ঢাকা শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

নতুন রাজা চার্লস

ব্রিটেনের রাজা বদলের সাত দশক

রায়হান আহমেদ তপাদার, গবেষক ও কলামিস্ট, raihan567@yahoo.com
ব্রিটেনের রাজা বদলের সাত দশক

দীর্ঘ সাত দশক পরে এই প্রথম ব্রিটেনের সিংহাসনে বসতে চলেছেন নতুন রাজা। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই এবং কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই সিংহাসনের অধিকারী হয়েছেন চার্লস, যিনি এখন সাবেক প্রিন্স অব ওয়েলস। কিন্তু একজন মুকুটধারী রাজা হতে বাস্তব এবং প্রথাগত কিছু পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে তাকে যেতে হবে। তিনি পরিচিত হবেন রাজা তৃতীয় চার্লস নামে। এটাই হলো নতুন রাজার নেয়া প্রথম সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে অন্যতম। চার্লস তার চারটি নামের যে কোনো একটি বেছে নিতে পারতেন- চার্লস ফিলিপ আর্থার জর্জ। পদবি পরিবর্তন শুধু তার একার ক্ষেত্রেই ঘটছে না। সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হলেও প্রিন্স উইলিয়াম স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রিন্স অব ওয়েলস হবেন না। তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে অবশ্য তার বাবার অন্য আরেকটি পদবি- ডিউক অব কর্নওয়াল পেয়ে গেছেন। তার স্ত্রী ক্যাথরিন পরিচিত হবেন ডাচেস অব কর্নওয়াল হিসেবে। চার্লসের স্ত্রীর জন্যও নতুন পদবি আসবে। তার পূর্ণাঙ্গ পদবি হলো কুইন কনসর্ট। কনসর্ট শব্দটি রাজা বা রানির স্ত্রী অথবা স্বামীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। মায়ের মৃত্যুর প্রথম ২৪ ঘণ্টা বা কমবেশি কিছু সময়ের মধ্যে চার্লস আনুষ্ঠানিকভাবে রাজা হিসেবে ঘোষিত হবেন। এটি ঘটবে লন্ডনের সেন্ট জেমস প্যালেসে অ্যাকসেশন কাউন্সিল নামে এ ধরনের আনুষ্ঠানিকতার যে সংঘ রয়েছে, তাদের সামনে। এই সংঘে রয়েছে প্রিভি কাউন্সিলের সদস্যরা যাদের মধ্যে আছেন একদল সাবেক ও বর্তমান জেষ্ঠ পার্লামেন্ট সদস্য এবং রাজকীয় সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি এবং আরো কয়েকজন সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তা, কমনওয়েলথ হাই কমিশনাররা এবং লন্ডনের লর্ড মেয়র। ৭০০-এর বেশি ব্যক্তি এই আনুষ্ঠানিকতায় যোগ দিতে যোগ্য; কিন্তু এবার স্বল্প সময়ের নোটিসে প্রকৃত সংখ্যা অনেক কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ১৯৫২ সালে সর্বশেষ অ্যাকসেশন কাউন্সিলে ২০০-এর মতো ব্যক্তি যোগ দিয়েছিলেন।

কিন্তু প্রথা হলো, রাজা এতে যোগ দেন না। সভায় রানি এলিজাবেথের মৃত্যুর ঘোষণা দেবেন প্রিভি কাউন্সিলের লর্ড প্রেসিডেন্ট (বর্তমানে পেনি মরডন্ট এমপি) এবং একটি ঘোষণা পড়ে শোনানো হবে।

এই ঘোষণার কিছু শব্দ পরিবর্তন হতে পারে, কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে এতে বেশ কিছু প্রার্থনা ও প্রতিশ্রুতি, সাবেক রাজন্যের প্রশংসা এবং নতুন নৃপতির প্রতি সমর্থন জানানো হয়। পরে এ ঘোষণাপত্রে প্রধানমন্ত্রী, আর্চবিশপ অব ক্যান্টারবারি এবং লর্ড চ্যান্সেলরসহ কিছু সিনিয়র ব্যক্তিত্ব স্বাক্ষর করেন। এসব আনুষ্ঠানিকতার সঙ্গে নতুন যুগের প্রতীক হিসেবে কী কী বিষয়ে পরিবর্তন হয়, কী যোগ হয় কিংবা হালনাগাদ করা হয়, সেদিকেও দৃষ্টি থাকবে। অ্যাকসেশন কাউন্সিল আবার বসবে এটা ঘটে সাধারণত একদিন পর এবং এবারে প্রিভি কাউন্সিলের সদস্যদের সঙ্গে রাজা নিজেও যোগ দেবেন। ব্রিটিশ রাজার রাজত্বের শুরুতে কোনো শপথ পড়তে হয় না, যেমনটি হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ক্ষেত্রে। কিন্তু ১৮ শতকের গোড়ার দিকে থেকে চালু হওয়া একটি প্রথা অনুসরণ করে নতুন রাজা একটি শপথ নেন, যে তিনি চার্চ অফ স্কটল্যান্ড সংরক্ষণ করবেন। পরে বাদ্যদলের আনুষ্ঠানিকতার পর চার্লসকে নতুন রাজা ঘোষণা করে জনসাধারণের জন্য একটি ঘোষণাপত্র জারি করা হবে। এই ঘোষণা দেয়া হবে, সেন্ট জেমস প্রাসাদের ফ্রিয়ারি কোর্টের ওপরের একটি ব্যালকনি থেকে। গার্টার কিং অফ আর্মস হিসেবে পরিচিত একজন কর্মকর্তা এই ঘোষণা দেবেন। তিনি আহ্বান জানাবেন, ‘ঈশ্বর রাজাকে রক্ষা করুন’ এবং ১৯৫২ সালের পর এই প্রথম বারের মতো যখন জাতীয়সংগীত বাজবে, তখন সেখানে বলা হবে ঈশ্বর রাজাকে রক্ষা করুন। হাইড পার্ক, টাওয়ার অফ লন্ডন এবং নৌবাহিনীর জাহাজ থেকে গান স্যালুট দেয়া হবে এবং এডিনবরা, কার্ডিফ ও বেলফাস্টে চার্লসকে রাজা ঘোষণা করা ঘোষণাপত্র পড়ে শোনানো হবে। অভিষেক হলো রাজা হিসেবে চার্লসের দায়িত্ব গ্রহণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতীকী ধাপ, যখন তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে মুকুট পরবেন। তবে এর জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে, তাই সম্ভবত খুব দ্রুত এ অভিষেক অনুষ্ঠান হবে না। রানি এলিজাবেথ সিংহাসনে বসেছিলেন ১৯৫২ সালে, কিন্তু ১৯৫৩ সালের জুনের আগে তার অভিষেক হয়নি। গত ৯০০ বছর ধরে অভিষেক অনুষ্ঠান হয় ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে।

উইলিয়াম দ্য কনকোয়ারার ছিলেন প্রথম রাজা, যার অভিষেক হয়েছিল সেখানে। আর চার্লস হবেন ৪০তম। এটি অ্যাংলিকান ধর্মীয় অনুষ্ঠান, যা পরিচালনা করেন আর্চবিশপ অব ক্যান্টারবারি। আনুষ্ঠানিকতার চূড়ান্ত পর্বে তিনি চার্লসের মাথায় সেন্ট এডওয়ার্ড মুকুট স্থাপন করবেন। এটি খাঁটি স্বর্ণের তৈরি, যা ১৬৬১ সাল থেকে ব্যবহার করা হচ্ছে। টাওয়ার অফ লন্ডনে যেসব মণিমাণিক্য রাখা আছে, এটি তার মধ্যমণি। একমাত্র রাজা বা রানির অভিষেকের সময় এটি তারা পরেন (এ কারণে নয় যে এটির ওজন ২.২৩ কিলোগ্রাম)। রাজকীয় বিয়ে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান না হলেও অভিষেক একটি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান। সরকার এই অনুষ্ঠানের খরচ সরকার বহন করে এবং সরকারই এর অতিথি তালিকা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত দেয়। এই অনুষ্ঠানে গানবাজনা হয়, হয় পাঠ এবং রীতি পালন। ব্যবহার করা হয় কমলা, গোলাপ, দারুচিনি, কস্তুরি এবং অম্বর। পুরো দুনিয়ার সামনে নতুন রাজা অভিষেক শপথ গ্রহণ করবেন। এসব আনুষ্ঠানিকতার সময় তিনি নতুন দায়িত্বের প্রতীক হিসেবে রাজদণ্ড গ্রহণ করবেন। আর্চবিশপ অব ক্যান্টারবারি তার মাথায় খাঁটি সোনার মুকুট পরিয়ে দেবেন। চার্লস এখন ৫৬টি স্বাধীন রাষ্ট্র ও ২৪০ কোটি মানুষের সংগঠন কমনওয়েলথের প্রধান হয়েছেন। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যসহ ১৪টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হলেন রাজা। এসব দেশগুলো হলো অস্ট্রেলিয়া, অ্যান্টিগা ও বারবুডা, বাহামা, বেলিজ, কানাডা, গ্রেনাডা, জ্যামাইকা, পাপুয়া নিউ গিনি, সেন্ট ক্রিস্টোফার অ্যান্ড নেভিস, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড গ্রেনাডাইনস, নিউজিল্যান্ড, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ এবং টুভালু। নতুন রাজা হয়ে নানা সুবিধা পাবেন চার্লস। বিনা লাইসেন্সে গাড়ি চালানো থেকে শুরু করে অভিষেকের পরেই একাধিক ক্ষমতা পাচ্ছেন চার্লস। নতুন রাজা বছরে দুইবার নিজের জন্মদিন পালন করার সুযোগ পাবেন। গাড়ি চালানোর জন্য কোনো লাইসেন্স লাগবে না রাজা তৃতীয় চার্লসের। বিদেশ সফরে গেলেও তার পাসপোর্টের প্রয়োজন হবে না দেশটির নিয়ম অনুসারে, রাজাই দেশের সবাইকে রাজা চার্লস যেসব লাইসেন্স এবং পাসপোর্ট দেন।

এদিকে রাজা হিসেবে বছরে দুদিন নিজের জন্মদিন পালন করতে পারবেন চার্লস। প্রথা অনুযায়ী, জন্মতারিখে ব্যক্তিগতভাবে জন্মদিন পালন করবেন রাজা। তারপরে জুন মাসের দ্বিতীয় মঙ্গলবার সর্বসমক্ষে ফের রাজার জন্মদিন পালন করা হবে। এই দিনে ১ হাজার ৪০০ সেনা, ২০০টি ঘোড়া এবং ৪০০ জন সংগীতশিল্পী সবাই মিলে রাজার উদ্দেশে বিশেষ শোভাযাত্রা করবেন। ব্রিটেনের ডলফিন, হাঁসসহ অন্যান্য জলচর প্রাণীদের ওপরেও শাসনের অধিকার থাকবে রাজার। যে সংস্থাগুলো তার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র জোগান দেবে, তাদের বিশেষ ওয়ারেন্ট দেবেন প্রিন্স চার্লস। রাজাকে নিয়ে কবিতা লেখার জন্য পোয়েট লরিয়েট থাকবেন। ১০ বছর অন্তর রাজকবি বদল করা হয়। মাত্র কিছুদিন আগেই ব্রিটেনের নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস। তাদের সবার রানির নামে শপথ নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু রানির মৃত্যুর পর শপথ অনুষ্ঠান পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন রাজা তৃতীয় চার্লসের নামে শপথ নেবেন লিজ ট্রাসের নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভা। তবে রাজা হওয়ার কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না তিনি। কিন্তু আইন প্রণয়ন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাপ্তাহিক বৈঠকসহ সবকিছুই করতে হবে তাকে। ব্রিটেনের সংবাদপত্র ডেইলি মেল বলছে, চার্লস যখন রাজা হবেন, তখন তা ক্যামিলার মাথায় বিখ্যাত হীরে কোহিনুর মুকুটে শোভা পাবে। বিশ্ববিখ্যাত কোহিনুর এখন টাওয়ার অব লন্ডনের সংগ্রহশালায় রাখা থাকে। কোহিনুরের পাশাপাশি অনেক হীরে সেখানে দেখতে পান দর্শকরা। কিন্তু ইতিহাস ও সৌন্দর্য মিশিয়ে কোহিনুরের আবেদন আলাদা। সদ্যপ্রয়াত রানি এলিজাবেথের বাবা ষষ্ঠ জর্জের অভিষেকের সময় তৈরি করা হয়েছিল প্ল্যাটিনামের রাজমুকুট। তাতে বসানো হয় কোহিনুর। দ্বিতীয় এলিজাবেথের মা প্রথম এলিজাবেথ সেই মুকুট পরেন। কোহিনুর এখন ১০৫ দশমিক ৬ ক্যারেটের হীরে। ভারতে পাওয়া গিয়েছিল এ হীরে। বহুবার হাত বদল হওয়ার পর ব্রিটিশরা যখন পাঞ্জাব অধিকার করে, তখন তারা কোহিনুর পায়। সেই থেকে তাদের কাছেই আছে এই হীরে।

অপরদিকে প্রথম চার্লস ছিলেন ব্রিটেনের একমাত্র রাজা, যাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল। তিনি ১৬২৫ সালে সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন। হাউস অব স্টুয়ার্ট থেকে উঠে আসা চার্লস ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড শাসন করতে শুরু করেন। তিনি রোমান ক্যাথলিক বিশ্বাসে বিশ্বাসী ছিলেন। একই সঙ্গে রাজাদের স্বর্গীয় অধিকারে বিশ্বাস ছিল তার। রাজা প্রথম চার্লসের অনেক শত্রু তৈরি হয়েছিল। প্রজারা তাকে অত্যাচারী হিসেবে অভিযুক্ত করেছিলেন। ব্রিটেনের সংসদ রাজার ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিল। এর ফলে রাজতন্ত্রের সঙ্গে সংঘর্ষ তৈরি হয়। এরই জেরে ১৬৪২ সালে শুরু হয়েছিল গৃহযুদ্ধ। চার্লস ১৬৪৫ সালে পরাজিত হন। এরপর বিচারের মুখোমুখি হতে হয় তাকে। লন্ডনের ব্যাংকুয়েটিং হাউসের বাইরে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাওয়ার আগে চার্লস তার বিখ্যাত দুটি শার্ট চেয়েছিলেন, যাতে ঠান্ডা আবহাওয়ায় তাকে কাঁপতে না হয়। ফাঁসি কার্যকর করার আগে তিনি প্রার্থনা করেছিলেন। তারপর নিজেই মুখোশধারী জল্লাদকে ইংগিত করেছিলেন। তার ফাঁসি যিনি কার্যকর করেছিলেন, তার পরিচয় আজও জানা যায়নি। প্রথম চার্লসের মৃত্যুর মাধ্যমে আপাতত অর্থে ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের বিলুপ্তি ঘটে এবং ইংল্যান্ড একটি প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়। প্রথম চার্লসের ছেলে দ্বিতীয় চার্লস পরবর্তী সময়ে ব্রিটেনের রাজা হন। তিনি গৃহযুদ্ধের সময় বাবার সঙ্গে যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু পরাজয় অনিবার্য জেনে ১৬৪৯ সালে জার্মানির হেগে চলে গিয়েছিলেন তিনি। তার পিতার মৃত্যুদণ্ডের পর ইংল্যান্ডে রাজতন্ত্রের বিলুপ্তি সত্ত্বেও চার্লসকে ১৬৫১ সালের ১ জানুয়ারি ‘রাজা দ্বিতীয় চার্লস’ হিসেবে স্কটল্যান্ডের রাজার মুকুট পরিয়ে দেয়া হয়েছিল। এরপর দক্ষিণ দিক থেকে ক্রমওয়েলের ইংরেজ বাহিনী আক্রমণ করতে পারে এমনটা ভেবে চার্লস ও তার সমর্থকরা ইংল্যান্ডে আক্রমণ শুরু করেন। ফলে শুরু হয় যুদ্ধ। এ যুদ্ধ শেষ হয়েছিল ইংল্যান্ডে ওরচেস্টারের যুদ্ধের মাধ্যমে।

কথিত রয়েছে, এ সময় চার্লস একটি ওক গাছের আড়ালে লুকিয়ে থেকে নিজেকে বাঁচিয়েছিলেন। পরে তিনি ফ্রান্সে পালিয়ে গিয়েছিলেন। এদিকে ক্রমওয়েল মারা যান ১৬৫৮ সালে। তারপর ইংল্যান্ডে শুরু হয় সামরিক ও বেসামরিকদের মধ্যে অস্থিরতা, সংঘর্ষ ও সংঘাত। এর জের ধরে ১৬৬০ সালে চার্লসকে রাজা হিসেবে ইংল্যান্ডে ফিরে আসতে বলা হয়। এরপর অল্প সময়ের মধ্যেই রাজা দ্বিতীয় চার্লস প্রভাবশালী রাজায় পরিণত হন। তার সম্পর্কে ইতিহাসবিদ আন্তোনিয়া ফ্রেজার লিখেছেন, তিনি ছিলেন রসিক, দয়ালু, কৃতজ্ঞ, উদার, সহনশীল ও প্রেমময় হৃদয়ের অধিকারী। রাজা দ্বিতীয় চার্লসের শাসনামলে ভারত, ইস্ট ইন্ডিজ এবং আমেরিকায় ব্রিটিশ উপনিবেশ ও বাণিজ্যের উত্থান ঘটেছিল। তিনি দুটি গভীর সংকট মোকাবিলা করেছিলেন-১৬৬৫ সালের প্লেগ মহামারি এবং ১৬৬৬ সালের লন্ডন গ্রেট ফায়ার। ১৬৫৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি অসুস্থ হয়ে পড়েন রাজা দ্বিতীয় চার্লস। এর চার দিন পর মাত্র ৫৪ বছর বয়সে মারা যান তিনি। এরপর ১৪ ফেব্রুয়ারি তাকে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে সমাহিত করা হয়। যাহোক, ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর নতুন রাজা তৃতীয় চার্লস জাতির উদ্দেশে তার প্রথম ভাষণ দিয়েছেন। তিনি বলেন, পুরো রাজপরিবারের পক্ষ থেকে গভীর শোকের অনুভূতি নিয়ে তিনি কথা বলছেন এবং তার মা যে অঙ্গীকার তার রাজত্বের সূচনায় করেছিলেন, সেই একই অঙ্গীকার তিনি নবায়ন করতে চান। রাজা চার্লস বলেন, তিনি সম্মান, মর্যাদা এবং ভালোবাসার সঙ্গে ব্রিটেন ও কমনওয়েলথের জনগণের সেবা করার অঙ্গীকার করছেন। তার এ ভাষণ সরাসরি টিভিতে সম্প্রচারিত হয় এবং লন্ডনের সেন্ট পল’স ক্যাথেড্রালে প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জন্য প্রার্থনা এবং স্মৃতিতর্পণের অনুষ্ঠানেরও অংশ ছিল এ ভাষণ। এ গির্জার দুই হাজার আসন সাধারণ জনগণের জন্য উন্মুক্ত ছিল। ৭০ বছর সিংহাসনে থাকার পর রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ বৃহস্পতিবার স্কটল্যান্ডের ব্যালমোরাল দুর্গে মারা যান। তার পুত্র রাজা তৃতীয় চার্লসের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার মধ্য দিয়ে এখন ব্রিটিশ ইতিহাসের এক নতুন যুগের সূচনা হচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত