ঢাকা সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

পরিবেশ বিষয়ে সচেতনতার অভাব

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, পরিবেশ ও বন বিষয়ক লেখক
পরিবেশ বিষয়ে সচেতনতার অভাব

ময়লার ব্যাগটা ছুড়ে মারলেন তিনি। কাছেই ডাস্টবিন। দেখা গেল, ময়লা বাইরে ফেলে চলে গেলেন তিনি। তিনি শিক্ষিত মানুষ। কেন এমন করলেন, জানা নেই। এভাবেই পরিবেশ দূষণ যারা করে, তাদের অধিকাংশই শিক্ষিতজন। খাল ভরাট করে বাড়ি করেছেন। তিনি জানেন জায়গাটা তার নয়। খাল ভরাট করলে জলাবদ্ধতা হবে। সব জেনেই এমন করেছেন তিনি। এক সময় সরকার জায়গা দখলমুক্ত করল। কিন্তু ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেছে। সব জায়গা দখলমুক্ত হয় না। মাটি, পানি, গাছপালা, পাখি, কীটপতঙ্গসহ পরিবেশের যতগুলো উপাদান আছে। সবই আজ মহাবিপন্ন। মানুষ সব মেরে ফেলছে দিন দিন। ঢাকা শহরের অলিগলিতে কত গাছ ছিল। ছায়া সুনিবিড় ছিল। এখন কিছুই নেই। খাঁ খাঁ করে পথ প্রান্তর। তাপমাত্র বেড়েই চলছে। একটু গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নেবে মানুষ, কোথাও সে সুযোগ নেই। বায়ু দূষণে ঢাকা বারবার শীর্ষে চলে আসছে। কী ভয়ংকর অবস্থা। হাপানি, শ্বাস, কাশির রোগী বেড়েই চলছে। একটা ভয়ংকর অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে দিন দিন। এ যেন মানুষ নিজেই তার কবর খুঁড়ছে। সব কিছু যদি বাদও দিই, শুধু এই শহরের শিক্ষিত মানুষ তৎপর হন, পরিবেশ দূষণ না করেন- পরিস্থিতি দ্্রত পাল্টে যাবে। দশজন পরিবেশ বাঁচালে বাকিরাও এগিয়ে আসবে। পরিবেশ নিয়ে যারা কাজ করেন, তাদের সঙ্গে সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয় নেই। যে যার মতো কাজ করছে। দিন শেষে কার্যত যা তেমন সুফল বয়ে আনছে না। একটু বৃষ্টি হলে এখন পানিতে তলিয়ে যায় রাস্তাঘাট। এ অবস্থার অন্যতম কারণ পলিথিন। ড্রেনে কারা পলিথিন ফেলে? ভিনগ্রহের কেউ নয়। এই শহরের মানুষরাই ফেলে। উন্নত দেশ যারা, যে দেশের পরিবেশ সুন্দর, সেখানে সরকার পরিবেশের জন্য যা না করে, মানুষ তার চেয়ে বেশি করে। তারা ময়লা প্রয়োজনে ব্যাগে ভরে রাখে। তবুও যেখানে-সেখানে ফেলে না। ডাস্টবিনে ময়লা ফেলে। ব্যক্তি অসচতেন হলে রাষ্ট্র, সরকার কী করতে পারে? মানুষ ধরে ধরে বুঝাতে সরকার পারবে না। নিজ থেকেই মানুষকে সচেতন হতে হবে। সরকার যেটা করতে পারে সেটা হলো, পরিবেশ সুরক্ষায় ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো গড়ে তুলে দিতে। কিছুদিন আগের কথা। কোটি টাকা খরচ করে রাস্তার মোড়ে ডাস্টবিন বসানো হলো। কী আশ্চার্য, মানুষ সেগুলো খুলে নিয়ে গেছে। আপনি, আমি, আমরা ভয়াবহভাবে পরিবেশ দূষণ করি। অথচ দিন শেষে সরকারের মু-ুপাত করি। এর চাইতে বড় অন্যায় কী হতে পারে। আগামী ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস। সভা, সমাবেশ, র‍্যালি হবে। যারা এসবে অংশ নিবেন, তাদের অনেকেই ময়লা রাস্তায় ফেলেন। তাদের কলকারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বলে কিছু নেই। এই দ্বিমুখী অবস্থা সত্যি দুঃখজনক। প্রত্যেককে নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। সবার ব্রত হোক, যত যাই হোক আমি, আমার পরিবার পরিবেশ দূষণ করবে না। নিশ্চিত করেই বলা যায়, এমনটা হলে এই শহর, এই দেশের পরিবেশ হবে সুন্দর। পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হবে চারপাশ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত