বর্ষা বা বৃষ্টি-বাদলার সময় বজ্রপাত একটা নিত্তনৈমিত্তিক ঘটনা। আমাদের দেশে সাধারণত এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত বজ্রপাতের ঘটনা বেশি ঘটে। বেশ কয়েক বছর ধরে বজ্রপাতে প্রাণহানির ঘটনা আশঙ্কাজনক পরিসংখ্যানে পৌঁছেছে। ২০২১ সালে মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত চার মাসে সারাদেশে বজ্রপাতে ১৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল। বজ্রপাতের কারণ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভূপৃষ্ঠের পানি যখন বাষ্প হয়ে ওপরের দিকে উঠতে থাকে, তখন মেঘের নিচের দিকে ভারি অংশের সঙ্গে জলীয় বাষ্পের সংঘর্ষ হয়।
এর ফলে বৈদ্যুতিক স্পার্ক সৃষ্টি হয়। আবহাওয়ার ধরন পরিবর্তন, লম্বা গাছের সংখ্যা কমে যাওয়া, আকাশে কালো মেঘের পরিমাণ ও মেঘে মেঘে ঘর্ষণের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া এবং বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি- এই ঘটনাগুলো ঘটলেই বজ্রপাত ভূপৃষ্ঠে নেমে আসে। বজ্রপাতে প্রাণহানি কমাতে সচেতনতার বিকল্প নেই। বেশকিছু কৌশল অবলম্বন করে বজ্রপাতের সময় নিরাপদ থাকা যায়। যেমন-
* এপ্রিল-জুন মাসে বজ্রবৃষ্টি বেশি হয়; বজ্রপাতের সময়সীমা সাধারণত ৩০-৪৫ মিনিট স্থায়ী হয়। এ সময়টুকু ঘরে অবস্থান করুন।
* ঘন কালো মেঘ দেখা দিলে ঘরের বাইরে বের হবেন না; অতি জরুরি প্রয়োজনে রাবারের জুতা পড়ে বাইরে বের হতে পারেন।
* বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গা, খোলা মাঠ অথবা উঁচু স্থানে থাকবেন না।
* বজ্রপাতের সময় ধানক্ষেত বা খোলা মাঠে থাকলে তাড়াতাড়ি পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে এবং কানে আঙুল দিয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকুন।
* যতদ্রুত সম্ভব দালান বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিন। টিনের চালা যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন।
* উঁচু গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তার বা ধাতব খুঁটি, মোবাইল টাওয়ার ইত্যাদি থেকে দূরে থাকুন।
* কালো মেঘ দেখা দিলে নদী, পুকুর, ডোবা বা জলাশয় থেকে দূরে থাকুন।
* বজ্রপাতের সময় গাড়ির ভেতর অবস্থান করলে, গাড়ির ধাতব অংশের সঙ্গে শরীরের সংযোগ ঘটাবেন না; সম্ভব হলে গাড়িটি নিয়ে কোনো কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিন।
* বজ্রপাতের সময় বাড়িতে থাকলে জানালার কাছাকাছি ও বারান্দায় থাকবেন না। জানালা বন্ধ রাখুন এবং ঘরের ভেতরে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকে দূরে থাকুন।
* বজ্রপাতের সময় মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, ল্যান্ডফোন, টিভি, ফ্রিজসহ সব বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন এবং এগুলো বন্ধ রাখুন।
* বজ্রপাতের সময় ধাতব হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করবেন না। জরুরি প্রয়োজনে প্লাস্টিক বা কাঠের হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করতে পারবেন।
* বজ্রপাতের সময় শিশুদের খোলা মাঠে খেলাধুলা থেকে বিরত রাখুন এবং নিজেরাও বিরত থাকুন।
* বজ্রপাতের সময় ছাউনিবিহীন নৌকায় মাছ ধরতে যাবেন না, তবে এ সময় সমুদ্র বা নদীতে থাকলে মাছ ধরা বন্ধ রেখে নৌকার ছাউনির নিচে অবস্থান করুন।
* বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির ধাতব রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ করবেন না।
* প্রতিটি বিল্ডিংয়ে বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপন নিশ্চিত করুন।
* খোলা স্থানে অনেকে একত্রে থাকাকালীন বজ্রপাত শুরু হলে প্রত্যেকে ৫০ থেকে ১০০ ফুট দূরে দূরে সরে যান।
* কোনো বাড়িতে যদি পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে সবাই এক কক্ষে না থেকে আলাদা আলাদা কক্ষে যান।
* বজ্রপাতে কেউ আহত হলে বৈদ্যুতিক শকে আহতদের মতো করেই চিকিৎসা করতে হবে। প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসককে ডাকতে হবে বা হাসপাতালে নিতে হবে। বজ্র আহত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃদস্পন্দন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
এ কৌশলগুলো বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পরীক্ষিত। বজ্রপাত যেহেতু একটি প্রাকৃতিক ঘটনা, তাই এটিকে পুরোপুরি প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। কিছু সচেতনতামূলক বিষয় মেনে চললেই বজ্রপাতের সময় প্রাণহানি এড়ানো সম্ভব।
শিক্ষার্থী
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
arahmandewan19@gmail.com