১৯৬১ সালে গন্ডোয়ানা কোল অনুসন্ধানের সময় জয়পুরহাটে চুনাপাথরের খনির অনুসন্ধান মেলে। দেশের খনিজ সম্পদের জরিপকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের (জিএসবি) সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, ৬০ বছর আগে খোঁজ পাওয়া সেই খনির চুনাপাথর অত্যন্ত উঁচুমানের। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেখান থেকে চুনাপাথর উত্তোলন সম্ভব। ভারতসহ অনেক দেশই বাংলাদেশের চেয়ে অনেক গভীরের খনি থেকে চুনাপাথর তুলছে। কিন্তু অর্থায়নের উৎস না পাওয়ার পাশাপাশি তাপমাত্রা ও ভূগর্ভস্থ পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জের কারণে খনি থেকে চুনাপাথর উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে না। তথ্য অনুযায়ী, জয়পুরহাটের খনিতে ৫১৮ থেকে ৫৪৯ মিটার গভীরতায় ১৫ মিটার গড় পুরুত্বের চুনাপাথর মজুদ আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ খনিতে মজুদ থাকা প্রায় ২৭ কোটি টনের মধ্যে প্রায় ১০ কোটি টন উত্তোলনযোগ্য। একই অবস্থা নওগাঁর তাজপুর চুনাপাথর ক্ষেত্রটিরও। এ ক্ষেত্রটি আবিষ্কৃত হয় ২০১৬ সালে। সেখানে ১০ কোটি টনের বেশি মজুদ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।
উল্লেখ্য, চুনাপাথর প্রধানত চুন তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। সিমেন্ট শিল্পের প্রধান কাঁচামাল চুনাপাথর এবং চুনাপাথর থেকে তৈরি ক্লিংকার। নির্মাণ, রাসায়নিক ও কাচ শিল্পে চুনাপাথর ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। ধাতু নিষ্কাশনে এবং চিনি শিল্পেও চুনাপাথর ব্যবহৃত হয়। দেশের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী এ খনিজটি বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের খাতও হতে পারে। কিন্তু ঠিকমতো কাজে লাগছে না জয়পুরহাটের চুনাপাথরের খনি। বিষয়টি নিয়ে জানুয়ারিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়। কমিটির প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট না করে এবং সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কীভাবে চুনাপাথর উত্তোলন করা যায়, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। সেই সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বৈঠকে একটি প্রতিবেদন দেয়া হয়। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জয়পুরহাট চুনাপাথর খনি ও সিমেন্ট ওয়ার্কস প্রকল্পের জন্য মোট ১৪১ দশমিক ৭৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল এবং বেশকিছু স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছিল। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একাধিক প্রতিষ্ঠানের কাছে জমি হস্তান্তরের পর এখন মাত্র ৬৮ দশমিক ৯৩ একর জমি প্রকল্পের অধীনে রয়েছে। এই থেকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষের আগ্রহের ঘাটতি বিষয়টিই ওঠে আসে।
বর্তমানে দেশে ব্যাপক নির্মাণ কর্মযজ্ঞ চলমান রয়েছে। দেশের সিমেন্ট কারখানাগুলোও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বলে বিবেচিত হচ্ছে। তাই দেশীয় কাঁচামাল চুনাপাথর দিয়ে সিমেন্ট তৈরি সম্ভব হলে দামে সাশ্রয় হবে। সঙ্গত কারণেই জয়পুরসহ দেশীয় সব খনির চুনাপাথর উত্তোলন করা জরুরি। জয়পুরহাট ও তাজপুরের চুনাপাথর অত্যন্ত উঁচুমানের। কারও কারও মতে, মাটির নিচে যে স্তরে চুনাপাথর আছে সে স্তর থেকে উত্তোলন করা আর্থিকভাবে লাভজনক হবে না। বিষয় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভাবনাটি অমূলক। আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করে সেখান থেকে চুনাপাথর উত্তোলন করা সম্ভব হতে পারে। ভারত ও অন্য দেশগুলোতে উন্মুক্ত এবং আন্ডারগ্রাউন্ড চুনাপাথর আছে, সেখানে বাংলাদেশের তুলনায় মাটির অনেক নিচ থেকে তারা চুনাপাথর উত্তোলন করছে। এই অবস্থায় নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে পুনরায় ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হোক। চুনাপাথর উত্তোলন সম্ভব গ্রহণে তা দেশের সমৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।