১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণের মধ্যে দিয়ে সৃষ্ট বাংলাদেশ বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করে নেয়। পাকিস্তানি শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রাম আর সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৮৭১ সালে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের যে পরিচিতি আর ভাবমূর্তি ছিল, সেটি পাল্টেছে বহুভাবে। স্বাধীনতার ৫ দশকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতিতে বাংলাদেশের ইতিবাচক ইমেজ যেমন তৈরি হয়েছে, আবার রাজনীতি ও গণতন্ত্রের প্রশ্নে বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্বে নেতিবাচক ভাবমূর্তি এখনও দেখা যায়। ’৭১-এর দশকে বাংলাদেশের পরিচিতি ছিল দারিদ্র্য, দুর্যোগ আর রাজনৈতিক অস্থিরতার দেশ হিসেবে এবং স্বাধীন বাংলাদেশকে খাদ্য ঘাটতি, দুর্ভিক্ষ আর প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত এক জনপদ হিসেবে চিনেছে বিশ্ববাসী। কিন্তু গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে আলোচিত হয়েছে। এখনও বাংলাদেশের সম্পর্কে আলোচনায় প্রাধান্য পায় ইতিবাচক-নেতিবাচক উভয় দিকই। একটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে প্রশংসিত হয় বাংলাদেশ, সেটা হলো রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে। এছাড়া গণতন্ত্রের প্রশ্ন, অর্থনৈতিক সাফল্যের প্রশ্ন এবং ভূরাজনীতিতে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অবস্থানের প্রশ্ন এই তিনটি বিষয় গুরুত্ব পাচ্ছে। কোনো দেশের তো শুধু একটি মাত্র ভাবমূর্তি থাকে না। বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন রকম সময়ে বিভিন্নভাবে তার ভাবমূর্তি গড়ে ওঠে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ে খুব স্পষ্ট আন্তর্জাতিক মহলে আলোচিত হয়, তার একটি হচ্ছে গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি। এটা ক্রমাগত পেছনের দিকে যাত্রা করছে। আর দ্বিতীয় বিষয় হলো বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সাফল্য। সময়ের পরিক্রমায় ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপট আর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও বদলেছে। আশির দশকেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ইমেজ ছিল স্বৈরতন্ত্রের কবলে পড়া বিদেশি সাহায্যনির্ভর একটি দেশ হিসেবে। একটি বড় সময় ধরে দুর্নীতিতে শীর্ষস্থানীয় দেশ ছিল বাংলাদেশ। এ ভাবমূর্তি পরিবর্তন হতেও সময় লেগেছে।
গত ৫ দশকে বাংলাদেশের যেসব অর্জন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত করেছে, তার মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিগ্রস্ত দেশের প্রতিনিধি হিসেবে নেতৃত্ব দেওয়া, তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উঠে আসা, শান্তিরক্ষা মিশনে ব্যাপক অংশগ্রহণ ইতিবাচক ইমেজ তৈরি করেছে। জঙ্গিবাদ দমনে সাফল্যের দিকটিও প্রশংসা পেয়েছে। অন্যদিকে ভারতের সহায়তায় স্বাধীনতা অর্জনের পরও সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রেখে এ অঞ্চলে ভূরাজনীতিতে একটি নিজস্ব ভাবমূর্তি তৈরি করেছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্রনীতিতে বাংলাদেশ বেশ বিচক্ষণতার সঙ্গেই গত কয়েক দশকে ভালো করছে। ভারত, চীন ওদিকে পাকিস্তান, জাপান এই যে নানা রকম চাপ, সবার সঙ্গে সম্পর্ক রেখে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি এটা বিশ্বের নজরে এসেছে। প্রথম থেকেই বাংলাদেশকে দেখানো হতো অত্যন্ত দরিদ্র একটি দেশ। দেশের লোক খাবার পাচ্ছে না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বন্যার ছবি। আশির দশক-নব্বই দশকের মধ্যেই আমরা আমাদের সামাজিক যেসব উন্নয়ন আছে, সেই সূচকে আমরা অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিলাম। তখনও বাংলাদেশের আগের মতোই ভাবমূর্তি ছিল। কিন্তু গত ১০ থেকে ১৫ বছরে যখন বাংলাদেশে ক্রমাগত জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়ছে, সেটা এখন সবার নজরে এসেছে। এখন বাংলাদেশের ইমেজ হচ্ছে এটা হয় একটা ডেভেলপমেন্ট মিরাকল, আরেকটা কথা সবসময় তারা বলতে থাকে, এটা হচ্ছে একটা উন্নয়নের ধাঁধা। রোহিঙ্গাদের আশ্রয়, দুর্যোগ মোকাবিলা এবং শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ প্রশংসিত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। স্বাধীনতার ৫০ বছর আরও সুবর্ণ হয়ে উঠেছে উন্নয়ন ও অগ্রগতির আন্তর্জাতিক এক স্বীকৃতির কারণে। বাংলাদেশ ভালো করছে, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ধীরে ধীরে স্থান করে নিচ্ছে। দারিদ্র্য বিমোচনেও প্রশংসনীয় অগ্রগতি। গত বছরের নভেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অনুমোদনে স্বল্পোন্নত দেশ বা এলডিসি শ্রেণি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটেছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত ভঙ্গুর অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত।
গত ১০ বছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধি হয়েছে গড়ে ৬ শতাংশের বেশি। করোনা মহামারির মধ্যেও গত অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। করোনার আগে ২০১৫ থেকে ২০১৯ সময় কালে বাংলাদেশের জিডিপি বেড়েছে গড়ে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। ভারতে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৭। পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের নিচে। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের স্থানীয় প্রধানের মতে, স্বাধীনতা-পরবর্তীকালের বাংলাদেশের পরিচিতি ‘বাস্কেট কেস’ থেকে এখন দেশটি উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে বিবেচিত। স্বাধীনতার পর মাত্র পাঁচ দশকের মধ্যেই নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে বাংলাদেশের রূপান্তর ঘটেছে। এতে বেসরকারি খাত অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৮১ সালে জিডিপিতে ম্যানুফ্যাকচারিং বা উৎপাদন খাতের অবদান ছিল ১৩ শতাংশ। ২০১৯ সালে তা বেড়ে ২০ শতাংশ হয়েছে। পুরো শিল্প খাতের অংশ জিডিপির প্রায় ৩৫ শতাংশ। এ সাফল্যের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ ২০৩১ সাল নাগাদ উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে ও ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। দেশ স্বাধীনের পর প্রথম অগ্রাধিকার ছিল কৃষির উৎপাদনশীলতা বাড়ানো। দ্বিতীয় অগ্রাধিকার ছিল জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ। আশির দশকে তৈরি পোশাক খাতে উদ্যোক্তা শ্রেণির আবির্ভাব ঘটে। বাণিজ্যিক কৃষি ও শিল্পের প্রসারের কারণে সেবা খাতের প্রসার ঘটে। ’৯০-এর দশকে এসে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও টেলিকম খাতে নেওয়া নানা কর্মসূচি বাংলাদেশকে সামাজিক অগ্রগতিতে এগিয়ে নেয়। বিদ্যুৎ উৎপাদনে অগ্রগতিও আরেকটি প্রণিধানযোগ্য বিষয়। স্বাধীনতার পর ২০০৯ সাল পর্যন্ত চার দশকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা বেড়ে দাঁড়ায় পাঁচ হাজার মেগাওয়াট। গত ১০ বছরে তা ২০ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে। সামাজিক অগ্রগতিও হয়েছে ব্যাপক। গত ৩০ বছরে গড় আয়ু বেড়েছে ১৫ বছর।
পাকিস্তানে বেড়েছে মাত্র সাত বছর। বাংলাদেশের গড় আয়ু এখন ৭৩ বছর। ভারতে গড় আয়ু ৬৯ বছর।
২০২০ সালে বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের মধ্যে প্রতি হাজারে ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১৯৯০ সালে এ সংখ্যা ছিল ১৪৪। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীর ভর্তির হার বেড়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ের বয়স বিবেচনায় শিশুদের ৭৩ শতাংশ এখন স্কুলে যায়। ১৯৭৩-৭৪ সালে বাংলাদেশে দরিদ্র লোকের হার ছিল ৮২। ২০১৯ সালে দারিদ্র্যের প্রাক্কলিত হার ২০ দশমিক ৫। কোভিডের কারণে গত বছর দারিদ্র্য পরিস্থিতির বেশ কিছুটা অবনতি হলেও সাম্প্রতিক কিছু জরিপ বলছে, তার অনেকটাই এখন পুনরুদ্ধারের পথে। দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম আর ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন হওয়ার পর বিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠন ছাড়াও তৎকালীন সরকারের সামনে একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, দ্রুততম সময়ে বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় করা। নানা বাধা-বিপত্তির পরও দেখা যায়, স্বাধীন হওয়ার মাত্র চার বছরেরও কম সময়ে বাংলাদেশকে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র হয়েছিল আর শতাধিক দেশের স্বীকৃতি আদায় করতে সক্ষম হয়েছিল। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভুটান ও ভারতের স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে বাংলা দেশের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের সূচনা হয়েছিল আর ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সদস্যপদ প্রাপ্তি ছিল গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। তৎকালীন ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি আদায় করতে ভিন্ন এক বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয় বাংলাদেশকে। এর অন্যতম একটি কারণ ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যবস্থায় বাংলাদেশই প্রথম দেশ, যেটি কি-না উপনিবেশ থেকে স্বাধীন হওয়া কোনো দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীনতা অর্জন করে। যে কারণে, বাংলাদেশের সরকারকে স্বাধীন দেশ হিসেবে নিজেকে বিশ্বদরবারে প্রতিষ্ঠিত করতে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হয়। সেই সময় নতুন যারা উপনিবেশবাদ থেকে বেরিয়ে এসে স্বাধীন রাষ্ট্র হয়, তারা চাচ্ছিল না, তাদের থেকে আবার কোনো জাতিগোষ্ঠী স্বাধীনতা পাক। সেখানে তো বাংলাদেশের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।
কারণ হচ্ছে পুরো জোটনিরপেক্ষ, এশিয়ান-আফ্রিকান ব্লক এরা রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের ব্যাপারে শক্ত একটা অবস্থান নিচ্ছিল। বাংলাদেশের স্বীকৃতি আদায়ের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের বিরোধিতা-অপপ্রচার ছাড়াও নানা কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকবিলা করতে হয়েছে। ওই সময় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের স্বীকৃতি ও সমর্থনকে ঘিরে ভূরাজনৈতিক মেরুকরণ প্রকাশ্য হয়ে দেখা দেয়। বাংলাদেশের স্বীকৃতির প্রশ্নে একদিকে ভারত অন্যদিকে পাকিস্তানের সমর্থিত দুই ব্লকের বিভক্তি স্পষ্ট হয়। বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন থাকায় ভারত ও সোভিয়েতপন্থি দেশুগুলো শুরুর দিকেই স্বীকৃতি দেয়। বিজয়ের পর পরই ১৯৭২ জানুয়ারি মাসেই পূর্ব জার্মানি, বুলগেরিয়া, পোল্যান্ড, মিয়ানমার, নেপাল, সোভিয়েত ইউনিয়ন স্বীকৃতি দেয়। শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে দায়িত্ব পালন করা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন বলেন, নতুন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পাওয়া একটা কঠিন জিনিস। কারণ সবাই মূল্যায়ন করে যে, রাষ্ট্রটা যেটা দাবি করছেÑ এদের অতীত কী, বর্তমান কী এবং ভবিষ্যৎ কী হতে পারে। এসবকে মূল্যায়ন করেই কিন্তু তারা স্বীকৃতি দেয়। সে কারণে স্বীকৃতি লাভ করা হলো নিজেদের সফলতার একটা প্রমাণ। আর সেটা বাংলাদেশ করতে পেরেছিল। ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাজ্যসহ সুইডেন, নরওয়ে, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া নেদাল্যান্ডস এবং জাপান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র এপ্রিল মাসে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয় বাংলাদেশকে। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে সাফল্য দেখিয়েছে। বাড়তি খরচ হলেও নিজেদের টাকায় নির্মিত পদ্মা সেতু এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। ঢাকায় মেট্রোরেল ও চট্টগ্রামে কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণকাজ চলছে। সম্প্রতি পায়রা সেতুর উদ্বোধন করা হয়েছে, যা দক্ষিণাঞ্চলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবে। দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকটি অঞ্চলে উৎপাদনও শুরু হয়েছে। তবে উন্নয়নের নতুন স্তরে যাওয়ার পথে বাংলাদেশের জন্য বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। সঠিক নীতি ও পরিকল্পনার মাধ্যমে সেগুলো মোকাবিলা করতে হবে।
এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটলে বিশ্ববাণিজ্যে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার সুবিধা অনেক কমে যাবে। এ কারণে আগামী পাঁচ বছরের উত্তরণকালীন প্রস্তুতি বাংলাদেশের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া টেকসই উত্তরণে এসডিজি, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনার সঙ্গে সমন্বয় করে উত্তরণের শক্তিশালী কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের। স্থানীয় বাজার ও মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানো, রপ্তানি বহুমুখীকরণ, কর্মসংস্থান বাড়ানো, অবকাঠামো উন্নয়ন, দুর্নীতি কমানো, মানসম্মত শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবার প্রসারসহ অনেক বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়ার সুপারিশও উঠে আসছে বিভিন্ন আলোচনায়। বাংলাদেশকে উন্নয়নের পরবর্তী পর্যায়ে যেতে প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। প্রতিবছর ২২ লাখ মানুষ শ্রমশক্তিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। তাদের জন্য ক্রমাগতভাবে কাজের ব্যবস্থা করা আগামী দিনে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। সম্প্রতি ক্রমবর্ধমান বৈষম্যকে বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক সমস্যা বলে অভিহিত করেছেন অনেক জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ। দেশে ক্রমবর্ধমান উন্নয়নের ফলে দারিদ্র্য কমলেও বেড়েছে মানুষের মধ্যে বৈষম্য। কোনো দেশে বৈষম্য বেড়ে গেলে কর ফাঁকি দিয়ে বিদেশে টাকা পাচারও বেড়ে যায়, সেটি অনেকেরই জানা। গত কয়েক দশকে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও অনেক ক্ষেত্রে সুশাসনকে পাশ কাটানো হয়েছে। এসব কারণে রানা প্লাজা, তাজরীন ট্র্যাজেডির মতো ঘটনা ঘটেছে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চায় বেশ পিছিয়ে রয়েছে। এসব বিতর্ক মাথার রেখেই সমস্যার সমাধান করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। নিকট ভবিষ্যতে বাংলাদেশের বড় চ্যালেঞ্জ হবে জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য প্রভাব মোকাবিলা। প্রযুক্তির উন্নয়নের ক্ষেত্রে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ। এলডিসি থেকে উত্তরণ হলে কী করণীয়, তা নিয়ে ত্বরিত পরিকল্পনা এবং তার বাস্তবায়নে ক্ষিপ্রতার প্রয়োজন। তার সঙ্গে উন্নয়নের সুফল যাতে বেশিরভাগ লোকের কাছে পৌঁছায়, সে ক্ষেত্রেও থাকতে হবে সদাতৎপর। তার সঙ্গে রয়েছে নজরদারি ও জনস্বার্থের দেখভাল করা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন। আধুনিক শিক্ষা ও দক্ষ জনশক্তি উন্নয়ন, বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তাচেতনা, প্রযুক্তির ক্রমাগত ব্যবহার বৃদ্ধি এবং একটি পরমতসহিষ্ণু জাতি গঠনই নির্ধারণ করবে বাংলাদেশের আগামী দিনের অগ্রযাত্রা।