ঢাকা রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

অরক্ষিত হাকালুকি হাওর

সুরক্ষায় ব্যবস্থা নিন
অরক্ষিত হাকালুকি হাওর

এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকি ক্রমাগত হয়ে পড়ছে সংকটাপন্ন। এখানে পরিবেশ বিনষ্টের মহোৎসব চলছে। প্রকাশ, বিলের জল সেচে মাছ আহরণ, অভয়াশ্রম বাতিল করে বিল ইজারা প্রদান, হিজল করচের জলাবন ধ্বংস, মাছ লুট ইত্যাদি কর্মকা- চললেও রহস্যজনক কারণে স্থানীয় প্রশাসন নীরব। পরিবেশ বিধ্বংসী এসব কর্মকা-ের ফলে হাকালুকি হাওরে মাছের উৎপাদন কমে গেছে। উল্লেখ্য, সরকার ১৯৯৮ সালে হাকালুকি হাওরকে ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া (ইসিএ) ঘোষণা করে। এরপর ইকোলজিক্যাল ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকার যৌথভাবে হাওর উন্নয়নে কাজ শুরু করে। ২০০০ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকা- পরিচালিত হওয়ার ফলে হাকালুকি হাওরে মাছের উৎপাদন বেড়েছে। সেই সঙ্গে অতিথি পাখির সমাগম ঘটায় পরিবেশের ভারসাম্য ফিরে আসতে শুরু করে। ২০১০ সালে সরকার মাছের উৎপাদন বাড়াতে ১৮টি বিলকে মাছের অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়। এতে মাছের উৎপাদন দ্বিগুণ বেড়ে যায়। কিন্তু এর পরই ঘটে ছন্দপতন। অভিযোগ, এখানে লোলুপ দৃষ্টি পড়ে হাওরখেকোদের। এরই ধারাবাহিকায় ২০১৮ সালে হাওরখেকোরা মৎস্য অভয়াশ্রম বাতিল করতে নানামুখী তৎপরতা শুরু করে। অবশেষে ২০১৮ সালে ছয়টি বিল অভয়াশ্রম বাতিল করে রাজস্ব খাতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। পাশাপাশি বাড়তে থাকে পরিবেশবিনাসী কার্যকলাপ।

সূত্রমতে, হাকালুকি হাওর দীর্ঘদিন ধরেই অরক্ষিত। নানা কারণেই হুমকির মুখে হাওরের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য এবং সরকার ঘোষিত মৎস্য অভয়াশ্রম। মৌলভীবাজার জেলার কুলউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা এবং সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ উপজেলাজুড়ে হাকালুকি হাওরের অবস্থান। এর আয়তন প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর। ছোট-বড় ২৩৮টি বিল নিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকির আয়তন বর্ষা মৌসুমে ২৪ হাজার ৭০০ হেক্টর বিস্তৃত। হাওর তীরের কয়েক লাখ মানুষ জীবন ও জীবিকার জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই হাওরের ওপর নির্ভরশীল। হাকালুকি হাওরকে মিঠাপানির মাছের অন্যতম প্রজননকেন্দ্রও বলা হয়। অথচ এখন মাছের এমন আকাল যে, অর্ধেক মূল্যেও বিল ইজারা নিতে আগ্রহী হচ্ছে না মৎস্যজীবী সমবায় সমিতিগুলো। তাদের মতে, ইজারার আগেই বিলের মাছ লুটে নেওয়া, অবৈধ মাছ শিকার বন্ধ না করা ও মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়ায় হাকালুকি হাওরের জলাশয়গুলোতে মাছের উৎপাদন কমে গেছে। বিভিন্ন বিলে সরকার নির্ধারিত ইজারা মূল্যের অর্ধেক দামেরও মাছ পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় ইজারা নিতে কেউ আগ্রহী হচ্ছেন না।

হাকালুকি হাওর আমাদের জাতীয় সম্পদ। এই হাওরে ৫২৬ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। বাংলাদেশে জলজ প্রজাতির অর্ধেকেরও বেশি হাকালুকি হাওরে জন্মে। এছাড়া হাওর এলাকায় ১১২ প্রজাতির পরিযায়ী এবং ৩০৫ প্রজাতির স্থানীয় পাখি বিচরণ করে। এখাানে ১২ প্রজাতির উভচর, ৭০ প্রজাতির সরীসৃপ, ৫৯ প্রজাতির স্থন্যপায়ী প্রাণী, ১২ প্রজাতির কচ্ছপ, ১০৭ প্রজাতির মাছ রয়েছে। এ থেকে স্পষ্ট, হাকালুকি হাওরের অর্থনৈতিক ও প্রাকৃতিক গুরুত্ব অপরিসীম। এর পর্র্র্যটন গুরুত্বও নেহাত কম নয়। সংগত কারণেই এই হাওরের সুরক্ষায় সর্বোচ্চ যতœশীল হওয়া জরুরি। এ বিষয়ে সরকার টেকসই পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে আসবে এটাই প্রত্যাশা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত