ঢাকা বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

আপনাদের ভাবনা

নারী উদ্যোক্তাদের চাওয়া-পাওয়া

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
নারী উদ্যোক্তাদের চাওয়া-পাওয়া

পৃথিবীতে যা কিছু কল্যাণকর। অর্ধেক তার করিয়াছে নারী। অর্ধেক তার নর। কবি নারীর অবদানের কথা বলেছেন। উন্নয়নে নারীর সমান অংশীদারিত্ব প্রয়োজন। নারী শুধুই সংসার সামলাবে। এ চল ওঠে গেছে। সংসারের পাশপাশি নারী উপার্জনের পথ বেছে নিয়েছে গৃহিণীরা। যেমন- তেমনি স্টুডেন্টরাও। সৌখিন কাজ এখন তাদের আয়ের পথ। গত এক দশকে প্রচুর নারী উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। নারী ভিন্ন পরিচয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। যা শুধু তার নয়। পরিবারে স্বচ্ছলতায় ভূমিকা রাখছে। যদিও নারী উদ্যোক্তা হওয়ার পথটা মোটেও মসৃণ না। পদে পদে কাঁটা বিছানো। তবুও নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। কোনো বাধাই তাদের আটকাতে পারেনি। অনলাইনে কাপড়ের, পেইন্ট, জুয়েলারি, খাদ্যদ্্রব্য, কসমেটিস কি নেই। যার ব্যবসা নারী করছে না। এখন আর দোকান দিয়ে বসতে হয় না। ঘরে বসেই ব্যবসা সম্ভব। সিলেটের রোজিনার কথাই ধরা যাক।

চা পাতা, আচার, মনিপুরী কাপড়ের জমজমাট ব্যবসা তার। ব্যাপক পরিচিতি। পাশপাশি পড়াশোনাও চলছে সমানতালে। বাবা নেই। পরিবারে অর্থনীতিক টানাপড়েন তো আছেই। সেখানেও এখন তিনি ভূমিকা রাখছেন। পরিবারকে সাহায্য করছেন। নিশাত আনজুম সন্ধি। পড়াশোনা করে। আবার সুন্দর সব ছবি আঁকে। সে ছবি বিক্রিও হয়। তার ক্যানভাস, পেপার, কাচের জিনিস, কাঠের গয়না, মাটির জিনিসের ওপর কাজগুলো জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

আগে নারী উদ্যোক্তাদের খারাপভাবে দেখা হতো। নারী মানুষ ব্যবসা করবে। এ কেমন কথা। এখন নারী উদ্যোক্তা হিসাবে নিজেকে দাঁড় করিয়েছে। সফলতা দেখিয়েছে। ফলে অনেক পরিবারই নারী সদস্যদের কাজকে সমর্থন দেন। যারা কটাক্ষ করতেন। তারা প্রশংসা করেন।

কাঁচামাল সংগ্রহ, প্যাকেজিং, কুরিয়ারে পণ্য পাঠানো। মোটাদাগে এ তিনটি জায়গায় নারী উদ্যোক্তারা সমস্যায় পড়েন। যখন তখন তারা কোথাও যেতে পারেন না। প্যাকেজিংয়ের ওপর তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন। কুরিয়ার কোম্পানিগুলো অনেক সময় পণ্য নষ্ট করে ফেলে। ফলে নারী উদ্যোক্তা ক্ষতিগ্রস্ত হন। মূলধনের সমস্যা তো আছেই। যতই সমর্থন দিক। পরিবারের পুরুষ সদস্য নারীকে মূলধন দিতে আগ্রহী হন না। ঝুঁকি নিতে চান না। তবে নারী যখন সফল হন। তখন ঠিকই তার পাশে দাঁড়ান। এমনটাই নাম প্রকাশে এক নারী উদ্যোক্তা জানান।

উদ্যোক্তা মায়মুনা বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের বিনা সুদে লোন দেওয়া দরকার। ব্যবসা করতে হলে লাইসেন্স লাগে। এখানেও তারা বহুবিধ সমস্যার পড়েন। এ দপ্তর থেকে ও দপ্তর ঘুরতে হয়। সহসা লাইন্সেস পান না। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তো এরা পণ্যের প্রচার করেন না। অনলাইনে প্রচার-প্রচারণা চালান।

অর্ডার নেন। অনলাইনে কীভাবে সুন্দর করে পণ্যের প্রচার করা সম্ভব। এ বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে পারে।

জেলা পর্যায়ে হলে আরো উত্তম হয়। বাংলাদেশে নারী উদ্যোক্তা কতজন। এমন কোনো ডাটাবেজ কোথাও নেই। তাদের সমস্যা সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা নেই। বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন সংগঠন নানা আয়োজন করে। নারী উদ্যোক্তাদের সাহায্য করতে চায়। বেসরকারি ব্যাংকগুলো নারী উদ্যোক্তাদের জন্য কোনো লোনের সহজ প্যাকেজ দেয় না। যদিও তারা নারী উন্নয়নে অংশিদারিত্বের ব্যাপারে মুখরোচক কথা বলেন। লোন নিয়ে পরিশোধ করেন না। এমনটা নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে নেই বললেই চলে। নারী উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের সমস্যাগুলো দূর করার জন্য। যাতে তারা আরও ভালো করতে পারেন। এসব বিষয় সুনিদিষ্টভাবে সরকারি সাহায্য তারা প্রত্যাশা করেন। অর্থনীতিতে নারী অংশিদারিত্ব যদি বাড়ে। তাহলে দেশ এগিয়ে যাবে। এ কথা নতুন করে বলার মতো কিছু নয়। নীতি নির্ধারকরা, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষরা যত কথাই খই ফুটান। ঠিক তার অর্ধেকও যদি নারী উদ্যোক্তাদের জন্য কাজ করতেন, তাহলে হাজার হাজার নারী উদ্যোক্তা এ দেশে তৈরি হবে। নারী উপার্জনক্ষম হলে পরিবারগুলোতে অর্থনীতিক টানাপড়েন দূর হবে।

safiq69@gmail.com

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত