প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষায় বনায়ন

আফতাব চৌধুরী, সাংবাদিক-কলামিস্ট, বৃক্ষরোপণে জাতীয় স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত

প্রকাশ : ২৪ মে ২০২২, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

কবি বলেছেন- ‘মানুষের লোকালয় যদি মদদই একান্ত মানবময় হয়ে উঠে, এর ফাঁকে ফাঁকে যদি প্রকৃতি কোনোমতেই প্রবেশাধিকার না পায়, তাহলে আমাদের চিন্তা ও কর্ম ক্রমেই কলুষিত ব্যাধিগ্রস্ত হয়ে উঠবেই।’ পৃথিবীর বুকে একদিন প্রাণের আবির্ভাব ঘটেছিল, প্রকৃতির লীলা রহস্যের অন্তরালে সে প্রাণের আবির্ভাব রহস্যটিও মানুষকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের দুর্লভ তপস্যায় প্রতিষ্ঠিত করেছে। লীলাময়ী প্রকৃতি বিশ্বপ্রাণের ধাত্রীস্বরূপ। প্রাণকে অনুকূল পরিবেশ দিয়ে তিনি তাকে বিস্তারিত ও ব্যপ্ত করে তুলেছেন। কিন্তু সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষ যেন প্রকৃতির সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টির মাধ্যমে পৃথিবীতে ডেকে এনেছে অবক্ষয়ের বিভীষিকা, প্রকৃতির শান্ত শ্যামল রূপকে সংহার করে মানুষ সেখানে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছে ভোগের উপকরণ, ফলে আপন জননীর সংহার লীলার মধ্য দিয়ে মানুষ মেতে উঠেছে আত্মহননে।

পরিবেশ দূষণ ভয়াবহ আকারে দেখা দিয়েছে বর্তমান শতকের গত দশক থেকে। জীবন আজ বিপর্যস্ত প্রায়। সমগ্র বায়ুমণ্ডল হয়ে উঠেছে বিষাক্ত ও শ্বাসরোধকারী। বিজ্ঞান মানব সভ্যতাকে দিয়েছে অগ্রগতি; কিন্তু সেই সঙ্গে মানুষের জীবনে নিয়ে এসেছে সংকট। পরিবেশ এবং প্রতিবেশ দুটো কথা আজকাল খুব শোনা যাচ্ছে। আমাদের চারপাশে পানি, স্থল ও বায়ু সব মিলিয়ে এই পরিবেশ। মনে পড়ছে একদা প্রখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেছিলেন যে, ‘দুটো জিনিসের কোনো সীমা নেই। একটা হচ্ছে বিশ্বব্রহ্মা-ন্ডের আয়তন; অপরটা মানুষের মূর্খামি।’ সভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে নিজের পরিবেশকে ধ্বংস করে ফেলে মানুষ সে মূর্খামির প্রতিফলন ঘটাচ্ছে। তৃতীয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিল্প কারখানাগুলোতে পরিবেশ দূষণ রোধে বিশেষ ব্যবস্থা না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ওই সব কারখানার কর্মচারীরা। দি রিজিওন্যাল হেলথ সেন্টারের ইস্টার্ন রিজিওন এর এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি ঘটছে শ্বাসজনিত রোগ যা কয়লা, অভ্র, পাট, চা, লৌহ, রূপা, সীসা, তামা, চামড়া ইত্যাদি শিল্পে ব্যাপক। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এসব প্রতিষ্ঠানে ILO নির্দিষ্ট কোনো প্রতিকার, প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেই। সিলিকোসিস বলে অত্যন্ত মারাত্মক শ্বাসরোগের শিকার অনেকেই। অ্যাসবেসটস ও পাটজাত কারখানার কর্মচারীদের মধ্যে হজমের রোগও প্রায়ই দেখা যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নারী ও শিশুরা। কারণ সামাজিক বৈষম্যের দরুণ এরা একেবারে অবহেলিত। ভারতের ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ কেন্দ্র গরমকালে পেট্রল পাম্প কর্মচারীদের ওপর এক সমীক্ষায় দেখিয়েছে যে, দিনের তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশের অভাবে বেশি পরিমাণ ওই বিষাক্ত বাষ্প শরীরে প্রবেশ করে, যার পরিমাণ মূত্র পরীক্ষায় ভালোভাবে ধরা পড়েছে। এসব ও বেঞ্জিনজাত দ্রব্যের কুফল হচ্ছে অস্থিমজ্জা, রক্ত ও যকৃতের কঠিন রোগ। ১৯৬৪ সালে প্রথমবারের মতো ইতালিতে ও পরে ১৯৬৫ সালে ব্রিটেনে এর দারুণ ক্রোমোজোম ঘটিত পরিবর্তন ঘটার কথা জানা যায়। এ বাষ্পের সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মাত্রা হলো IPPM, তার বেশি হলে তা বিপজ্জনক। মিতে যে নাইট্রেট সার দেওয়া হয়, তা খাদ্যের মাধ্যমে অন্ত্রে গিয়ে নাইট্রেটে পরিণত হয় যা হিমোগ্লোবিনকে মেথিমোগ্লোবিনে রূপান্তরিত করে এবং যখন ডায়াফোরেস এনজাইম এই দুইয়ের মধ্যে সাম্যবস্থা আর রাখতে পারে না, তখন Methemolobinemia নামে এক মারাত্মক রোগ হয়, যা শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায় এবং তা থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। এ রোগকে BoBaby Disease বলা হয়। তাই জৈব সার ব্যবহার করা, নাইট্রোজেন মাটিতে জমা করতে পারে এ জাতীয় গাছের চাষ করার দরকার বেশি। মালদ্বীপের মতো যেসব রাষ্ট্রের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১ মিটার উঁচুতে অবস্থিত তাদের ভবিষ্যৎ শোচনীয়, কারণ মালদ্বীপের আগামী ১০ থেক ৭০ বছরের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাবে ৩০ সে.মি.-এর মতো। ফলে এসব দ্বীপ ডুবে যাবে। কয়েক বছর আগে জোয়ারের পানি মালে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঢুকে পড়েছিল এবং এতে ৪ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে। দ্রুত শিল্পায়ন, বনাঞ্চলের ফলে বাতাসের ক্রমবর্ধমান CO2 সহ অন্যান্য গ্যাস একটা Heat trap তৈরি করছে এবং তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অ্যান্টার্কটিকায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের গবেষণা। সব মিলিয়ে পৃথিবী ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে দুই মেরুতে জমে থাকা বরফ গলিয়ে দিচ্ছে। পৃথিবীতে এখন এ শতাব্দীর সবচেয়ে গরম সময় চলছে। ক্রমবর্ধমান CO2, CH4, N2O এ বিপদ ডেকে আনছে। জেটপ্লেন নিঃসৃত ধোঁয়া ওজন স্তরকে ভেঙে ফেলে দ্রুত হারে, ফলে আলট্রাভায়োলেট বা অতিবেগুনী রশ্মি যা ওজন স্তরে ধাক্কা খেয়ে আবার মহাশূন্যে ফিরে যায়, তা ক্রমেই বেশি করে পৃথিবীতে এসে পড়ছে। ফলে ক্যান্সার খুব বেড়ে যাচ্ছে। পরিবেশ দূষণের কুফল কতদূর হতে পারে তার একটি Example হলো, ১৯৫০ সালে লন্ডনে এসিড বৃষ্টির ঘটনা। SO4, H2 ও বায়ুতে জলীয় বাষ্পের এবং O2-এর সঙ্গে বিক্রিয়া করে সালফিউরিক এসিড তৈরি করে যার ফলে বৃষ্টির পানির PH 5.6 এর নিচে চলে যায় এবং এসিড বৃষ্টি হিসাবে ঝরে পড়ে। ১৯৫২-তে ধোঁয়াশায় ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার লোক মারা যায়। সালফার কম আছে এমন কয়লা ব্যবহার করে অথবা স্ক্রাবার (Scrubber) ব্যবহার করে এ সমস্যার কিছুটা সমাধান করা সম্ভব।

পৃথিবীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে বায়ুমণ্ডলের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। গ্রীন হাউসের বা কাচঘরের কাচের দেওয়াল বা ছাদের মতোই এর কাজ। পৃথিবী যে তাপ বিকিরণ করছে বায়ুমন্ডল তা ধারণ করে এবং পুনরায় সে ফিরিয়ে দেয় শক্তি। পৃথিবীকে ঘিরে যদি এ বায়ুমন্ডল না থাকত, তবে পৃথিবীর তাপমাত্রা থাকত আরও কম। প্রকৃতির কাঠামোগত পরিবর্তন ঘটেছে। বিশেষ করে শিল্পকারখানা এ কাজটি বেশি করে করছে। ফলে ভায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডসহ গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণ বাড়ছে। বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর বিকিরণ করা তাপ বেশি করে ধারণ করছে এবং ঠিক সে পরিমাণে বেশি করে শক্তি পুনরায় ফিরিয়ে দিচ্ছে। ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে। এটাই হচ্ছে গ্রীন হাউস এফেক্ট। কার্বন ডাই-অক্সাইড হচ্ছে গ্রিন হাউস গ্যাসগুলোর মধ্যে প্রধান। জীবাশ্মঘটিত জ্বালানি দহন থেকেই এ গ্যাস বেশি করে নির্গত হচ্ছে। এক হিসাবে শিল্প বিপ্লবের পর থেকে এ পর্যন্ত বায়ুমন্ডলে এ গ্যাসের পরিমাণ বেড়েছে ৩০ শতাংশ। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, আগামী ৪০ বছরে এ গ্যাসের পরিমাণ বায়ুমন্ডলে আরও ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। এক হিসাবে দেখা যায়, বিগত ১৩০ বছরে তাপমাত্রা বেড়েছে মাত্র দশমিক ৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। সময়ের হারে তাপমাত্রা বৃদ্ধি সামান্যই বলা যায়। বর্তমানের সব হিসাব ধরে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন আগামী ২০৩০ সালে তাপমাত্রা ১ দাশমিক ৫ থেকে ৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বৃদ্ধি পাবে। তবে মহাসারগুলোর উষ্ণ হতে সময় বেশি নেবে বলে ২০৩০ সালের মধ্যে এমনটি সর্বত্র ঘটবে এমন বলা যায় না। তবে এর অর্ধেক পরিমাণ যে বাড়বে তা বলা যায় নিশ্চিন্তে। আপাতদৃষ্টিতে তাপমাত্রার এ বৃদ্ধি তেমন মনে হচ্ছে না। কিন্তু জলবায়ুতে এর প্রতিক্রিয়া সামান্য হবে না। সমগ্র বায়ুমণ্ডলের এ গড় পরিবর্তন সব জায়গায়ই যে সমভাবে পড়বে তা নয়। কোথাও কোথাও তাপমাত্রা বাড়বে অস্বাভাবিক মাত্রায়। বিগত বরফ যুগে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বর্তমানের চেয়ে ৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড কম দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু পৃথিবীর কোনো কোনো অঞ্চলে বিশেষ বিশেষ সময়ে তাপমাত্রা অস্বাভাবিক নেমে গিয়েছিল। একইভাবে গড়ে মাত্র ৩ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলেও কোনো কোনো স্থানে ১০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এসব অঞ্চলে শীতকালের সময় কমে যাবে, বেশি গরম অনুভূত হবে। গ্রীষ্মকালের স্থিতি বাড়বে ও আরও বেশি গরম পড়বে। ফলে বৃষ্টিপাতেও পরিবর্তন ঘটবে। গরমে বাষ্পীভবন বেশি হবে এবং বৃষ্টিপাতও বেশি হবে। ৭ থেকে ১১ শতাংশ পর্যন্ত বেশি হতে পারে। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে বেশি বেশি আর্দ্র হলেও অন্য অঞ্চল শুকনো হবে বেশি।

গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়ার অবশ্যম্ভাবী দিকটি হচ্ছে দ্রুতহারে গ্রিন হাউস গ্যাসগুলোর বৃদ্ধি ঘটছে বায়ুমণ্ডলে। এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে কার্বন ডাই-অক্সাইড। এরপর রয়েছে- ক্লোরোফ্লোরোকার্বন (CFC)। এরও বৃদ্ধি ঘটেছে বায়ুমণ্ডলে। এ গ্যাসটি শুধু গ্রিন হাউসই নয়। একই সঙ্গে এ গ্যাস বায়ুমণ্ডলে ওজন স্তরেও বিরূপ প্রভাব ফেলছে। আর একটি গ্রিন হাউস মিথেন। বায়ুমণ্ডলে এর পরিমাণও বাড়ছে ব্যাপক হারে। যদিও সিএফসি ও মিথেনের বৃদ্ধির পরিমাণ কম তবুও পরিবেশের ওপর এর প্রভাব কার্বন ডাই-অক্সাইডের সমান। শিল্প কারখানার ধোঁয়া ও তার বর্জ্য জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার, মানুষের প্রতিদিনের বর্জ্য, বন নিধন ইত্যাদি এসব গ্যাস বৃদ্ধির কারণ। সিএফসি বৃদ্ধির কারণে ব্যাপক এরাসল, রিফ্রেজারেটর ইত্যাদিতে সিএফসির ব্যাপক ব্যবহার। তবে আশার কথা, আন্তর্জাতিক সচেতনতা ও প্রতিরোধ সিএফসি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে। গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়ায় তাপমাত্রা বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। তবে এ বৃদ্ধির পরিমাণ যেসব জায়গাতেই এক রকম হবে তা নয়। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে যেখানে তাপমাত্রা এমনিতেই বেশি এবং জলীয় বাষ্প বেশি সেখানে তাপমাত্রা তেমন না বাড়ার সম্ভাবনা। তবে অপেক্ষাকৃত বেশি দ্রাঘিমায় তাপমাত্রা বেশি বাড়বে। তাপমাত্রা বাড়ার জন্য বরফ গলে যাবে। ফলে সূর্যালোক প্রতিফলনের মাধ্যমে শূন্যে মিলে যাবে কম মাত্রায়। ভূপৃষ্ঠ বেশি করে তাপ ধারণ করবে এবং এ প্রক্রিয়ায় তাপমাত্রায়ও বৃদ্ধি ঘটবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। সমুদ্রপৃষ্ঠে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে সাইক্লোন ও টাইফুনের হার বাড়বে। কারণ ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রায় সামুদ্রিক ঝড়ের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এতে করে ঋতু পরিবর্তন বিলম্বিত হবে। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকায় বাষ্পীভবন বাড়বে বলে ঝড়ের সঙ্গে বৃষ্টিপাতও বেশি হবে। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকায় তাপমাত্রা তেমন বৃদ্ধি না পেলেও উচ্চ দ্রাঘিমায় তাপমাত্রা বাড়বে বলে বায়ুমণ্ডলের ঘূর্ণন পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জলবায়ুর পরিবর্তন আসবে। তবে এ ধরনের পরিবর্তনের ব্যাপারে এখনই কোনো কিছু সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। এন্টার্কটিকায় বা গ্রিনল্যান্ডের বরফমালায় গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়ার তাপমাত্রা তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না। কারণ এ এলাকার তাপমাত্রা অনেক নিচে; কিন্তু পর্বতমালার শৃঙ্গের বরফ গলিয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠ ১০ থেকে ১৫ মিলিমিটার উঁচু হবে। অনেকেই মনে করেন বায়ুমন্ডল সুনির্দিষ্ট কোনো লাইন মেনে চলে না বরং বিশৃঙ্খল অবস্থায় চলে। এ যদি হয় তাহলে গ্রীন হাউস গ্যাসগুলো বর্তমান জলবায়ুর পরিবর্তন এনে সম্পূর্ণ নতুন আমল সৃষ্টি করবে। হয়তো সূচনা করবে নতুন বরফ যুগের। আবার উল্টোটিও ঘটতে পারে। কিন্তু এর জন্য সময় কত লাগবে, সে ব্যাপারে কেউ নিশ্চিত নন। গ্রীন হাউস প্রতিক্রিয়ায় সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়লে পানি ও জলোচ্ছ্বাস বাড়বে। উপকূলীয় দেশ হিসাবে বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। এছাড়াও বাংলাদেশের সীমানায় এবং সীমানার বাইরে অথচ যে জায়গায় পানি নদীবাহিত হয়ে বাংলাদেশে আসবে, সে অঞ্চলে ব্যাপক বৃষ্টি হতে পারে। এতে করে বন্যার আশঙ্কাও বাড়ছে। বাকি থাকছে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি। গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়া ছাড়াও মনুষ্য সৃষ্ট কারণেই ঘটতে পারে। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল কি ডুবে যাবে? গ্রীন হাউস প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল ডুববে বলে কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন। সাম্প্রতিক বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি কথিত গ্রীন হাউস প্রতিক্রিয়ার ভয়াবহতা নিয়ে বর্তমান সরকারসহ বিশেষজ্ঞরা শঙ্কিত। কেননা, এখন পর্যন্ত গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের কোনো বৈজ্ঞানিক পন্থা খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি।

গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়ার প্রাথমিক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে। বাংলাদেশ মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন না হলেও এ প্রতিক্রিয়ার কারণে উপকূলবর্তী দ্বীপ চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, খুলনা, পটুয়াখালী জেলার নিম্নভূমি তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিজ্ঞানীরা। এছাড়া শুষ্ক মৌসুমে বৃষ্টিহীনতা উপকূলীয় বনাঞ্চলে ক্ষতিসাধন করবে। সাম্প্রতিক বৃষ্টিহীনতা উপকূলীয় অঞ্চল রক্ষার জন্য বিকল্প কোনো উপায় কিংবা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়নি। সুতরাং যান্ত্রিক যুগের এ আলোড়নে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অধিবাসীরা যদিও তেমন সচেতন নন, তবে সরকার সচেতন।

গ্রীন হাউস প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি মূলত শিল্পোন্নত দেশগুলোর রাসায়নিক দ্রব্যাদি উৎপাদন, রাসায়নিক বর্জ্য ও কলকারখানার উত্থিত পোড়া গ্যাস থেকে। কিন্তু এর প্রভাব বলীয় বাংলাদেশের বাইরে নয়। এমনকি উপমহাদেশও নয়। ইহা রোধের একমাত্র উপায় বনায়ন কর্মসূচি প্রণয়ন। কিন্তু বাংলাদেশে ব্যাপকহারে বন উজাড় করা হচ্ছে, সে হারে বৃক্ষরোপণ হচ্ছে না। ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ ভারসাম্য হারাচ্ছে এ ব্যপারে আমাদের সচেতন হতেই হবে, না হলে বিপদের আশঙ্কা মোটেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।