় নেতাকর্মীরা তাদের নেত্রীর জীবনী স্মৃতিচারণ করেন। জেলা বিএনপি সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক বলেন, আমাদের নেত্রী একজন আপোষহীন, নির্ভীক রাজনীতিক ও দেশপ্রেমিক নেতা ছিলেন। তার চলে যাওয়ায় দেশ একজন অভিভাবককে হারিয়েছে। এই শূন্যতা সহজে পূরণ হবে না।
গোপালগঞ্জ : বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গোপালগঞ্জে কোরআন খতম ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার ও গোবিপ্রবি ট্রেজারার। বেগম জিয়ার মৃত্যু খবর শোনার পর দলীয় কর্যালয়ে হাজির হন নেতাকর্মীরা। পরে নতুন বাজার সুপার মার্কেটের দোতলায় বিএনপি কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন করে দলটি। পরে সেখানে বেগম জিয়ার রুহের মাগফেরাত কামনায় কোরআনখানি খতম করা হয়। এরপর বেগম জিয়ার রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। বেগম জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন গোটা বিএনপি পরিবার। এ সময় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শরীফ রফিকউজ্জামান, গোপালগঞ্জ-২ আসনের প্রার্থী ডাক্তার কেএম বাবর, অ্যাডভোকেট তৌফিকুল ইসলাম, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম লেলিন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন হিরা, জেলা যুবদলের সভাপতি রিয়াজ উদ্দিনসহ দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার। বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিরবিদায়ে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ থেকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সোহেল হাসান ও ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজমুল আহসান শোক প্রকাশ করেন এবং তর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। গোপালগঞ্জ-২ আসনের বিএনপি প্রার্থী ডা. কেএম বাবর বলেন, গণতন্ত্রের মা খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে তা পূর্ণ করা সম্ভব নয়। তারপরেও আমরা শোককে শক্তিতে রুপান্তর করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। তার সুযোগ্য পুত্র তারেক রহমান বিএনপির হাল ধরে গণতন্ত্র সমুন্নত রাখবেন। গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শরীফ রফিকউজ্জামান বলেন, আজীবন আপোসহীন থাকা বেগম জিয়ার মুত্যতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত।
টাঙ্গাইল : বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সারাদেশের ন্যায় টাঙ্গাইলেও নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া। দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যেও বিরাজ করছে শোকের মাতম। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে টাঙ্গাইল জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নেতাকর্মীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। অনেকেই তার মৃত্যুতে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে উল্লেখ করেন। তার আত্মার মাগফিরাত কামনায় টাঙ্গাইলে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে কোরআন খতম, দোয়া মাহফিল, কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাজ ধারণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ও টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনে দলটির মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। তিনি মরহুমার রূহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং সবার নিকট তার বিদেহী আত্মার জন্য দোয়া চান। সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর কার্যালয়ে সকাল থেকে কোরআন খতম করা হয়। সেখানে ১২ জন হাফেজ সকাল থেকে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করেন। পরে তার আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও টাঙ্গাইল পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ড ও বিভিন্ন ইউনিয়নে কোরআন তিলাওয়াত ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা বলেন, আপসহীন নেত্রী হিসেবে পরিচিত বেগম খালেদা জিয়া দেশের গণতন্ত্র রক্ষায় আজীবন সংগ্রাম করেছেন। তার মৃত্যুতে দেশ একজন অভিভাবককে হারাল, যার শূন্যতা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। তারা মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট মরহুমার জন্য জান্নাতুল ফেরদৌস কামনা করেন।
যশোর : সাবেক তিনবারের সফল প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ যশোরবাসী। জাতির এই মহান অভিভাবকের মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়া মাত্রই শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন তারা। দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যে চলছে শোকের মাতম। জেলা বিএনপি কার্যালয়ে শুরু হয়েছে শোকের কর্মসূচি। দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার পাশাপাশি কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। শোকাহত যশোরবাসী যার যার অবস্থান থেকে আপসহীন দেশমাতার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামানায় প্রার্থনা করেন। দলীয় প্রধানের মৃত্যু সংবাদে জেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন দলটির নেতৃত্ব। সেখানে দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি শোকাহত সাধারন মানুষও জড়ো হন। দলীয় কার্যালয়ে চলছে শোকের কর্মসূচি শুরু হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পরই সেখানে কোরআন খতম শুরু হয়। সেখানে উপস্থিত দলের ভাইস অধ্যাপক নার্গিস বেগমসহ দলীয় নেতাকর্মীরা কালো ব্যাচ ধারণ করেন। এর আগে জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু এবং সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন দলীয় এবং কালো পতাকা উত্তোলন করেন। সেখানে শোক বই রাখা হয়েছে। অধ্যাপক নার্গিস বেগম নিজে শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন। এছাড়া জেলা বিএনপি অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
নড়াইল : বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে নড়াইলে কোরআন খতম ও বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সকালে নড়াইল জেলা বিএনপির আয়োজনে দলীয় কার্যালয়ে এই কর্মসূচি পালিত হয়। দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন নড়াইল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মনিরুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার রিজভী জজ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব মো. আরিফুজ্জামান মিলনসহ বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। সকালে পবিত্র কোরআন খতম শেষে বেগম খালেদা জিয়ার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এ সময় বক্তারা বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী। তার মৃত্যুতে দেশের এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো। মোনাজাতে মরহুমার রুহের মাগফেরাত কামনাসহ দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় বিশেষ প্রার্থনা করা হয়।
জয়পুরহাট : বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সারাদেশের ন্যায় জয়পুরহাটেও নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া। খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে জয়পুরহাট জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নেতাকর্মীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। অনেকেই একে দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে উল্লেখ করেন। মরহুমার আত্মার মাগফেরাত কামনায় জয়পুরহাটে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে কোরআন খতম, দোয়া মাহফিল, কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাজ ধারণের মতো কর্মসূচি পালন করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন, বিএনপির রাজশাহীর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এএইচএম ওবায়দুর রহমান চন্দন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফয়সাল আলিম, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলজার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও ধানের শীষের প্রার্থী মাসুদ রানা প্রধান, যুগ্ম আহ্বায়ক এমএ ওহাব, জয়পুরহাট-২ আসনের সাবেক এমপি, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক সেলিম রেজা ডিউক, সদস্য সচিব মনজুরে মওলা পলাশ, জেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক এটিএম শাহনেওয়াজ কবির শুভ্র, সাবেক সদস্য সচিব মুক্তাদুল হক আদনান, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মামুনুর রশীদ প্রধান। আজ দুপুরে দলীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত করেছে নেতাকর্মীরা।
সাতক্ষীরা সাতক্ষীরায় কোরআন খতম ও দোয়া মহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল জেলা শহরের উত্তর কাটিয়ার হালিমা খাতুন শিশু সদন ও জেলা বিএনপির সভাপতির কার্যালয়ে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। কর্মসূচিতে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহমতুল্লাহ পলাশ, সদস্য সচিব আবু জাহিদ ডাবলু, যুগ্ম আহ্বায়ক আবু হাসান হাদিসহ জেলা বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। দলীয় সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সকাল থেকেই কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীদের ভিড় জমতে থাকে। পরে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা, কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাজ ধারণের মধ্য দিয়ে শোক কর্মসূচি পালন করা হয়। এরপর মরহুমার রুহের মাগফেরাত কামনা করে কোরআন খতম ও দোয়া করা হয়। আলোচনা সভায় নেতারা বলেন, বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন আপসহীন ও সংগ্রামী নেত্রী। গণতন্ত্র রক্ষায় তার ভূমিকা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তার মৃত্যুতে দেশ এক অপূরণীয় ক্ষতির মুখে পড়েছে। জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সাত দিনব্যাপী কোরআন খতম, দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
পিরোজপুর : বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে পিরোজপুরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। গতকাল সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে নেতাকর্মীরা জেলা বিএনপির কার্যালয়ে জড়ো হন। জেলা কার্যালয়ে কোরআন খতম ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় নেতাকর্মীদের চোখে অশ্রু দেখা যায়। জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সালাউদ্দিন তালুকদার কুমার বলেন, আমরা আজ অভিভাবকহারা। শুধু আমরা না, পুরো জাতি অভিভাবক হারা হয়ে গেছে। জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাইদুল ইসলাম কিসমত বলেন, পুরো জাতি আজ শোকাহত। তার জীবনের আদর্শ যেন আমরা দলের নগণ্য কর্মী হিসেবে গ্রহণ করতে পারি। এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ছারছীনা শরীফের পীর ও জমইয়াতে হিযবুল্লাহর আমির আলহাজ মাওলানা মুফতি শাহ্ আবু নছর নেছারুদ্দীন আহমদ হুসাইন। শোকবার্তায় তিনি খালেদা জিয়াকে একজন আপসহীন ও দৃঢ়চেতা নেত্রী হিসেবে উল্লেখ করেন। তার নির্দেশে দেশের তিন হাজারের বেশি দ্বীনিয়া মাদ্রাসায় কোরআন খতম ও খতমে তাহলিল অনুষ্ঠিত হয়।
রাজবাড়ী : বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজবাড়ীতে শোক পালন করেছে জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলো। গতকাল মঙ্গলবার আজাদী ময়দানে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে নেতাকর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করেন। এরপর বেগম খালেদা জিয়ার আত্মার শান্তি কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। জেলা বিএনপির কার্যালয়ে শোকবই খোলা হলে নেতাকর্মীরা সেখানে স্বাক্ষর ও মন্তব্য করেন। সকাল থেকেই কোরআন খতম কর্মসূচি পালন করা হয়। বিকালে রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী হারুন-অর-রশিদসহ জেলা বিএনপির নেতারা শোকবইয়ে স্বাক্ষর করেন। বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যু বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক গভীর শূন্যতা সৃষ্টি করেছে, যা কোনো দিন পূরণ হবে না।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : জেলা বিএনপি শোকসভা, কোরআন খতম ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে পুনিয়াউট এলাকায় জেলা বিএনপির কার্যালয়ে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। নেতাকর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করেন।
ভোলা : ভোলায় জেলা বিএনপির উদ্যোগে কোরআন খতম ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা জেলা বিএনপি কার্যালয়ে কোরআন খতম করেন।
