ঢাকা শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

অপহরণের টার্গেট শিশু-কিশোরী

আইনের যথাযথ প্রয়োগ জরুরি
অপহরণের টার্গেট শিশু-কিশোরী

অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় আমাদের সমাজে অপরাধের একটি আদি প্রক্রিয়া। তবে ইদানীং অপহরণের সংখ্যা বেড়েছে এবং মুক্তিপণের পাশাপাশি অপহরণ করে ধর্ষণের মতো জগন্য অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে অপহরণকারীরা। আর অপহরণের প্রধান টার্গেট এখন শিশু-কিশোরী। প্রকাশ, চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসে ৬৩ নারী ও শিশু অপহরণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫ জনই শিশু ও কিশোরী, যাদের বয়স ১ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। গত ৭ মাসে পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে জানা যায়, তুচ্ছ কারণেই অপহরণ এবং পরবর্তী সময়ে হত্যা ও ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটছে। এ সময়ে অপহরণের শিকার ৬৩ নারী ও শিশুর মধ্যে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক ছিল ১২ থেকে ১৮ বছরের স্কুলছাত্রী। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, অপহরণের বেশিরভাগ কারণ ছিল প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়া, পাচার, পূর্বশত্রুতা ও জমি সংক্রান্ত বিরোধ। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ জানায়, ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে ৭৪০ নারী ও শিশুকে অপহরণ করা হয়। আর জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এ ছয় মাসে মোট ৫০ শিশু অপহরণের শিকার হয়েছে। বেশিরভাগ ভুক্তভোগী শারীরিক নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার। আর দু’জনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

তথ্য অনুযায়ী, অপহরণের শিকার শিশুদের পরিবারও পরে মামলা করতে চায় না। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হয়ে থাকে। বিষয়টি নিঃসন্দেহে পীড়াদায়ক। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপহরণের মামলা করা হলেও মূল উদ্দেশ্যই থাকে সমঝোতা করা। এ জন্য অনেক সময় অপরাধ প্রমাণ করাও কঠিন হয়ে পড়ে। যে কারণে শাস্তির নজির পাওয়া যায় না। আরেকটি দ্রষ্টব্য বিষয় হলো, বেশিরভাগ অপহরণের উদ্দেশ্যই থাকে ধর্ষণ করা। এর বাইরে অপহরণের শিকার শিশুদের হত্যা ও অঙ্গহানি প্রতিনিয়ত হচ্ছে। যে কোনো অপহরণের ঘটনাই পরিবারের জন্য যাতনাময়। অপহরণকারীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে দ্বিধাবোধ করে ভুক্তভোগী পরিবার। প্রতিবাদ কিংবা আইনের শরণাপন্ন হতে গিয়ে উল্টো হেনস্তার শিকার হতে হয়- এমন নজির নেহাত কম নয়। এদিকে জানা যায়, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অ্যান্টিকিডন্যাপিং স্কোয়াড বন্ধ রয়েছে। উল্লেখ্য, অপহরণ রোধে ২০১৪ সালের মে মাসে অ্যান্টিকিডন্যাপিং স্কোয়াড নামে ৪০ সদস্যের বিশেষ দল গঠন করে ডিএমপি। এ স্কোয়াডে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য হটলাইন নম্বরও চালু করা হয়। এখন নম্বরটিতে ফোন দিলে সেটি আর ব্যবহার করা হয় না বলে বার্তা আসে। অবশ্য সংস্থাটি বলছেন, অ্যান্টিকিডন্যাপিং স্কোয়াড না খুলেই তারা সার্বক্ষণিক এ বিষয়ে সজাগ রয়েছে। যেভাবেই হোক অপহরণ বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হোক।

অপহরণ নিঃসন্দেহে একটি ভয়াবহ অপরাধ। এ ধরনের ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারে যেমন বিপর্যয় নেমে আসে, তেমনি সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হয়। সংগত কারণেই অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি। যেহেতু অপহরণের সঙ্গে সমাজের প্রভাবশালীদের সংশ্লিষ্ট রয়েছে বলে পর্র্যবেক্ষক মহল দাবি করছে, তাই এই ধরনের ঘটনায় সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব হবে, ভুক্তভোগী পরিবারের পাশে দাঁড়ানো। মিডিয়া, মানবাধিকার সংস্থা ও নাগরিক সমাজকেও অপহরণ রোধে সোচ্চার হতে হবে। দ্রুত সময়ে আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে দায়ীকে চিহ্নিত ও শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত