আমার দেশের দিনমজুরের কষ্টে অর্জিত শ্রমের টাকা, দেশের বাইরে থেকে পাঠানো প্রবাসীদের পরিশ্রমের টাকা যা আমার দেশে হবে বিনিয়োগ, করবে অর্থনীতির চাকাকে সচল; কিন্তু না বাস্তবতা তার পুরোটাই উল্টো, আমার দেশের উপার্জিত অর্থের একটি বিরাট অংশ অর্থ পাচারকারী সিন্ডিকেটের হাত ধরে চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে, হচ্ছে বিনিয়োগ কেউ কেউ বা সেই অবৈধ অর্থ ব্যবহার করছে আলিশান বাড়ি তৈরিতে। কিন্তু কেন?
‘বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচারের ঘটনা সিন্ধুতে বিন্দুর মতো। অর্থাৎ বেশির ভাগ ঘটনা কেউ জানেই না’।
বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার হচ্ছে মূলত দুটি উপায়ে। প্রথমত, বাণিজ্যিক কারসাজি এবং দ্বিতীয় যেই উপায় সেটি হচ্ছে হুন্ডির মাধ্যমে। প্রথমেই আশা যাক- বাণিজ্যক কারসাজি, এই উপায়ে খুব সূক্ষ্মভাবে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বিদেশে অর্থ পাচার করে থাকে। যেমন- কোনো পণ্য যখন বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়, তখন কম দামি পণ্যকে বেশি দাম দেখানো হয়, ফলে অতিরিক্ত অর্থ দেশের বাইরে থেকে যায়। আবার একইভাবে রপ্তানির ক্ষেত্রে বেশি দামি পণ্যকে কম দাম দেখিয়ে অতিরিক্ত অর্থ দেশে আনা হয় না। এ পুরো প্রক্রিয়াটাই যেহেতু অবৈধ, তাই এই অবৈধ অর্থ পাচারের আরেকটি সহজ উপায় হচ্ছে- হুন্ডির মাধ্যম যেখানে সঠিক তথ্য-উপাত্ত পাওয়া মুশকিল।
গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইনটেগ্রিটি বলছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে গড়ে ৬৪ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল- ৫ বছরে পাচারকারীরা ৩ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা করেছে, যা দেশের অর্থনীতিকে দিন দিন পঙ্গু করে দিচ্ছে, অচল করে দিচ্ছে।
যদিও এই অর্থ পাচার বন্ধে রাষ্ট্রের ৮টি সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে একযুগে। তবুও কেন ঠেকানো যাচ্ছে না অর্থ পাচার। কারণ এর পেছনের কালোহাতটা অনেক বেশি শক্তিশালী, দেখা যাবে এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে হয় রাষ্ট্রের সাবেক, না হয় বর্তমান কর্মকর্তা-কর্মচারী, সংসদ সদস্য, বড় ব্যাংকার থেকে শুরু করে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীচক্র। অচিরেই সরকার যদি এ অর্থ পাচার রোধে যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে দেশের অবস্থা খুবই শোচনীয় হবে।
বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের কারণ হতে পারে দুটি, আস্থা ও বিনিয়োগ। আচ্ছা ঠিক আছে, ব্যক্তি যেভাবেই টাকা কামাক না কেন, এখন এটাকে সেইফ রাখতে হবে। এটা একটা বিষয়। আরেকটা বিষয় হচ্ছে- অর্জিত টাকাকে বিনিয়োগ করা, যার সুযোগ বাংলাদেশ কম থাকলেও ব্যক্তির আস্থা কম। তাই সে নিরাপদ ভেবে বিদেশে টাকা পাঠিয়ে দেয়।
আবার এটাও লক্ষণীয় যে অর্থ পাচার এটি একটি সম্মেলিত সমস্যা। উন্নত দেশগুলো অর্থ পাচারে সুযোগ দিচ্ছে বলেই মধ্যম আয়ের দেশগুলো অর্থ পাচারে অতি উৎসায়ী হচ্ছে। যেখানে আমেরিকা কানাডার মতো দেশকে তো তারা অর্থ পাচারের জন্য পৃথিবীর স্বর্গরাজ্য হিসেবেই ধরে নেয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে উদাহরণস্বরূপ রয়েছে- কানাডার বেগমপাড়া।
নিজ দেশের অর্থ অন্য দেশে পাচার হয়ে যাক অবৈধভাবে, এটা কোনো দেশের জনগণের কাম্য নয়, তাই আমাদের দেশের সরকারের উচিত সুষ্ঠু বিনিয়োগের বিস্তর পরিবেশ সৃষ্টি করে দেওয়া, অর্থ পাচার বন্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ, ব্যবসায়ী মহলে স্বজনপ্রীতি নয় বরং সুষ্ঠু তদারকির ব্যবস্থা করা, পাচারকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় এনে এক নজিরময় শাস্তির ব্যবস্থা করা। উন্নত দেশগুলোর উচিত, গোটা বিশ্বে অর্থ পাচার বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ এবং পাশাপাশি জাতিসংঘের উচিত এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া।
শিক্ষার্থী
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা