ঢাকা সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

মিরপুর বেনারসি পল্লি

দৈন্যদশার অবসান হোক
মিরপুর বেনারসি পল্লি

বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বেনারসি শাড়ি বলতে প্রধানত মিরপুর বেনারসি পল্লিতে তৈরি শাড়িকেই বুঝানো হয়। এখানে তৈরি শাড়ির কদর এক সময় দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশেও মর্র্যাদার সঙ্গে উচ্চারিত হতো। পরিতাপের বিষয় হলো, এখন আর সে অবস্থা নেই। মিরপুর বেনারসি পল্লির রমরমা অবস্থাও অনেকাংশে মøান হয়ে পড়েছে। অথচ একসময় বিয়েতে কনের পোশাক মানেই ছিল বেনারসি শাড়ি। অভিজাত থেকে শুরু করে সামর্থ্যবান পরিবারে এ বেনারসির ছিল ব্যাপক কদর ও জনপ্রিয়তা। দেশের চাহিদা মিটিয়ে ভারতেও নিয়মিত রপ্তানি করা হতো এ দেশের তাঁতিদের বানানো বেনারসি। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে ধীরে ধীরে কমতে থাকে বেনারসি তৈরির কারিগর তথা তাঁতি ও তাঁতের সংখ্যা। জানা যায়, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তাঁতিরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। আবার তখন এ শাড়ি কেনার সামর্থ্য সাধারণ মানুষের ছিল না। অবশ্য এখন আগের তুলনায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা অনেক বেড়েছে। কিন্তু বেনারসির সেই সুদিন আর নেই। প্রকাশ, এখন রপ্তানি তো দূরে থাক, বেনারসি পল্লির দোকানগুলোতেই এখন যেসব শাড়ি বিক্রির জন্য রাখা হয়, তার অর্ধেকের বেশি ভারতীয় শাড়ি। তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ৩০ বছরে বেনারসি পল্লিতে তাঁতের সংখ্যা কমে অর্ধেক হয়ে গেছে। বিষয়টি দুঃখজনক।

উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালে তাঁত বোর্ডের করা এক জরিপ অনুসারে, ওই বছর মিরপুর ১০, ১১ ও ১২ নম্বর সেকশনে বেনারসি তাঁতি পরিবারের সংখ্যা ছিল ৮১৫টি। আর তাঁতের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩ হাজার ৯২০। আর ২০১৮ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) করা তাঁতশুমারির তথ্য অনুযায়ী, মিরপুর এলাকায় বেনারসি তাঁতি পরিবারের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৬৯২। আর তাঁতের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮২৫। এর মধ্যে আবার অলস পড়ে আছে প্রায় ২২৮টি তাঁত। সে হিসাবে, ২৮ বছরের ব্যবধানে তাঁতের সংখ্যা কমেছে ২ হাজার ৩২৩টি। আর সাম্প্রতিক সময়ে তাঁতি পরিবার ও তাঁতসংখ্যার পরিমাণ আরও কমেছে- এমন দাবি স্থানীয় তাঁতি ও তাঁত বোর্ডের কর্মকর্তাদের। অথচ এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প সুরক্ষায় প্রতিপক্ষীয় প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও কোনো উদ্যোগ লক্ষণীয় নয়। এদিকে মিরপুরে জমির দাম ও বাসাভাড়া অনেক বেড়েছে। ফলে ওই এলাকায় জমি কিনে বা বাসা ভাড়া নিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তাঁতিরা। অন্যদিকে সিটি করপোরেশনের উচ্ছেদ অভিযানের ফলে অনেক তাঁতি অন্যত্র চলে গেছেন। ফলে অনেকেই পেশা ছাড়তে বাধ্য হন। আবার অনেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গেছেন।

মিরপুর বেনারসি পল্লির শাড়ি যেখানে ব্র্যান্ড হওয়ার কথা, সেটি এখন ইতিহাসের ছেঁড়া পাতার ভুক্তিতে পরিণত হতে যাচ্ছে। অথচ এই বেনারসির সঙ্গে বাঙালির অনেক স্মৃতি ও গৌরবের সংযোগ রয়েছে। যতই মিরপুর বেনারসি পল্লির অবনতি ঘটছে, সেই স্থান দখল করে নিয়েছে ভারতীয় শাড়ি। ভারতের কারিগররা বৈদ্যুতিক তাঁতযন্ত্রে শাড়ি বানায়, অন্যদিকে দেশে বানায় হাতে। এ জন্য ভারতের সঙ্গে সময় ও খরচে কুলিয়ে ওঠা যায় না। তাই তারা তুলনামূলক কম দামে এসব শাড়ি বিক্রি করতে পারেন। বোঝাই যাচ্ছে, বহুমুখী সমস্যায় রয়েছে দেশের বেনারসি শিল্প। এ অবস্থা অবসানে অবশ্যই সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা জরুরি। তাঁতিদের সুবিধাজনক জায়গায় পুনর্বাসন করে বেনারসি সুদিন ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারের তরফে তাঁতিদের পুনর্বাসনে কিছু উদ্যোগের কথা জানা যায়। সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা হোক। পাশাপাশি বেনারসি শাড়ি তৈরিতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা ভাবতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত