ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

পাহাড় ধস

ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস বন্ধ করতে হবে
পাহাড় ধস

প্রবল বৃষ্টিতে সিলেট-সুনামগঞ্জসহ অনেক জায়গা যখন প্লাবিত, ভয়াবহ বন্যা দৃশ্যমান, তখন পাহাড়ে ধসের শঙ্কায় আতঙ্কিত মানুষ। সদ্য চট্টগ্রামে অবিরাম বৃষ্টিতে আলাদা দুটি স্থানে পাহাড় ধসে দুই ভাই এবং দুই বোনের মৃত্যু হয়েছে। নগরীর আকবরশাহ থানার এক নম্বর ঝিল এবং বিজয়নগর এলাকায় শুক্রবার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে। এই ঘটনা ঘটে নগরীর এমিউজমেন্ট পার্ক ফয়’স লেকের সি ওয়ার্ল্ডের পাশে এক নম্বর ঝিলপাড় এলাকায় এবং সি ওয়ার্ল্ডের বিজয়নগর অংশে। মূলত ক’দিনের টানা বৃষ্টির মধ্যে গভীর রাতে দুই জায়গায় পাহাড়ের মাটি ধসে পড়ে। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে হতাহতদের উদ্ধার করেন। বলাবাহুল্য, উভয় এলাকায় দুর্ঘটনাকবলিত ঘরগুলো পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। জানা যায়, এখনও সেখানে ঝুঁকিপূর্ণভাবে অনেক বসতি রয়েছে। এদিকে পাহাড় ধসে চারজনের মৃত্যুর ঘটনার পর পাহাড়ে অবস্থানরতদের সরিয়ে নিতে জেলা প্রশাসন কাজ করছে। ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের জন্য নগরীতে ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আরও জানা যায়, ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পাহাড়ের ঢালুতে অবস্থিত অতি ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা অপসারণের পাশাপাশি ওইসব এলাকায় গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। দুর্ঘটনা-পরবর্তী প্রশাসনের ভূমিকা ইতিবাচকই বলতে হয়। তবে প্রশ্ন হলো, এ ধরনের ব্যবস্থাগুলো আগে নেওয়া হয়নি কেন? আর অবৈধভাবে পাহাড়ের ঢালুতে আবাস স্থাপনাই বা কীভাবে সম্ভব হলো?

গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, বারবার কেন পাহাড় ধস? পাহাড়ের ঢাল কেটে তৈরি হয়েছে বাড়িঘর। দূর থেকে দেখলে পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের বদলে জনবসতিই যেন চোখে পড়ে। দেশের সম্প্রতি ঘটে যাওয়া পাহাড় ধসের অনেক কারণের মধ্যে এমন জনবসতিও একটি। বৃষ্টি একটু বেশি হলেও গণমাধ্যমে পাহাড় ধসের খবর যেন নিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবছর এই দেশে পাহাড় ধসের ঘটনা কমবেশি ঘটেই চলছে। যার কোনো প্রতিকার মেলেনি এখনও। প্রাণ দিতে হচ্ছে অনেক মানুষকে। ২০০৭ সালের এ জুন মাসেই ঘটেছিল ভয়াবহ পাহাড় ধস। সেবার চট্টগ্রামের সাতটি এলাকায় পাহাড় ধসে মারা যান ১২৭ জন। এরপর দীর্ঘ ১৬ বছর পার হয়েছে, তবে থামেনি পাহাড় ধসে মৃত্যুর মিছিল। বিচ্ছিন্ন দু-এক বছর বাদ দিয়ে প্রতিবছরই কোনো না কোনোভাবে পাহাড় ধসে প্রাণহানি ঘটেছে। গত ১৬ বছরে চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে প্রায় চার শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মূলত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অভাবের তাড়নায় ছুটে আসা উদ্বাস্তু ও নিম্ন আয়ের লোকেরা সাধারণত এসব ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাস করার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্বল্প আয়ের এসব লোক না পারে ভালো কিছু খেতে, না পারে কিছু করতে। মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও করতে পারে না। অভাবের কারণে তাদের অনেক স্বাদ-আহ্লাদ থেকে যায়। যার ফলে তাদের বসবাস করতে হয় পাহাড়ের চূড়ায়, নয়তো রেললাইনের পাশে। সূত্রমতে, প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় পাহাড়ের পাদদেশে খুপরিঘর ভাড়া দেয় এলাকার কিছু চিহ্নিত লোক। পাহাড় বিক্রি করে এদের অনেকে বিপুল অর্থের মালিকও হয়েছে। তাদের কারণেই মূলত লোকজনের ঝুঁকি বাড়ছে। এসব দিবালোকেই ঘটছে।

জানমাল এবং পাহাড় সুরক্ষায় সেখানে জনবসতি নিয়ন্ত্রিত করতেই হবে। এই নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি। বর্ষা এলেই পাহাড়ের বাসিন্দাদের সরানোর তোড়জোড় কোনো ইতিবাচক পদ্ধতি নয়। দরকার স্থায়ীভাবে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। পাশাপাশি পাহাড়কে যারা অর্থলাভের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে ক্ষতি করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত