ঠাকুরগাঁওয়ে সমতল ভূমিতে চা চাষ
১৯১ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ
প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০ | অনলাইন সংস্করণ
জয়নাল আবেদিন বাবুল, ঠাকুরগাঁও

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পর এবার সদর উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে চা চাষ। সমতল ভূমিতে পরীক্ষামূলক চা চাষে সুফল পাওয়ায় এখন বাণিজ্যিকভাবে এর উৎপাদন বেড়েছে। অল্প পরিশ্রমে এবং কম সময়ে চা চাষে সাফল্য পাওয়ায় খুশি চাষিরা। সদর উপজেলার গড়েয়া, জগন্নাথপুর ও বিলপাড়াসহ কয়েকটি এলাকায় কৃষকরা গড়ে তুলেছেন চা বাগান। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, জেলায় ১৯১ হেক্টর জমিতে চা চাষ হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি চাষ হচ্ছে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় ১৭৯ হেক্টর জমিতে। সেখানে চা চাষে সফল হয়েছেন কৃষকরা। এখন শুরু হয়েছে সদর উপজেলায়। এরই মধ্যে ৯ হেক্টর জমিতে চা চাষ হয়েছে। সদর উপজেলার গড়েয়া ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল হান্নান জানান, বছর দুয়েক আগে দুই বিঘা জমিতে চারা রোপণ করেন। পরের বছর থেকে পাতা তোলা শুরু হয়। এ বছর প্রথম রাউ?ন্ডে ৩০ হাজার টাকার চা পাতা বিক্রি করেছেন। বাগান থেকে বছরে ৬ থেকে ৭ বার চা পাতা তুলতে পারেন বলে জানান এ কৃষক। জগন্নাথপুর এলাকার চাষি হরিবর্ধন রায় বলেন, চা চাষ মানেই উঁচু টিলা বা পাহাড়ি এলাকা বলেই জানে মানুষ। কিন্তু আমরা সমতল ভূমিতে চা চাষে সফল হচ্ছি। অল্প পুঁজিতে সহজ ও লাভজনক চা চাষে কম সময়ে বেশি অর্থ উপার্জন সম্ভব। তাই চা চাষে আমাদের আগ্রহ বেড়েছে। কৃষক নুর হোসেন বলেন, চা বোর্ডের সহযোগিতা ও পরামর্শে তিনি চার একর জমিতে চা চাষ করেছেন। প্রতিকেজি ২৫ টাকা দরে চা পাতা বিক্রি করে ৬২,৫০০ টাকা পেয়েছেন। আমাদের এখন বড় সমস্যা, উৎপাদিত চা পাতা পঞ্চগড়ে নিয়ে বিক্রি করতে হয়। ঠাকুরগাঁও শহরে চা প্রসেসিং সেন্টার চালু করলে আমাদের পরিবহন খরচ কম হবে। এতে আমরা লাভবান হব, পাশাপাশি এলাকায় চা চাষ আরও বাড়বে। বিলপাড়া এলাকার চাষি খলিলুর রহমান বলেন, চারা লাগানোর দুই বছর পর থেকে চা পাতা পাওয়া যায়। একটি চায়ের গাছ ৮০ থেকে ৯০ বছর পর্যন্ত বাঁচে। বাগানের চা শ্রমিকরা জানান, অফ সিজনে গ্রামে কাজ থাকে না। এখন চায়ের বাগানে কাজ করে তারা খুব ভালো আছেন। প্রত্যেকে প্রতি দিন ২০০ থেকে ২৫০ টাকা মজুরি পান। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, চা একটি অর্থনৈতিক ফসল। চা শিল্প দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সদর উপজেলার সমতল এলাকায় চা চাষে মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তনের পাশাপাশি বেকার ও শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবু হোসেন বলেন, সমতল ভূমিতে চা চাষের জন্য সদর উপজেলা একটি সম্ভাবনাময় এলাকা। চায়ের চাষ করে কৃষকরা অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছেন। চায়ের গাছে রোগ-বালাই কম এবং ফসলটি তুলনামূলকভাবে লাভজনক হওয়ায় দিন দিন চা চাষে ঝুঁকছেন কৃষক। মাটি ও আবহাওয়া উপযোগী হওয়ায় এ জেলায় চা চাষের বড় সম্ভাবনা দেখছে কৃষি বিভাগ।
