ঢাকা শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বাংলাদেশের উন্নয়ন : গণমাধ্যম টেলিভিশনের ভূমিকা

ড. এ. এইচ. এম মাহবুবুর রহমান, সহকারী অধ্যাপক ও সভাপতি, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশের উন্নয়ন : গণমাধ্যম টেলিভিশনের ভূমিকা

একটি দেশের উন্নয়নে গণমাধ্যমের ভূমিকা অনস্বীকার্য। গণমাধ্যম হিসেবে টেলিভিশন, চলচ্চিত্র, খবরের কাগজ, বেতার, পোস্টার, লিফলেট, বিজ্ঞাপন, ম্যাগাজিন, সোশ্যাল মিডিয়া, ই-মেইল, ইন্টারনেট ইত্যাদিকে বুঝানো হয়। সরকারের নানা কর্মসূচি, প্রকল্প, উন্নয়ন কার্যক্রম, জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে গণমাধ্যম হিসেবে টেলিভিশনের ভূমিকা অন্যতম। বাংলাদেশ টেলিভিশন যাত্রা শুরু করেছিল ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর। তখন টেলিভিশনের নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান টেলিভিশন। পাকিস্তান টেলিভিশন করপোরেশনের অধীনে। ডিআইটি (ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট) যা বর্তমানে রাজউক ভবন থেকে টেলিভিশন কার্যক্রম সম্প্রচার হতো। ১৯৭১ সালের ৪ মার্চ অনানুষ্ঠানিকভাবে নামকরণ করা হয় ‘ঢাকা টেলিভিশন’। ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর টেলিভিশনের কলাকুশলীরা কর্মবিরতিতে চলে যায়। ২৩ মার্চ থেকে পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলন ও প্রোগ্রাম টেলিভিশনে সম্প্রচার বন্ধকরে দেয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ টেলিভিশন নামকরণ করা হয়। বিটিভির প্রথম উপকেন্দ্র স্থাপিত হয় ১৯৭৪ সালে নাটোরে। বর্তমানে ১৪টি উপকেন্দ্র রয়েছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে ঢেলে সাজাতে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেন। টেলিভিশনকে সরকারের সঙ্গে জনগণের সর্বোচ্চ যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে গড়ে তুলতে দেশের মেধাবী শিল্পী, সাহিত্যিক, কলাকুশলীকে নিয়োগ দেন। প্রথম অনুষ্ঠান প্রযোজক ছিলেন মুস্তাফা মনোয়ার, অনুষ্ঠান প্রধান ছিলেন- শিল্পী কলিম শরাফী। আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদের ধা-ধা, হারজিত, সপ্তবর্ণা অনুষ্ঠান, ফজলে লোহানীর যদি কিছু মানে না করেন অসম্ভব জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর বিটিভি পরিণত হয়েছিল খালকাটা আর ক্যাপ, সানগ্লাস দেখানো বক্স হিসেবে। জনগণের চাহিদা মাফিক কোনো বিনোদন তো ছিলই না, উপরন্তু সরকারের সঙ্গে জনগণের সেতুবন্ধন রুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ১৯৮২ সালে এইচ এম এরশাদের ক্ষমতা দখলের পর বিটিভি পরিণত হয় সাহেব বিবি গোলামের বক্স। বিটিভি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় জনগণ।

১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বিটিভিকে জনগণের মুখপত্র হিসেবে পরিণত করেন। ১৯৯৬ সালেই বিটিভি চট্টগ্রাম, ২০০৪ সালে বিটিভি ওয়ার্ল্ড ও ২০১১ সালে সংসদ টেলিভিশন চালু করেন। বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্র চালু করে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার মাধ্যম হিসেবে বিটিভি তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের খবর আর বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদি আনন্দ মেলা, ছায়াছন্দ, শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান, জনসচেতনতামূলক অনুষ্ঠান, রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি, বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস উদযাপন, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের দূর শিক্ষণ কার্যক্রমসহ বিটিভির জনপ্রিয় অনুষ্ঠান রয়েছে। ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশনের দ্বার খুলে দেন। ১৯৯৭ সালের ১৫ জুলাই এটিএন বাংলা (এশিয়ান টেলিভিশন নেটওয়ার্ক) ‘অবিরাম বাংলার মুখ’ স্লোগান নিয়ে প্রথম বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশনের লাইসেন্স প্রাপ্ত হয়। একঝাঁক তরুণ সংবাদকর্মী খবরের সঙ্গে সঙ্গে টেলিভিশনে সচিত্র লাইভ সম্প্রচার শুরু করে। দেশের উন্নয়নের সচিত্র প্রতিবেদন জনগণ বিম্ময়ের সঙ্গে দেখতে পায়। বিবিসি, সিএনএন কিংবা আল জাজিরার মতো টেলিভিশন হয়ে ওঠে জীবন্ত গণমাধ্যম। দুই বছর পর ১৯৯৯ সালে আসে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লি.-এর চ্যানেল আই। চ্যানেল আই টেলিভিশনের সম্প্রচারিত কৃষিভিত্তিক অনুষ্ঠান ‘মাটি ও মানুষ’ শাইখ সিরাজের উপস্থাপনায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। এছাড়াও টেলিফিল্ম, চলচ্চিত্র নির্মাণ, সমসাময়িক রাজনৈতিক বিষয়ভিত্তিক অনুষ্ঠান ‘তৃতীয় মাত্রা’ চ্যানেল আইকে ভিন্নমাত্রায় নিয়ে যায়। ২০০০ সালের ১৪ এপ্রিল যাত্রা শুরু হয় ‘একুশে টেলিভিশন’ সংবাদভিত্তিক চ্যানেল। একুশে টেলিভিশন দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। সামিয়া জামানের সংবাদ বিশ্লেষণভিত্তিক আলোচনা অনুষ্ঠানটি ছিল জনপ্রিয়। সংবাদ উপস্থাপনা ও তথ্যভিত্তিক সংবাদের জন্য চ্যানেলটি নন্দিত হয় অল্পসময়ের মধ্যেই। বিনোদনভিত্তিক টিভি চ্যানেল এন টিভি ‘সময়ের সঙ্গে আগামীর পথে’ স্লোগান নিয়ে ২০০৩ সালে ২০০৫ সালে আর টিভি ২০০৬ সালে বৈশাখী টিভি ২০০৬ সালে বাংলা ভিষণ টেলিভিশন জনগণের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে অবাধ তথ্যপ্রবাহের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। ধর্মীয় উগ্রবাদী মদদপুষ্ট ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিতর্কমূলক অনুষ্ঠান সম্প্রচারের কারণে চারদলীয় জোট সরকারের চ্যানেল ওয়ান (২০০৬), সিএসবি নিউজ (২০০৭), ইসলামিক টিভি (২০০৭), দীগন্ত টিভির (২০০৮) সম্প্রচার সরকার বন্ধ করে দেয়। বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের নির্মাণের ধারণায় ৪৭টি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলের লাইসেন্স দিয়েছে। ২০০৯ সালে দেশ টিভি, ২০১০ সালে মাই টিভি, মোহনা টিভি, ইনডিপেন্ডেন্ট টিভি, ২০১১ সালে মাছরাঙা টিভি, চ্যানেল নাইন, বিজয় টিভি, ২০১২ সালে জিটিভি, একাত্তুর টিভি, ২০১৩ সালে এশিয়ান টিভি, এস এ টিভি, গান বাংলা, দূরন্ত, টি-স্পোর্টস টেলিভিশন, ২০১৪ সালে যমুনা টিভি, ২০১৫ সালে দীপ্ত টিভি, ২০১৬ সালে নিউজ টুয়েন্টি ফোর, ডিবিসি নিউজ, ২০১৭ সালে বাংলা টিভি, ২০১৮ সালে আনন্দ টিভি, ২০২১ সালে নেক্সাস, ২০২২ সালে গ্লোবাল ও এখন টেলিভিশন নামে প্রায় ৪০টি স্যাটেলাইট টিভি চালু রয়েছে।

এসব টেলিভিশন সরকারের সততা ও স্বচ্ছতা তুলে ধরে জনগণের কাছে সত্য সংবাদ পরিবেশন করছে। শক্তিশালী গণমাধ্যম হিসেবে বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন সরকারের কোনো ধরনের চাপ বা নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই তথ্যপ্রচার করতে পারছে। একটি গণতান্ত্রিক সরকারের এটি একটি স্বচ্ছতার ও পরমত সহিষ্ণুতার দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশের উন্নয়ন সমৃদ্ধি জনগণের কাছে যত সহজে পৌঁছতে পারবে, সরকারের কর্মসূচি বাস্তবায়ন ততো সহজ হবে, বর্তমান সরকার সে নীতিমালা সামনে রেখেই আগামীর উন্নত বাংলাদেশ নির্মাণে কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশ গঠনে টেলিভিশনগুলো সত্য ও ন্যায়ের পথে থেকে সরকার ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত