ঢাকা রোববার, ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

আপনাদের ভাবনা

শিশুশ্রম বন্ধ করা হোক

ফজিলতুন্নেছা ফৌজিয়া
শিশুশ্রম বন্ধ করা হোক

শিশু পবিত্রতার প্রতীক। শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ। শিশুদের সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল একটি জাতি পাওয়ার প্রত্যাশা করা যায়। তবে বাংলাদেশের মতো কিছু দেশে দরিদ্রতার কারণে শিশুদের শ্রমিক হতে হয়। দরিদ্রতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে শিশুদের অল্প বয়সেই বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে হয়। শিশুশ্রম একটি জাতির জন্য অভিশাপ। শিশুশ্রম বলতে শিশুদের উৎপাদন কাজে এবং গার্হস্থ্য কাজে শ্রম ব্যয় করাকে বোঝায়। নির্ধারিত বয়সের চেয়ে কম বয়সে কাজে নিয়োজিত সব শ্রমিকই শিশু শ্রমিক। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক সব ক্ষেত্রে শিশুর জন্য শারীরিক, মানসিক ও নৈতিক দিক থেকে ক্ষতিকর এবং শিশুর প্রয়োজন ও অধিকারের সঙ্গে সামজ্ঞস্যহীন বঞ্চনামূলক শ্রমই শিশুশ্রম। দক্ষিণ এশিয়া দেশগুলোতে শিশুশ্রম একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ভয়াবহ সমস্যা। বাংলাদেশ জাতীয় শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী ১৪ বছরের কম বয়সি শিশুদের কাজ করানো হলে তা শিশুশ্রমের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে। শিশুশ্রম বাংলাদেশের একটি সহজলভ্য ব্যাপার, যা এদেশে ৫ থেকে ১৪ বছর বয়সি ৪.৭ মিলিয়ন সন্তানদের দ্বারা জোরপূর্বক করিয়ে নেওয়া হয়। জোরপূর্বক কাজে নিযুক্ত শিশুশ্রমিকের বাইরে শতকরা ৮৩ জনকে গ্রামাঞ্চলে নিযুক্ত করা হয় এবং ১৭ জনকে শহরাঞ্চলে।

বাংলাদেশে বর্তমানে ৩৪ লাখ ৫০ হাজার শিশু শ্রমিক রয়েছে যাদের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত রয়েছে ১২ লাখ ৮০ হাজার শিশু। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর বা বিবিএস এর ন্যাশনাল চাইল্ড লেবার সার্ভে ২০২১ এর এক জরিপে দেখা গেছে দেশে ২ লাখ ৬০ হাজার শিশু অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত রয়েছে এবং তাদের কাজের ধরন জীবন ও স্বাস্থ্যের জন্য বেশ হুমকিস্বরূপ।

জরিপে বলা হয়েছে, দেশের মধ্যে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা সব থেকে বেশি ঢাকা বিভাগে যা প্রায় ৮ শতাংশ। এর পরেই চট্টগ্রাম ৫.৮ শতাংশ। দেশের মধ্যে শিশুশ্রম সব থেকে কম বরিশালে ১.৭ শতাংশ।

যে সময় শিশুদের স্কুলে যাওয়ার কথা, ঠিক সেই সময় শিশুরা পেটের দায়ে বা অভাবের তাড়নায় শ্রম বিক্রি করছে। এটা খুবই বেদনাদায়ক।

প্রত্যেক শিশু সুনির্দিষ্ট অধিকার প্রাপ্যের দাবিদার এবং তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্র, সমাজ এবং প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব। শিশুশ্রম নিরসনে বাংলাদেশ সরকার ৩৮টি ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমকে নির্ধারণ করে ২০২৫ সালের মধ্যে সেগুলোকে বন্ধ করার অঙ্গীকার করেছে। তবে গত জুন মাসে বেসরকারি সংগঠন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন পরিচালিত এক জরিপে বলা হয়েছে, করোনা মহামারির কারণে বাংলাদেশের দরিদ্র ও হত দরিদ্র পরিবারের শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ফিরে যাচ্ছে। শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বেড়ে ১৬ কোটিতে পৌঁছেছে, যা দুই শতকে প্রথম বৃদ্ধি।

কোভিড-১৯ মহামারির কারণে অতিরিক্ত ৯০ লাখ শিশু ঝুঁকির মুখে পড়ার বিষয়ে সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা। বিশ্বব্যাপী শিশুশ্রমে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা বেড়ে ১৬ কোটিতে পৌঁছেছে, যা গত চার বছরে বেড়েছে ৮৪ লাখ। শিশুশ্রম সুস্পষ্টভাবেই মানবাধিকারের লঙ্ঘন। শিশুদের যখন স্কুলে যাওয়ার কথা, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে খেলাধুলা করার কথা সে সময় দারিদ্র্যের কারণে সেই শিশুকাল ও শৈশবকে নিষ্ঠুরভাবে কেড়ে নিচ্ছে এই শিশুশ্রম। অনেক শিশুকেই বাসের হেল্পার, কেমিকেল কারখানার শ্রমিক, লেদ মেশিনে কাজ করা, ইটের ভাটায় কাজ করা, দেশের উপকূলের চরাঞলে শুঁটকি তৈরির কাজের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে হয়। যেকারণে অনেক শিশুই শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে থাকে। এটা সমগ্র জাতি, সমাজ এবং পরিবারের জন্য বেদনাদায়ক এবং দুর্ভাগ্যজনক।

শিশুশ্রম বন্ধের জন্য শিক্ষার প্রসার ও দারিদ্র্য বিমোচনে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। শিশু শ্রমিকদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারকে দায়িত্বশীল হতে হবে এবং সমাজকল্যাণমূলক সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। শিশুশ্রম বন্ধ না করলে অচিরেই একটা জাতির ভবিষ্যৎ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। জাতির সামগ্রিক উন্নয়নে শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে আমাদের সম্মিলিত বিরুদ্ধচারণের বিকল্প নেই।

শিক্ষার্থী

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত