এ বছর ২৫ জুন বর্ণিল আলোকসজ্জায় পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছে, দেশের পিছিয়ে পড়া দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনগোষ্ঠীর নিরবচ্ছিন্ন যাতায়াত। তাদের স্বপ্ন এখন পাড়ি দিচ্ছে, পদ্মার বুকে সগৌরবে দঁািড়য়ে থাকা সেতুর ওপর দিয়ে। এ ভোগান্তীবিহীন যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে লাগতে শুরু করেছে ঝিরঝিরে সুবাতাস। বিশেষ করে এর মধ্যে দিয়ে এ অঞ্চলের বেশকিছু পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটতে শুরু করেছে। এতে নতুন এক দিগন্তের স্বপ্ন দেখছে দেশের পর্যটন শিল্প। ৩ মাস বন্ধ থাকার পর পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি সুন্দরবন। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে দেশ-বিদেশি দর্শনার্থী, বনজীবী, জেলেসহ সব মানুষ সুন্দরবন যেতে পারবেন। এর মধ্যে দিয়ে আবারো লোকে-লোকারণ্য হবে সুন্দরবন। এতে নদীসহ সুন্দরবনে বাড়বে দূষণের মাত্রা। এজন্য সুন্দরবনের পরিবেশ রক্ষা করতে আমাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেষ্ট হতে হবে।
আমরা দেখেছি বিগত বছরগুলোয় এদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া- আইলা, সিডর, আম্ফান, ইয়াশের ক্ষতবিক্ষত জায়গাগুলোয় দাঁড়িয়ে কিছুটা অনুধাবন করা যায়, সুন্দরবন ছাড়া আমাদের আগামীর ভবিষ্যৎ কতটা ভয়ানক হবে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এতবড় উদার মন নিয়ে সুন্দরবন আমাদের পাশে থেকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করছে; কিন্তু তার প্রতি আমাদের সামান্যতম হলেও দায়িত্ববোধ নেই, নেই কোনো কৃতজ্ঞতাবোধ। জলবায়ু পরিবর্তন, ক্ষতিকর কর্মকাণ্ড, বন উজাড়, আমাদের অসচেতনতা, লোভী মানুষিকতা ও বনবিভাগের দুর্নীতির কারণে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উপকূলীয় বনাঞ্চল আমাদের সুন্দরবন আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বৈশ্বিক দুর্নীতি শীর্ষক প্রতিবেদনের এক তথ্য তুলে ধরে বলা হয়েছে, ‘সুন্দরবন থেকে বছরে ১৩৫ কোটি টাকার কাঠ পাচার হয়। কিছু ব্যবসায়ী, অসাধু বন কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রশাসনের যোগসাজশে নির্দ্বিধায় সুন্দরবনে অবৈধভাবে গাছকাটা হয়ে থাকে। যার ফলে প্রতিবছরই কিছু কিছু করে কমে যাচ্ছে সুন্দরবনের গাছের পরিমাণ। এতে হুমকির মুখে পড়ছে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য।
আগামী মাস থেকে সুন্দরবন ভ্রমণ ও মাছ আহরণের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর সুন্দরবনের করমজল, কটকা, কচিখালী, হরবাড়িয়া, হিরণ পয়েন্ট, দুবলা ও নীলকমলসহ সমুদ্র তীরবর্তী এবং বনাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে লঞ্চ, ট্যুরবোট, ট্রলার ও বিভিন্ন নৌযানে চড়ে যেতে পারবেন দর্শনার্থীরা। নতুন করে পর্যটকদের জন্য তৈরি হচ্ছে আরো বেশকিছু সুবিধা। ভ্রমণপিপাসুদের নিরাপত্তার বিষয় মাথায় রেখেও নেয়া হচ্ছে নতুন পরিকল্পনা। একই সঙ্গে সুন্দরবনের বনজ সম্পদ আহরণের জন্য পাস পারমিট নিয়ে ওই দিন থেকে বনে প্রবেশ করতে পারবেন বনজীবীরাও। অনেক সময় এসব বনজীবীদের নিরাপত্তার বিষয়ে নানা সংকটের কথা উঠে আসে! সেদিকেও সরকারকে আরো আন্তরিক হতে হবে। কারণ এসব মৎস্যজীবী, মৌয়ালরাও আমাদের রাজস্বে অবদান রাখছে। বিভিন্ন প্রয়োজন মিটাচ্ছে। এজন্য সবমিলে আমাদের আরো বেশি সচেতন ও আন্তরিক হতে হবে সুন্দরবনকে রক্ষা করতে। মনে রাখতে হবে, সুন্দরবন শুধু আমাদের বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হয় না বরং এটি সব প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করে আসছে। শুধু সৃষ্টিকর্তার দেয়া এই অপূর্ব উপহারের জন্য এখন পর্যন্ত উপকূলীয় শতভাগ মানুষ উদ্বাস্তু হয়নি। তা নাহলে এতদিন উপকূলীয় সব জমিজমা সহায় সম্পদ ছেড়ে এসব মানুষের পাড়ি দিতে হতো অন্যত্র। এজন্য সুন্দরবনকে বাঁচাতে, বন্যপ্রাণী পাচার রোধে, সর্বোপরি সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যকে রক্ষা করতে পর্যটক, মৎস্যজীবী, মৌয়ালসহ সবাইকে আরো বেশি সচেতন হতে হবে। সুন্দরবনের ভেতরে বয়ে যাওয়া- খাল, নদ-নদী, প্লাস্টিক, পলিথিন ফেলে পানি দূষণের বিষয়ে আরো খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি ভ্রমণকারীদের ব্যবহৃত অপচনশীল সব আর্বজনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলাসহ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে আরো আন্তরিক হতে হবে।
সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা
hossainriyad2001@gmail.com