প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ১৮ জুলাই, ২০২২
দেশে বেসরকারি খাতে উচ্চশিক্ষার যাত্রা ১৯৯২ সালে। তিন দশকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৮-এ। সংগত কারণেই এসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান কতটা পরিপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে, তা বিবেচনার সময় এসেছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, সংখ্যার উল্লম্ফনের সঙ্গে বেসরকারি খাতে উচ্চশিক্ষার গুণগত মানের বিস্তর ফারাক দেখা যাচ্ছে। গবেষণা ও গ্রন্থাগার উন্নয়নের মতো উচ্চশিক্ষার মৌলিক বিষয়গুলো এখানে থাকছে একদমই অবহেলিত। ন্যূনতম অবকাঠামো ও শিক্ষক নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে সিংহভাগ বিশ্ববিদ্যালয়। গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞানের সৃষ্টি ও তা বিতরণ- উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য বর্ণনা করতে গিয়ে মোটাদাগে এ দুটি বিষয়কেই চিহ্নিত করে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ লক্ষ্য থেকে বেশ দূরে। সামনের সারির হাতেগোনা আট-দশটি ছাড়া বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণা কার্যক্রমের চিত্র খুবই নাজুক। এমনকি গবেষণা খাতে কোনো অর্থ ব্যয় না করা বা বরাদ্দ না রাখা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাও কম নয়। সর্বোপরি গবেষণাকে অবহেলিত রেখে অনেকটা পাঠদাননির্ভর হয়ে পড়েছে দেশের বেসরকারি খাতের উচ্চশিক্ষা। অবশ্য এটা স্পষ্ট যে, কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রমের চিত্র খুবই প্রশংসনীয়। গবেষণার জন্য বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পাচ্ছে অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। তবে সার্বিকভাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার হাল সন্তোষজনক নয়। গবেষণা তো দূরের কথা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আরো অনেক মৌলিক সুবিধা থেকেও বঞ্চিত করছে বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়।
উল্লেখ্য, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমের তথ্য সংগ্রহ করে বার্ষিক প্রতিবেদনে তা প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। কমিশন প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০২০ সালে দেশে অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ১০৪টি। এর মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম চালু ছিল ৯৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ওই শিক্ষাবর্ষে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় থাকা ৯৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৫১টিতেই কোনো ধরনের গবেষণা প্রকল্প চলমান ছিল না। অর্থাৎ অর্ধেকের বেশি বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানই গবেষণা কার্যক্রমের বাইরে। এছাড়া গবেষণা খাতে একটি টাকাও ব্যয় করেনি, ওই শিক্ষাবর্ষে এমন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল ১৭। গবেষণা বিষয়ে কেন এমন করুণ অবস্থা তা অনুসন্ধান করা জরুরি। তথ্য অনুযায়ী, দেশের বেসরকারি খাতের উচ্চশিক্ষা অনেকটাই আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামনির্ভর। আর আন্ডারগ্র্যাডে শিক্ষার্থীরা কোর্স নিয়েই ব্যস্ত থাকে, গবেষণার সুযোগ পায় না। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয় মূলত পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামগুলোকে কেন্দ্র করে। যদিও আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মাস্টার্সে শিক্ষার্থী খুবই কম। অন্যদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পিএইচডির অনুমোদনই নেই বলে জানা যায়। অর্থাৎ, এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এমনভাবে সংগঠিত হয়েছে, সেখানে গবেষণার বিষয়টি মুখ্য নয় বলেই প্রতীয়মান।
উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা কার্যক্রম মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সিমাগো-স্কপাসের সূচক বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রতিষ্ঠানটির ২০২২ সালের র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের ৩৪টি উচ্চশিক্ষালয় জায়গা পেয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা মাত্র ১২টি। যদিও দেশে অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা শতাধিক। বাস্তবতা হলো, পাবলিক-প্রাইভেট আলাদা না করে গোটা উচ্চশিক্ষা খাতের দিকে তাকালে দেখা যাবে, আসলে দেশে এখনো মানসম্মত গবেষণার সংস্কৃতি ও পরিবেশ গড়ে ওঠেনি। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই গবেষণার ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা অনুপস্থিত। তবে আমাদের দ্রষ্টব্যবিষয় যেহেতু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, তাই এখানে গবেষণার পরিসর কীভাবে বাড়ানো যায় তা নিয়ে ভাবতে হবে। এগুলো যাতে শুধু ডিগ্রী প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে রূপ না নেয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্ষমতা রয়েছে, তাদের পিএইচডিসহ উচ্চতর প্রোগ্রাম পরিচালনার অনুমোদন দেয়া প্রয়োজন। শিক্ষাকার্যক্রমের অংশ হিসাবে গবেষণাকে অন্যতম শর্ত হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি।