তিতির শোভাবর্ধনকারী গৃহপালিত পাখি হলেও বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে পালনের যথেষ্ট সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে। এ সুযোগ নিয়ে ফরিদপুরে গড়ে উঠেছে তিতির পাখির খামার। এ খামারকে কেন্দ্র করে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে তিন নারী-পুরুষের। তারা খামারে কাজ করে সংসারের সচ্ছলতা ফেরাচ্ছেন। গত বছর থেকে করোনা মহামারি ও লকডাউনের কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছেন খামারি। সরকারি সহযোগিতা না পাওয়ায় এ খামারি হতাশ। তিতিরের খাদ্য ও উৎপাদন খরচ কম। তাই তিতির পালন লাভজনক। এর মাংস ও ডিম সুস্বাদু। খাওয়াও হালাল। তিতির খুব শান্ত। ফরিদপুর শহরতলীর গঙ্গাবর্দিতে বাণিজ্যিকভাবে বিশাল একটি খামার গড়ে তুলেছেন মো. শাজাহান মোল্লা। বর্তমানে তার খামারে বড় আকারের প্রায় ১ হাজার তিতির পাখি আছে। এখান থেকে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ ডিম উৎপাদন হচ্ছে। এ ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদন করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়। স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের খামারিদের একদিনের বাচ্চা দিয়ে সহযোগিতা করেন মো. শাজাহান মোল্লা। খামার শুরু করার প্রথম কয়েক বছর ভালোই লাভবান হচ্ছিলেন এ খামারি। তবে গত বছর থেকে করোনা মহামারির কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছেন তিনি। খামারের উৎপাদিত ডিম থেকে সময়মতো বাচ্চা উৎপাদন করতে না পেরে এবং উৎপাদিত বাচ্চা বিক্রয় করতে না পেরে ক্ষতির মুখে পড়েছেন তিনি। সরকার করোনাকালীন সময়ে প্রতিটি সেক্টরে প্রণোদনা দিলেও তিতির পাখির খামারিদের সহযোগিতা না করায় হতাশ হয়েছেন তিনি। প্রতিটি বাচ্চার উৎপাদন খরচ পড়ে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। আর বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১১০ টাকা। বর্তমানে বাচ্চার দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। এতে তার উৎপাদন খরচই উঠছে না। তিতির খামার মালিক মো. শাজাহান মোল্লা বলেন, খামার করে ভালোই ছিলাম। গত বছর থেকে করোনার কারণে ক্ষতির মধ্যে পড়ে গেছি। ঠিকমতো বাচ্চা বিক্রয় করতে পারছি না। সরকার বিভিন্ন সেক্টরে প্রণোদনা দিলেও আমরা এখন পর্যন্ত কোনো সহযোগিতা পাইনি। সরকারের সহযোগিতা ছাড়া এ খামার টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। সরকার যেমন অন্যদের প্রণোদনা দিয়েছে, তেমনি তিতির খামারিদের প্রণোদনার আওতায় আনলে আমরা উপকৃত হবো। খামারে কর্মরত শ্রমিক আশিক ও রাজেন জানান, আগে তারা ভালোই ছিলেন। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বাচ্চা কিনতে খামারিরা আসতেন। বাচ্চা বিক্রি করে খামার মালিকও ভালো ছিলেন। কিন্তু গত ১ বছরের বেশি সময় ধরে বাচ্চা বিক্রি হচ্ছে না। তাই বেতন দেওয়া যাচ্ছে না। মালিকের সঙ্গে কর্মীরাও সমস্যার মধ্যে রয়েছেন। ফরিদপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নুরুল্লাহ্ মো. আহসান বলেন, করোনার কারণে খামারিরা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তিতির পাখির খামারের জন্য কোনো প্রণোদনা আসেনি। ফলে তিতির খামারিকে প্রণোদনার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। তবে আগামীতে আমাদের এডিডিপি প্রকল্পের উৎপাদক গ্রুপের মাধ্যমে সহযোগিতা করা হবে। এছাড়াও আমরা এসব খামার নিয়মিত পরিদর্শন ও ভ্যাক্সিন কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি।