কৃষক একজন ব্যক্তিবিশেষ যিনি কৃষিকার্য পেশায় নিয়োজিত থেকে ফসল উৎপাদন করেন। পাশাপাশি তিনি খাবারের উপযোগী করে গৃহপালিত প্রাণী লালন-পালন করেন। সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকে এ পেশার মাধ্যমে কৃষক মানুষের জন্য খাদ্য সরবরাহ করে জীবনকে চলমান রেখেছেন। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। জন্মলগ্ন থেকে কৃষিই দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। কৃষিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বিভিন্ন শিল্পকারখানার কাঁচামালের চাহিদা পূরণ করে আসছে এই কৃষি খাত। সময় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দেশের অর্থনীতিতে কৃষি খাতের অবদান অন্যান্য খাত, বিশেষত সেবা ও শিল্প খাতের তুলনায় পিছিয়ে পড়লেও কৃষির গুরুত্ব কোনো অংশেও কমেনি। গ্রামে বসবাসকারীদের ৯০ শতাংশই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। পুরুষের পাশাপাশি কৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন বাংলাদেশের গ্রামীণ নারীরা। জমি পরিচর্যা ছাড়াও উৎপাদনের প্রায় সব পর্যায়েই এখন নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ রয়েছে। বাড়ছে উৎপাদনশীলতাও। তবে কৃষি খাতে তাদের এই অবদান মূল্যায়ন পাচ্ছে না। কারণ বাজার অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ পুরো মাত্রায় রয়েছে পুরুষের হাতে, যা নারীর ক্ষমতায়নের পথে একটি বিরাট অন্তরায়। তাই পুরুষ কৃষকের পাশাপাশি গ্রামীণ নারী কৃষকের মূল্যায়ন করা জরুরি। কৃষকদের জন্য পর্যাপ্ত ঋণ সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে, যেন তারা মৌসুমে কম দামে ফসল বিক্রি করতে বাধ্য না হয়। সরকারের পক্ষ থেকে ফসলের মৌসুমে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ফসল ক্রয় করতে হবে। কৃষকের ভাগ্যের উন্নয়নে প্রয়োজনে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর ক্ষতিপূরণের মাধ্যমের কৃষকের পাশে দাঁড়াতে হবে। সর্বোপরি কৃষকের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ যেন কৃষকই পায়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। কারণ কৃষক বাঁচলেই বাঁচবে দেশ। নারী ও পুরুষের কাজ সমান মনে করে তাদের কাজের সঠিক মূল্যায়ন করা দরকার। এটা বুঝার দরকার যে, মূল চালিকাশক্তিকে বাদ দিলে দেশের অর্থনীতি কখনো শক্ত হবে না। দেশে পর্যাপ্ত চাল মজুদ থাকা সত্ত্বেও বাইরের দেশ থেকে চাল আমদানি করাই দেশে ধানের দাম কমে যাচ্ছে। এতে কৃষকরা ন্যায্য মজুরি না পাওয়াই ফসল ফলনে যেমন অনাগ্রহ প্রকাশ করে, পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বেশিরভাগ কৃষক ঋণ নিয়ে ফসল ফলাই আর ফসল ফলনের পরে যে টাকা পায়, সে টাকা দিয়ে চাষকৃত জমির জমিদারের ঋণ পরিশোধ করে। কিন্তু সমাজে উঁচু শ্রেণির মানুষের বৈষম্য ও কৃষকদের অজ্ঞতার কারণে অনেক কৃষকই ঋণ পরিশোধ করা দূরে থাক, নিজেদের পরিবারই চালাতে পারে না। বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ গড়তে হলে কৃষি খাতকে প্রচুর গুরুত্ব দিতে হবে এবং আমদানিনির্ভর না হয়ে আমাদের স্বনির্ভর হতে হবে। দেশে সম্পদের অভাব নেই, দরকার সুস্থ মস্তিষ্ক আর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা।
আমাদের মনে রাখতে হবে, শিক্ষিত জাতি যদি জাতির মেরুদণ্ড হয়, সেই মেরুদণ্ড রক্ষাকারী ভিত্তি হলো দেশের নারী ও পুরুষ কৃষক। কারণ, ব্যক্তি যতই শিক্ষিত হোক, তার প্রধান চাহিদা খাদ্য; যা না খেলে সে বাঁচবে না। আর সেই খাদ্যের যোগানদাতাই যদি খাদ্য যোগানে অস্বীকৃতি জানাই, তবে মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। সবুজ শ্যামল বাংলাদেশ গড়তে কৃষিকাজের বিকল্প নেই। আসুন আমরা গ্রামীণ নারী ও পুরুষ কৃষকদের মূল্যায়ণ করি, স্বনির্ভর সোনার বাংলাদেশ গড়ি।
শিক্ষার্থী
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা