ঢাকা সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বিশ্বায়ন বাস্তবতায় ন্যাটোর অবস্থান

রায়হান আহমেদ তপাদার, গবেষক ও কলামিস্ট, raihan567@yahoo.com
বিশ্বায়ন বাস্তবতায় ন্যাটোর অবস্থান

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা সংকট তৈরি করেছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের সবার সাধারণ নিরাপত্তায় ন্যাটোর ভূমিকা আগের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আমরা ফিনল্যান্ডের ন্যাটোর সদস্যপদ পাওয়ার জন্য দ্রুত আবেদন করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। আশা করি, সুইডেন এই সপ্তাহে একই সিদ্ধান্ত নেবে। ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই এ কারণে যে, এটি বাল্টিক সাগর অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বাড়াবে। রাশিয়া হুমকি দিয়ে এবং সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডকে তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু ন্যাটোর সদস্য হতে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের জন্য দ্রুত বিশেষ ব্যবস্থা না নিলে একটি বড় ভুল হবে। সেই ভুল ভøাদিমির পুতিনের হাতে তুরুপের তাস তুলে দেবে। রাশিয়া ‘অস্থিতিশীলতা’র দোহাই দিয়ে যে ভাষ্য দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে, সেটিকে প্রতিষ্ঠিত হতে দিলে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের ন্যাটোর সদস্য পদ পাওয়ার বিষয়টি ঝুলে যেতে পারে। কেন ন্যাটো জোরালো কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না? প্রকৃতপক্ষে জোট হিসেবে ন্যাটোর মধ্যে উল্লেখ করার মতো অনৈক্য রয়েছে। সাধারণত শত্রুকে বাধা দেওয়ার জন্য ঢাল ব্যবহার করা হয়। কোনো কিছুর পেছনে লুকিয়ে সংঘাত এড়ানোর জন্যও ঢালকে ব্যবহার করেন কেউ কেউ। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের রাজনীতিকরা তাদের নানা মাত্রার ‘বীরত্ব’ প্রকাশ করতে গিয়ে নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন বা ন্যাটোকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন। কিন্তু ঢালই যদি ভঙ্গুর হয় কিংবা যে উপকরণ দিয়ে ঢাল তৈরি হয়েছে, তাতে যদি ত্রুটি থাকে, তখন কী হয়? পশ্চিমা দেশগুলো সেটা কি বুঝতে পারছে? এ মাসে মাদ্রিদে হতে যাওয়া ন্যাটো সম্মেলনটি শীতল যুদ্ধ-পরবর্তী সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনমুখী বলে প্রচার করা হচ্ছে। রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ৩০ দেশের এ জোট ‘মুক্তবিশ্ব’ রক্ষায় কীভাবে একত্র হলো, তা নিয়ে সেখানে আত্ম-অভিনন্দনের বন্যাও বয়ে যেতে পারে।

কিন্তু মূল প্রশ্নটাই এড়িয়ে যাওয়া হবে। গত মার্চ মাসে পোল্যান্ডে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও ন্যাটোর কার্যত নেতা জো বাইডেন বক্তব্য দিতে গিয়ে জোটটির নেতারা কী ধরনের কথা বলবেন, আর কী ধরনের পদক্ষেপ নেবেন, তার একটা মান ঠিক করে দিয়েছেন। বাইডেন তেজদীপ্ত শপথের সুরে বলেন, ‘ন্যাটোর প্রতি ইঞ্চি মাটি আমাদের সম্মিলিত শক্তির সবটা দিয়ে’ যুদ্ধের বাইরে রাখব। ওই বক্তব্যের কয়েক মাস পার হয়ে গেলেও দীর্ঘমেয়াদি কোনো তৎপরতার ব্যাপারে উদাসীনতাই দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি আইসল্যান্ডে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেল ওয়ালেশকে বাইডেনের সুরে সুর মেলাতে দেখা গেল। ইউক্রেনের পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট লিথুওনিয়া, লাটভিয়া ও এস্তোনিয়ায় হামলা করতে পারেন বলে চাউর হয়েছে। ওয়ালেশ সতর্ক করে বলেন, পুতিন এই দেশ তিনটিকে ইউক্রেনের মতো ‘প্রকৃত’ দেশ বলে মনে করেন না। কিন্তু বাইডেনের মতো ওয়ালেশও ইউক্রেন যাতে স্বাধীন দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে টিকে থাকতে পারে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা হাজির করেননি। যখন অনেক মিত্র দেশ সামনে এগিয়ে আসছে, তখন ইউরোপে ন্যাটোর গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরা শীত নিন্দায় চলে যাচ্ছেন। তারা ন্যাটো জোটকে অবজ্ঞা ও উপেক্ষা করছেন। কিয়েভকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে গেলে মস্কোকে ক্রুদ্ধ করা হবে- এমন যুক্তিতে তারা বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কৌশলগত সার্বভৌমত্বের দিবাস্বপ্ন দেখা ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁও কথার চেয়ে কাজে বেশি বিশ্বাসী। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজের কাজগুলো দ্বিধাগ্রস্ততা ও ঢিলেমির ধ্রুপদি দৃষ্টান্ত। আর নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট ভিকতর ওরবান যেন ক্রিজের অন্য প্রান্তে সপাটে ব্যাট চালিয়ে যাচ্ছেন। আবার তুরস্কের সমস্যা সৃষ্টিকারী প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান নিজ উদ্যোগে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের সদস্যপদের বিরুদ্ধে যেভাবে পেছন থেকে ছুরি মেরেছেন, সেটাও ন্যাটো জোটের অনৈক্যের বড় এক দৃষ্টান্ত। ন্যাটোর গোবেচারা মহাসচিব স্টলটেনবার্গ সদস্যদেশগুলোর নানামুখী চাপ সামলাতে আর অনৈক্যের এই ফাটল মেরামত করতে গিয়ে রীতিমতো গলদঘর্ম।

এদিকে পোল্যান্ড ও অন্য সম্মুখ সারির দেশগুলো কঠোরতম পদক্ষেপ চায়। রাশিয়ার সীমান্তে অতিরিক্ত সেনার সঙ্গে স্থায়ীভাবে ভারি সমরাস্ত্র ও যুদ্ধবিমানের মোতায়েন চায় তারা। তাদের এ ধরনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ন্যাটোর কর্মকর্তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, বলিষ্ঠ ও ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ইউক্রেনের নেতৃত্বের জন্য ন্যাটোর এই সম্মেলন হবে সবচেয়ে হতাশাজনক। ন্যাটোর সদস্যপদ পাওয়ার স্বপ্ন তাদের বিসর্জন দিতে হচ্ছে। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা ন্যাটোর নেতাদের উদ্দেশে কিছুদিন আগেই বলেছিলেন, অবশ্যই আমরা তাদের মুখ থেকে সমর্থন শব্দটা শুনতে পাই... সে কারণে আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। ন্যাটোর সম্মেলন শেষ হওয়ার পর তিনি আর জোটটির নেতাদের ‘কিছুই না করার’ অভিযোগে অভিযুক্ত করতে পারবেন না। কেননা, ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়ে কিংবা ‘কৃষ্ণসাগরের নিরাপত্তা’ নিয়ে যে ‘বাস্তব’ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে, তা হয়তো স্বপ্নেও তিনি ভাবতে পারবেন না! কৃষ্ণসাগরে ইউক্রেনের বন্দরে রাশিয়া অবরোধ করে রেখেছে, যা বিশ্বে খাদ্যসংকট সৃষ্টি করেছে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কোনো পদক্ষেপ নিতে না পারা ক্ষমার অযোগ্য একটা বিষয়। কেন ন্যাটো জোরালো কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না? প্রকৃতপক্ষে জোট হিসেবে ন্যাটোর মধ্যে উল্লেখ করার মতো অনৈক্য রয়েছে। বাইরে থেকে দেখলে যতটা শক্তিশালী ও গোছাল বলে মনে হয়, বাস্তবে জোটটি তেমন নয়। ইউক্রেন হাত বাড়ানো দূরত্বে থাকায় ন্যাটোকে তাও কিছু পদক্ষেপ নিতে দেখছি। গত বছর আফগানিস্তানে ন্যাটো পুরোপুরি ছত্রভঙ্গ হয়েছিল। এখন ইউক্রেন যুদ্ধ যদি প্রলম্বিত হয়, যদি রাশিয়া ও ইউক্রেন আরও মরিয়া হয়ে ওঠে, যদি কূটনৈতিক প্রচেষ্টাগুলো কানাগলিতে ঢুকে পড়ে, তাহলে ন্যাটোর দীর্ঘমেয়াদি দুর্বলতা ও ভঙ্গুরতা আরও বেশি অনিবার্য হয়ে উঠবে। সোভিয়েত পরবর্তীকালে ন্যাটো জোটের যে ধাপ্পাবাজি, সেটি সবার কাছে উন্মুক্ত হয়ে যাবে।

এত বড় কোনো সংস্থায় সর্বসম্মত রাজনৈতিক মতৈক্য থাকবে, সে ধরনের কিছু আশা করা বোকামি হবে। কিন্তু সামরিক সক্ষমতার প্রসঙ্গ যখন উঠছে, তখন সবগুলো সদস্যদেশের মধ্যে অদ্ভুত একটা মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। এ বিষয়ে কে কার পেছনে যাবে, সেই প্রতিযোগিতা যেন সবার মাঝে। রাশিয়ার দিক থেকে আসা পারমাণবিক ও রাসায়নিক যুদ্ধের প্রচ্ছন্ন হুমকিতেই ন্যাটোর দেশগুলোর কণ্ঠ যেন বিকল হয়ে গেছে। আবার ন্যাটোর জোটের দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। সামরিক পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতি ছাড়া কোনো কিছু করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। সাংগঠনিক ও সামরিক, দুটি ক্ষেত্রেই ন্যাটোর কার্যক্রম সবখানেই রয়েছে। ইতালি, নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাষ্ট্র- এ তিন দেশে জোটটির যৌথ কমান্ডের সদর দপ্তর অবস্থিত। আবার এর শীর্ষ জেনারেল বেলজিয়ামে থাকেন। এ রকম বাস্তবতায় অস্ত্র সরবরাহ ব্যবস্থা ও প্রশিক্ষণে যেমন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে, ঠিক তেমনি গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানেও বাধা তৈরি হচ্ছে। আবার ইউরো-আটলান্টিকে রাশিয়াকে এবং ইন্দো-প্যাসিফিকে চীনকে সামলাতে গিয়ে ন্যাটোকে অনেক বেশি চাপ নিতে হচ্ছে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ন্যাটো বল ছেড়ে দিয়েছিল। তারা ভেবেছিল শেষ বাঁশি বেজে গেছে। খেলা শেষ। কিন্তু খেলা শেষ হয়নি। এখন যেমন পুতিন তার হাতের ঢোল পিটিয়ে পশ্চিমকে পরীক্ষার মুখে ফেলছেন। এখন ন্যাটো যদি নিজেকে না শোধরাতে পারে, তাহলে লুকানোর জায়গা তারা আর খুঁজে পাবে না। ন্যাটো কি আবার ব্যর্থ হবে? দীর্ঘদিন ধরে নর্ডিক দেশগুলো নিজেদের নিরীহ, মানবিক ও শান্তিকামী শক্তি হিসেবে দেখে আসছে। এই দেশগুলোর মধ্যে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের জাতীয় পরিচয় তাদের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে। সুইডিশরা তাদের শতাব্দী-প্রাচীন ঐতিহ্য হিসেবে জোটনিরপেক্ষতার চেতনা লালন করে থাকে। অন্যদিকে ফিনিশরা রাশিয়ার সঙ্গে ৮৩০ মাইলের সীমান্ত থাকার পরও তাদের ভৌগোলিক পরিমণ্ডলকে শান্তিপূর্ণ রাখার রাজনৈতিক প্রতিভা দেখিয়েছে।

তবে যেহেতু এ দুটি দেশই এখন আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তর আটলান্টিক অঞ্চলের সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার জন্য আবেদনপত্র জমা দিয়েছে, সেহেতু তারা তাদের সেই ঐতিহ্যিক অবস্থান থেকে সরে আসবে। বিশেষ করে ফিনল্যান্ডকে এখন আরও ইউরোপসুলভ বৈদেশিক নীতি গ্রহণ করতে প্রস্তুত বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু এসব তারা করছে কীসের বিনিময়ে? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির পর থেকে ফিনল্যান্ডের রাজনৈতিক অভিজাত গোষ্ঠী রুশ ও পশ্চিমা শক্তির সঙ্গে তাল দিয়ে চলেছে। একটি আঁটসাঁট জায়গায় ফিনিশরা ব্যতিক্রমী দক্ষতার সঙ্গে পরস্পরবিরোধী দুই শক্তির সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখতে পেরেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর দশকে ফিনল্যান্ড ইউরোপের সবচেয়ে দরিদ্র রাষ্ট্র থেকে পশ্চিম ইউরোপের বাকি অংশের সমান্তরাল অর্থনৈতিক স্তরে পৌঁছে গিয়েছিল এবং অনেক বেশি সমতাভিত্তিক সমাজ বজায় রাখতে পেরেছিল। এখন দেশটি পশ্চিমের সঙ্গে একচেটিয়া আলিঙ্গনের মাধ্যমে দুটি পারস্পরিক শত্রুভাবাপন্ন অঞ্চলের (রাশিয়া ও ইউরোপ) সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার আগেকার অনুসৃত সতর্ক কৌশলটি পরিত্যাগ করছে। কারণ, দেশটি এরই মধ্যে ন্যাটো জোটে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। অন্যদিকে রাজনৈতিক ভাষ্যকাররা বলছেন, ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে ফিনিশরা নিজেদের একটি পশ্চিমা জাতি হিসেবে শেষ পর্যন্ত তার পরিচয় নিশ্চিত করল। ফিনিশদের মধ্যে অনেকেই মনে করছেন, ন্যাটোতে যাওয়ার এ সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী হয়েছে। ফিনল্যান্ডের চিন্তাবিদ ও আইনজ্ঞ মারত্তি কোসেনিওমি আমাকে বলেছেন, আপনি সেই শক্তির সঙ্গে আপস করতে পারবেন না, আপনার স্বার্থ যার বোঝার ক্ষমতা নেই। আর সেই শক্তি যদি আপনার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিধর হয়, তাহলে তো কথাই নেই। সেই বিবেচনায় ফিনল্যান্ডের ন্যাটোর সদস্য হওয়া যথেষ্ট যৌক্তিক। ফিনল্যান্ড ও সুইডেন ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার পর আদতেই নিরাপদ হতে পারবে কি-না, তা আরেক প্রশ্ন।

কিন্তু তাদের ঘোষণার পর ক্রেমলিন থেকে মৃদু তিরস্কার করা হয়েছে এবং উভয় দেশে সামরিক তৎপরতা বাড়ানোর বিষয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। ভøাদিমির পুতিনের সরকার কখনোই এ দুই দেশের বিরুদ্ধে শত্রুতাপূর্ণ আচরণ করেনি। দুটি দেশের সঙ্গেই ক্রেমলিনের হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। অতীতের রাশিয়ান-ফিনিশ সামরিক সংঘর্ষের স্মৃতি থেকে বোঝা যায়, বাইরের কেউ ফিনল্যান্ডে অনুপ্রবেশের বিষয়ে বিবেচনা করলে তাকে নিজের জখম পরবর্তী চিকিৎসার কথা মাথায় রাখা উচিত। কারণ, ফিনল্যান্ড ঐতিহাসিকভাবে তার জনসংখ্যার বিশাল অংশকে একত্র করতে সক্ষম হয়েছে। তারা একে-৪৭ রাইফেলের নিজস্ব সংস্করণও তৈরি করে। তাদের যে সুবিশাল বাংকার সিস্টেম আছে, তা পারমাণবিক অস্ত্রের আঘাতকে পর্যন্ত প্রতিরোধ করতে সক্ষম। ফিনল্যান্ড-ন্যাটো প্রশ্নে একটি সংবেদনশীল বিষয় হলো, ফিনল্যান্ডের বৃহত্তম সংখ্যালঘুরা জাতিতে রুশ। এ রুশ নাগরিকদের প্রতিনিধিত্বকারী প্রধান সংস্থাটি স্পষ্ট করে দিয়েছে, ফিনল্যান্ডের বিদ্যমান রাজনৈতিক পদ্ধতির মধ্যে থেকেই তারা তাদের রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে পারে। তবে কিছু ফিনিশ কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, পুতিন ফিনল্যান্ডে বসবাসরত সংখ্যালঘু রুশদের বঞ্চনার অভিযোগকে শত্রুতার অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। সম্ভবত রাশিয়া ফিনল্যান্ডের কার্যত এরই মধ্যে ন্যাটোর সদস্য হওয়াকে আরও বড় অজুহাত হিসেবে এখন দেখানোর সুযোগ পাবে। ১৯৯৬ সাল থেকে ফিনল্যান্ড বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোয় আয়োজিত যৌথ ন্যাটো মহড়ায় অংশ নিয়ে আসছে এবং ইরাক, কসোভো ও আফগানিস্তানে ন্যাটো মিশনেও তারা অংশগ্রহণ করেছে। কিছু ফিনিশ রাজনীতিবিদ এখন বিশ্বাস করেন, ফিনল্যান্ড যেহেতু এরই মধ্যে কার্যত ন্যাটো সদস্য হয়ে আছে, সেহেতু অনেক দেরি হওয়ার আগেই তাদের ন্যাটোতে যোগ দেওয়া উচিত। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে যাওয়া এবং ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন হতে পারে। এমনকি এ যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে বিশ্ববাজারসহ বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়বে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। বাংলাদেশ বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব আছে। তবে সরকারকে এর মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত